আকাশ ছুঁতে চাই ১০৫
2022-12-22 10:07:14

১. মায়ের মমতায় শিশুর মুখে কথা ফোটাচ্ছেন লি হোংচিয়া

২. নতুন জীবন পেলেন প্রবীণ নারী সু

৩. গান: শিল্পী সুন ইয়ানজি

৪. নৃত্যশিল্পে প্রতিভা

৫. চীনে নতুন ক্যারিয়ার গড়লেন জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার নারী

৬.  ঐতিহ্যবাহী কাজাখ সাবানের উত্তরাধিকারী

৭. ওরা পাহাড়ি গোলাপ

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

মায়ের মমতায় শিশুর মুখে কথা ফোটাচ্ছেন লি হোংচিয়া

                                             


আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আজ আপনাদের বলবো এমন এক নারীর কথা যিনি মায়ের মমতায় শিশুদের মুখে কথা ফোটানোর দায়িত্ব নিয়ে ১৩ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। তার নাম লি হোংচিয়া। চলুন শোনা যাক এই নিবেদিত প্রাণ নারীর গল্প।

তরুণী লি হোংচিয়া। গেল ১৩ বছর ধরে তিনি মায়ের মমতায় কথা বলা শেখাচ্ছেন মূক-বধির শিশুদের। হুপ্যেই প্রদেশের উহান সিটিতে তিনি কাজ করছেন লিটল সানফ্লাওয়ার রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে। পাঁচশ বেশি মূক-বধির শিশুকে কথা বলতে শিখিয়েছেন তিনি। তাদের ফিরিয়ে এনেছেন জীবনের মূলধারায়। তার কাছ থেকে কথা বলা শিখে অধিকাংশ শিশু সাধারণ স্কুলে যেতে পেরেছে।

শিশুদের মুখে প্রথম মা ডাক শুনতে খুব ভালোবাসেন লি। এমনকি অনেক শিশু প্রথমে তাকেই মা বলে ডেকে ওঠে। সেসময় নিজেকে ওই শিশুর মা হিসেবেই মনে করেন তিনি।

তিনি নিজের পদ্ধতিতে স্পিচ থেরাপি দিয়ে থাকেন। কানে শোনেনা যেসব শিশু তারা কথা বলতে পারে না। যদিও তাদের স্বরযন্ত্র ঠিক থাকে।

এই শিশুদের কথা বলানোর জন্য তিনি তাদের সামনে একটি কাগজ মেলে ধরেন। শিশুদের বলেন কণ্ঠের ভিতর থেকে বাতাস বের করতে। অনেক চেষ্টার পর শিশুরা এটা করতে পারে। শেষ পযন্ত কাগজটি যখন বাতাসে কেঁপে ওঠে তখনই তিনি বোঝেন প্রথম এবং সবচেয়ে কঠিন ধাপটি পার হয়েছে।

 

হুপে্যই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে লি প্রথমে ভলেনটিয়ার হিসেবে যোগ দেন এই প্রতিষ্ঠানে। প্রথম প্রথম তিনি ভাবতেন কিভাবে এই শিশুদের কথা বলা শিখানো হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু একটি ঘটনায় তার মনোবল দৃঢ় হয়।

লি বলেনএকদিন আমি দেখলাম একটি শিশু খুব যন্ত্রণাদায়ক অসুখে ভুগছে। তবু সে কোনভাবেই চোখের জল ফেলছে না। তার মনের দৃঢ়তা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

তিনি শিশুদের সাহায্য করার ব্রত গ্রহণ করেন।

তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে এই সেন্টারে যোগ দেন। যদিও তার বাবা মা চেয়েছিলেন তাদের মেয়ে স্থপতির পেশায় যাক।

শিশুদের যেহেতু সবসময় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় তাই তাকে দিনে ১১ ঘন্টার বেশি পরিশ্রমও করতে হয়।

তিনি ইন্টারনেটে নিজস্ব ভিডিও দিয়ে থাকেন যাতে শিশুদের অভিভাবকরা স্পিচ থেরাপি নিজেরাও চর্চা করতে পারেন এবং শিশুদের সাহায্য করতে পারেন। তার একক মিডিয়া একাউন্টে লাখ ৬০ হাজারের বেশি ফলোয়ার আছে। তারা তাদের সাফল্যের গল্পও এখানে শেয়ার করেছে।

