চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন ও ‘ছয়টি সমন্বয়ব্যবস্থা’
2022-12-20 13:01:05

ডিসেম্বর ২০: ২০২৩ সাল হবে সার্বিকভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের প্রথম বছর ও মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নতুন পর্যায়ে উঠে যাওয়ার প্রথম বছর। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এর গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। আগামী বছর চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সম্প্রতি আয়োজিত বার্ষিক কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে ঐতিহ্যগত সঠিক ধারণা মেনে চলা ও নব্যতাপ্রবর্তন করা এবং ছয়টি সমন্বয়ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত, আরও ভালোভাবে মহামারী প্রতিরোধ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। মহামারী প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। চীন কার্যকরভাবে মহামারীর কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা করেছে। গত তিন বছরে চীনা জিডিপি-র বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল প্রায় ৪.৫ শতাংশ। এটি বিশ্বের গড় হারের চেয়ে বেশি। চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও উন্নয়নের সাফল্য সবার কাছে স্পষ্ট।

দ্বিতীয়ত, অর্থনীতির গুণগত মান ও প্রবৃদ্ধির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। অর্থনীতির উন্নয়ন হলো পরিমাণগত পরিবর্তন ও গুণগত পরিবর্তনের সমন্বয়। অর্থনীতির উচ্চমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে পরিমাণগত বৃদ্ধি বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনা অর্থনীতির যুক্তিসঙ্গত প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হবে।

তৃতীয়ত, কাঠামোমূলক সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন বৃদ্ধির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। কাঠামোমূলক সংস্কার হল উচ্চমানের উন্নয়ন বাস্তবায়নের একটি কারণ এবং অর্থনৈতিক কাজের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলমান মূল লাইন। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে।

চতুর্থত, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হলো একটি পারস্পরিক সংযুক্ত জটিল ব্যবস্থা। এতে সামাজিক নির্মাণ, জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সাংস্কৃতিক নির্মাণকাজ অন্তর্ভূক্ত আছে। চীন উচ্চমানের উন্নয়নের ভিত্তিতে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা মেনে চলবে, এবং বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নীতি প্রণয়ন অব্যাহত রাখবে।  

পঞ্চমত, অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ধারা মধ্যে  সমন্বয় করতে হবে। অব্যাহতভাবে অভ্যন্তরীণ ধারাকে প্রধান অঙ্গ হিসেবে ধরে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রচণতার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে এবং একটি নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

ষষ্ঠত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন-প্রক্রিয়া একটি স্থায়ী ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। আমাদের বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা সঠিকভাবে উপলব্ধি করে, স্বল্পমেয়াদী প্রতিক্রিয়া এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের সামগ্রিক দিক বিবেচনা করতে হবে।

বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, চীনা অর্থনীতি এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ভিত্তি দৃঢ় নয় এবং অর্থনীতির ওপর নানামুখী চাপও এখনো বেশি। সম্মেলনে বলা হয়, চীনের অর্থনীতির শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা, দুর্দান্ত সম্ভাবনা ও প্রাণশক্তি রয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থায় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আগামী বছর চীনা অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা যায়।

এবারের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে ভালোভাবে মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার-প্রক্রিয়ার গতি দ্রুততর হবে। বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে চীনের এই অর্জন হবে গুরুত্বপূর্ণ। (ছাই/আলিম)