ডিসেম্বর ১৯: সম্প্রতি চীনের বার্ষিক কেন্দ্রীয় অর্থনীতি কর্মসম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে চলতি বছরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পর্যোলচনা করা হয়। সম্মেলনে বলা হয়, আগামী বছর অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে; স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি অর্থনীতি উন্নতও করতে হবে; অর্থনীতিতে গুণগত মানসম্পন্ন কার্যকর উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে; সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণের জন্য একটি ভাল শুরু করতে হবে। বস্তুত, এটি বিশ্বের অর্থনীতির জন্য সুখবর।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছর হবে সার্বিকভাবে চীনকে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার চাবিকাঠি সময়। চীন অব্যাহতভাবে নতুন উন্নয়ন দিয়ে বিশ্বের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে থাকবে।
চলতি বছরের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য যে বার্তাটি প্রেরণ করা হয়েছে, তা হলো: চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন-প্রক্রিয়া সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী গবেষণায় বলা হয়েছে, একাধিক কারণে ২০২২ সালে বিশ্বের অর্থনীতি বৃদ্ধির গতি স্পষ্টভাবে ধীর ছিল। ২০২৩ সালেও বিশ্বের অর্থনীতি দুর্বল থাকবে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা গত জুন মাসের ৩ শতাংশ থেকে ১.৯ শতাংশে কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, চীনা অর্থনীতি এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ভিত্তি দৃঢ় না এবং অর্থনীতির ওপর নানামুখী চাপও এখনো বড়। সম্মেলনে বলা হয়, চীনের অর্থনীতির শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা, দুর্দান্ত সম্ভাবনা ও প্রাণশক্তি রয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থায় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আগামী বছর চীনা অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা যায়।
এবারের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে ভালোভাবে মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার-প্রক্রিয়ার গতি দ্রুততর হবে। বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে চীনের এই অর্জন হবে গুরুত্বপূর্ণ।
কয়েক দিন আগে চীন ‘দেশীয় চাহিদা সম্প্রসারণের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনার রূপরেখা (২০২২-২০৩৫ সাল)’ প্রকাশ করে। চীনা জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি; মাথাপিছু জিডিপি ১২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চীনের জিডিপিতে চূড়ান্ত ভোগব্যয়ের অনুপাত টানা ১১ বছর ধরে ৫০ শতাংশের উপরে রয়েছে। চীন হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুপ্তশক্তিসম্পন্ন ভোগের বাজার। চীন তার বাজারে আরও বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
সম্মেলনে পুনরায় আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশকে সর্বাত্মকভাবে গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ হিসেবে উচ্চমানের উন্নয়ন গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়। এ ছাড়াও অব্যাহতভাবে উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ বজায় রাখতে হবে। স্থিতিশীলভাবে নিয়ম, ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা ও মানদন্ডের প্রতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণ বাড়াতে হবে, যাতে আরো বেশি বিদেশী বিনিয়োগ সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।
চীন বিশ্বকে ছাড়া উন্নয়ন করতে পারে না, বিশ্বেরও চীনকে প্রয়োজন। চলতি বছরের শেষ দিকে এবারের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন ছিল বিশ্বের কাছে চীনা অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা, বাজারের সম্ভাবনা, উদ্ভাবনের প্রাণশক্তি ও উন্মুক্তকরণের সাহসের প্রদর্শনীস্বরূপ। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে গেলে বিশ্বের জন্য আরো বেশি অভিন্ন কল্যাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। (ছাই/আলিম)