৩১ বছর বয়সী লি হোংচিয়া এখন পর্যন্ত  ৫শ বেশি শিশুকে কথা বলা শিক্ষা দিয়ে আলোকিত জীবনের পথ দেখিয়েছেন।

 

নতুন জীবন পেলেন প্রবীণ নারী সু

চীন সরকার প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবায় অনেক যত্নশীল। প্রবীণ নাগরিকরা এখানে অনেক রকম সেবা ও সুবিধা উপভোগ করেন। এমনি একজন প্রবীণ নারী সম্প্রতি ফিরে পেয়েছেন দৃষ্টিশক্তি।

চিয়াংসু প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের এক প্রবীণ নারী সু। ৬৭ বছর বয়সী এই নারী ছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তার চোখে দরকার ছিল কর্ণিয়া। সুচৌ শহরের হাসপাতালে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের খরচ অনেক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন পাবলিক ফান্ডোর জন্য আবেদন করে। মিলেও যায় অর্থ। সরকারি খরচেই কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট হবে। কিন্তু কর্ণিয়া পাওয়া যাবে কোথায়।

এই সময় এগিয়ে আসেন প্রবীণ চিকিৎসক ছু চিকাং। তারও সত্তরের কাছাকাছি বয়স। তিনি ২০১৪ সাল থেকে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত। সিদ্ধান্ত নেনন তার সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করে দেওয়ার।

এ বিষয়ে তার স্ত্রী তাকে সমর্থন দেন। সম্প্রতি এই চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করেন যেন তিনঘন্টার মধ্যে কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুর চোখে দ্রুত অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন।

এরপরেই প্রবীণ চিকিৎসক ছু চিকাংয়ের কর্নিয়া দিয়ে নতুনভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পান প্রবীণ নারী সু।

তিনি মনে করেন চীন সরকারের যে এল্ডারলি কেয়ার বা প্রবীণদের প্রতি যত্ন ও সেবার নীতি রয়েছে তার সুফল হিসেবেই নতুন জীবন ফিরে পেলেন তিনি।

গান : শিল্পী সুন ইয়ানজি

চীনা ভাষার একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সুন ইয়ানজি। মূলত পপ সংগীত তারকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। তিনি একজন জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, অভিনয়শিল্পী, সংগীত আয়োজক এবং উদ্যোক্তা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি।  চীনা বংশোদ্ভুত সিংগাপুরের এই কণ্ঠশিল্পী চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

এখন শুনবো সুন ইয়ানজির কণ্ঠে একটি গান।


 নৃত্যশিল্পে প্রতিভা

নৃত্যশিল্পে দারুণ সফলতা দেখিয়েছে চীনা মেয়েরা। বিশেষ করে লাতিন ঘরোনার নাচে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এমনই একজন নৃত্য শিল্পী চাং স্যিয়াও স্যিয়াও। নৃত্যকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে চান এই নারী।


 

সূর্যের আলোকরশ্মিও যেন নৃত্যে মেতেছে। ঝলমলে দিনের শুরুটা হয় নাচের রিহার্সেলের মধ্য দিয়ে। বুদ্ধিদীপ্ত এই নৃত্য শিল্পীর নাম চাং স্যিয়াও স্যিয়াও। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণী হলেন হ্যেনান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য শিক্ষক।

চাংয়ের মতে, নাচের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাস। আর শরীর ফিট রাখতেও ভীষণ কার্যকর এই প্রশিক্ষণ।

ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি প্রবল আগ্রহী ছিলেন চাং। এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর লাতিন নৃত্যে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তিনি। এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অর্জন করেছেন বেশ কয়েকটি সম্মানজনক পুরস্কার।

 

একসঙ্গে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন এমন অনেক সহপাঠীরা মাঝপথে এসে নাচ ছেড়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে চাং ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী মানুষ। নাচের নানান ভঙ্গিমা রপ্ত করেন তিনি।

তার কাছে নাচ শিখতে এখন অনেকেই আগ্রহী। প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সব মিলিয়ে নাচ শিখতে আসা মানুষদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।  কারণ শিক্ষার্থীদের নানা রকম অর্জন আর স্বীকৃতির মধ্যেই নিজের সফলতা খুঁজে পান এই নৃত্যশিল্পী। বলেন,আমার অভিজ্ঞতায় পর্যন্ত যা শিখেছি, তার সবটাই শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করছি। আমি আশাবাদী, আমার শিক্ষার্থীরা আরও বড় মঞ্চে যেতে পারবে আর সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করবে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করবে তার এই উদ্যোগ, এমনটাই প্রত্যাশা চাংয়ের।

