গত বৃহস্পতিবার রাতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিডিও’র মাধ্যমে ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের’ (কপ১৫) ১৫তম সদস্য সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে "সম্মিলিতভাবে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থান প্রচার, যৌথভাবে পৃথিবীতে জীবনের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং যৌথভাবে একটি পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার" আহ্বান জানান। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রেসিডেন্ট সি। এটি বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য প্রচারের জন্য কপ১৫-এর সভাপতি দেশ হিসেবে চীনের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। জাতিসংঘ ‘জীববৈচিত্র্যকনভেনশন’-এর সচিবালয়ের নির্বাহী সেক্রেটারি এলিজাবেথ মুরেমা বলেন, "২০২০-পরবর্তী বিশ্বের জীববৈচিত্র্য কাঠামো" নিয়ে চলমান আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণেশক্তিশালী নির্দেশিকা আছে। তিনি এই সম্মেলন প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কপ-১৫ হল পরিবেশগত সভ্যতার থিমে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত প্রথম বিশ্ব সম্মেলন। গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনের খুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় কপ-১৫ -এর প্রথম পর্ব।
কপ-১৫-এর থিম হল ‘পরিবেশগত সভ্যতা: পৃথিবীতে জীবনের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা’। টানা দু’বছর ধরে এটি ছিল কপ-১৫-এ প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণের মূল শব্দ। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য, প্রেসিডেন্ট সি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য গড়ে তোলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বৈশ্বিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সবুজ উন্নয়নের প্রচার এবং একটি ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের আদেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এই চার দফার প্রস্তাবের লক্ষ্য ও পদ্ধতি- উভয়ই বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য শাসনের দিক নির্দেশ করে।
পৃথিবীতে জীবনের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য চীন দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। গত দশ বছরে, চীন বিশ্বের বনজ সম্পদের সর্বাধিক বৃদ্ধি ও বৃহত্তম কৃত্রিম বনাঞ্চলের দেশ হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক "আন্তর্জাতিক জলাভূমি শহরের" দেশ হয়ে উঠেছে। এখন বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থা নির্মিত হচ্ছে…"সবচেয়ে বেশি" এই সিরিজটি পরিবেশগত সভ্যতা নির্মাণ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য চীনের প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশ জাতীয় কংগ্রেস কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চীনা-শৈলী আধুনিকায়ন এগিয়ে নেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে, "মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থান" চীনা-শৈলী আধুনিকায়নের পাঁচটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের একটি।
প্রেসিডেন্ট সি তার ভাষণে বলেন, ভবিষ্যতে চীন পরিবেশগত সভ্যতার নির্মাণকাজ জোরদার করবে, বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জাতিসংঘের দশ বছরের কর্ম পরিকল্পনায় সাড়া দেবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য বিপুল সংখ্যক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ফোরামের আয়োজন, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সমর্থন ও সহায়তাদেবে। এই কর্মগুলি শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব আধুনিকীকরণের উপরই গুরুত্ব দেয় না, বরং অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিকাশে সহায়তা করার দিকেও মনোযোগ দেয়। আফ্রিকান কার্বন এক্সচেঞ্জের পরিচালক ওয়েসলি ডগলাস বলেন, চীন মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটিগঠন প্রচারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য পরিচালনায় গভীরভাবে জড়িত।
জিনিয়া/তৌহিদ