 

চীনে নতুন ক্যারিয়ার গড়লেন জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার নারী

চীনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়েছেন অনেক বিদেশি মানুষ। তারা তাদের সেকেন্ড হোম করে নিয়েছেন চায়নাকে। এমনি একজন নারী হলেন জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার বারবারা ফ্রেইমান।

জার্মানির একজন ফ্যাশন ডিজাইনার বারবারা ফ্রেইমান। তিনি গেল পাঁচ বছর ধরে চীনের শানইয়াং শহরে। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চীনের ঐতিহ্যবাহী ফেব্রিক নকশা এবং কাটিং এর কৌশল তাকে মুগ্ধ করে। তিনি চীনেই নতুন ব্র্যান্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। জার্মানিতে তার নিজস্ব হোমটাউনের স্টাইল এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী স্টাইলের সমন্বয়ে বারবারা নতুন ডিজাইন স্টাইল তৈরি করেন।

 

চীনা ফেব্রিক ঐতিহ্যবাহী কিছু নকশা ব্যবহার করে ইউরোপীয় ধাঁচের পোশাক তৈরি শুরু করেন। চীনা ক্রেতারা দারুণ পছন্দ করেন তার ডিজাইন।

২০১৭ সালে শিশুদের পোশাক তৈরির নিজস্ব ব্র্যান্ড চালু করেন।

তার কোম্পানি চীনের (লিয়াওনিং) পাইলট মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের শেনিয়াং এলাকায় বসতি স্থাপনকারী উদ্যোগের প্রথম ব্যাচের মধ্যে ছিল। এখানে তাদের অনুকূল নীতিতে সহজ প্রবেশাধিকার রয়েছে। যেমন সহজ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এবং সুবিধাজনক কর পরিষেবা।

তিনি কমার্সের মাধ্যমে তার ব্যবসা চালান। অনলাইনে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ভালো আয় করতে পারেন তিনি।

বারবারা বলেন, ‘ কমার্সকে ধন্যবাদ। ফোনের মাধ্যমে প্রায় সবকিছুই বেচাকেনা করা যায়।

চীনের ঐতিহ্যবাহী ফেব্রিক নকশা এবং ইউরোপীয় ধাঁচের সমন্বয় ঘটিয়ে বারবারা নিজের সৃজনশীলতায় তার ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার নারী এখানে নতুন ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন এবং চীনকে তার দ্বিতীয় মাতৃভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

 

ঐতিহ্যবাহী কাজাখ সাবানের উত্তরাধিকারী

চীনের বিভিন্ন জাতির রয়েছে বিচিত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন অনেক দক্ষ ব্যক্তি। তাদের বলা হয় ঐতিহ্যবাহী কৌশল বা সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। এমন একজন উত্তরাধিকারী হলেন গুলিশুনহান ইলেবে নামে এক নারী।

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের বাসিন্দা গুলিশুনহান ইলেবে। তিনি কাজাখ জাতির একজন নারী। কাজাখদের ঐতিহ্যবাহী কালো-সাবান তৈরির কৌশলের উত্তরাধিকারী তিনি। বুরছিখ কাউন্টির ওয়েইমাখ টাউনশিপের বাসিন্দা তিনি।

কাজাখজাতির ঐতিহ্যবাহী কালো-সাবান তৈরির কৌশলের উত্তরাধিকারী হিসেবে গত বিশ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। সাকসাউল গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করতে হয় এই সাবান। সাকসাউল গাছ, ক্যাথে পপলার গাছ এবং আর কয়েকটি গাছের ডালপালা একত্র করে সেটি আগুনে পুড়িয়ে ছাই তৈরি করেন। এরপর এরসঙ্গে আরও কিছু উপাদান এবং ভেষজ তেল মিশিয়ে তৈরি করেন সাবান।

বর্তমানে তিনি তার পুত্রবধূ জাকিনগুলকে সাবান তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তুলছেন। এইভাবে কাজাখ জাতির ঐতিহ্যবাহী সাবান তৈরির দক্ষতা তিনি পৌঁছে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের কাছে।

 

ওরা পাহাড়ি গোলাপ

চীনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও নারীদের খেলাধুলার চর্চা রয়েছে। স্কুল পর্যায়ে ছেলে  শিশুদের মতো মেয়ে শিশুরাও নানা রকম স্পোর্টসে অংশ নেন। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোর শিশুরা যেমন কষ্ট সহিষ্ণু তেমনি পরিশ্রমী। এমনি একটি পাহাড়ি গ্রামের মেয়েশিশুদের ফুটবল টিম গঠনের কথা শুনবো এখন।

কুইচোও প্রদেশের ডিফাং কাউন্টির ছোট্ট একটি পাহাড়ি গ্রাম। এখানকার ইউয়ান হাউ প্রাইমারি স্কুলের মেয়ে শিশুদের ফুটবল টিম পুরো প্রদেশেই বেশ নাম করেছে। এই ফুটবল টিমে আছে ৬০ জনের বেশি মেয়ে।

কিভাবে শুরু হলো তাদের জয়যাত্রা। সে এক ইতিহাস। এই ইতিহাস প্রেরণা যোগাচ্ছে প্রদেশের অন্য পাহাড়ি গ্রামের শিশুদেরও।

২০১৭ সালে শুরু হয় এই ফুটবল টিমের যাত্রা।এর পিছনে মূল ভূমিকায় আছেন এই প্রাইমারি স্কুলের স্বেচ্ছাসেবী ক্রীড়া শিক্ষক সু চাও ওয়েই। তিনিই কোচ।

বেয়াল্লিশ বছর বয়সী উদ্যমী ক্রীড়াশিক্ষক সু চাও ওয়েই স্থির করেন এই প্রাইমারি স্কুলের মেয়েদের নিয়ে ফুটবল টিম গঠন করবেন। তিনি কয়েকজনকে বাছাই করেন। তারপর শুরু হয় তাদের প্রশিক্ষণ।

সু তার টিমকে সপ্তাহে পাঁচবার প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও চলে ইনটেনসিভ ট্রেনিং। সাধারণত প্রতিদিন তিনটি পিরিয়ড নিয়ে ব্যায়াম অনুশীলন ক্লাস চলে। মেয়েদের অ্যাথলেটিক পারফরমেন্সকে উন্নত করার জন্য শুরু হয় বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ।

সু লক্ষ্য করেন যে, তার ছাত্রীরা শহরের মেয়েদের মতোই ভালোভাবে অনুশীলন করছে। যতই তারা প্র্যাকটিস করছে ততোই তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। কয়েকবছর কঠোর প্রশিক্ষণের পর  তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শুরু করে।

সু দেখেন যে এই মেয়েদের ভিতরে রয়েছে জয়ের অদম্য ইচ্ছা এবং দৃঢ় মনোবল। সেইসঙ্গে তাদের শারিরীক সক্ষমতাও অনেক ভালো। তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয় পাওয়া শুরু করে।

প্রাইমারিতে এই ধরনের ক্রীড়াভিত্তিক সাফল্য তাদের উচ্চতর শিক্ষার জন্যও অনেক সুযোগ এনে দেয়।

২০১৮ সালে এই ফুটবল টিমের ১২জন মেয়ে জেলার নামকরা মিডল স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় বিশেষ স্পোর্টস স্টুডেন্ট হিসেবে। দুই বছর পরে আটজন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় চায়না ফুটবল একাডেমির দক্ষিণ পশ্চিম শাখায়। চায়না ফুটবল একাডেমি বেইজিং ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। অন্য নয়জন মেয়ে তাদের অনন্য ক্রীড়া শৈলীর জন্য ছোংছিংয়ে পড়ার সুযোগ পায়। 

সু মনে করেন পাহাড়ি এলাকার শিশুরা শারিরীকভাবে অনেক শক্ত, কঠোর পরিশ্রমীআত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। ঠিক পাহাড়ি গোলাপের মতোই তারা সুন্দর, সুবাসিত তবে কষ্ট সহিষ্ণু।

এই প্রাইমারি স্কুলের গার্লস ফুটবল টিম এগিয়ে চলেছে দৃঢ়তার সঙ্গে। প্রাদেশিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয় পেয়ে তারা উজ্জ্বল করছে স্কুলের গ্রামের পরিচয়।

সুপ্রিয় শ্রোতা , আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল