নতুন যুগে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক: সমতার অংশীদারিত্বে উন্নয়ন
2022-12-18 19:28:01

চীনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে ব্যাপক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এ মহাদেশটির অনেক দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে।

চীনের সঙ্গে সহযোগিতা আফ্রিকায় ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে,  বেড়েছে কর্মসংস্থান। এর ফলে সার্বিকভাবে একটি টেকসই উন্নয়নের পথে রয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো।

২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, চীন আফ্রিকান দেশগুলিকে ১৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি রেলপথ, প্রায় এক লাখ কিলোমিটার মহাসড়ক, প্রায় এক হাজারটি সেতু, প্রায় ১০০টি বন্দর এবং ৮০টিরও বেশি বড় মাপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করেছে।

একই সময়ে চীন ১৩০টিরও বেশি চিকিৎসা কেন্দ্র, ৪৫টি স্টেডিয়াম এবং ১৭০টিরও বেশি স্কুল নির্মাণে সহায়তা করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং আফ্রিকার জন্য ৪৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

যেহেতু অবকাঠামোগত ব্যবধান আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা মহাদেশটির জন্য বিশেষ প্রাসঙ্গিক। আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক মনে করে যে, উন্নত অবকাঠামো আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে, ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানিকারক এবং বিনিয়োগের গন্তব্য- উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে।

 

আর এ সব ক্ষেত্রে চীন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২০ সালে আফ্রিকায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ একাই ৩১ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী তাৎপর্য এবং এর প্রয়োজনীয় উৎপাদনশীল রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার অবকাঠামোতে বিনিয়োগ সারা বিশ্বের জন্যই একটি সুসংবাদ।

কোভিড-১৯ মাহারির সত্ত্বেও চীনা ও স্থানীয় কর্মীরা ১ হাজার ১০০টির বেশি সহযোগিতা প্রকল্প ধারাবাহিকভাবে চালু রেখেছে।  ২০২১ সালের নভেম্বরে সেনেগালে অনুষ্ঠিত চায়না-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের ৮ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে চীন আফ্রিকান দেশগুলির সাথে যৌথভাবে নয়টি কর্মসূচি চালু করার ঘোষণা দেয়। এ সব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি, সবুজ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম।

ওই সময় ডাকার ঘোষণায়, চীন আফ্রিকান দেশগুলোকে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতায় যোগ দিতে স্বাগত জানায় এবং উৎসাহিত করে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা আফ্রিকায় একটি ক্রমবর্ধমান চাকরির বাজার তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

২০২১ সালে চীনের প্রকাশিত ‘নতুন যুগে চীন এবং আফ্রিকা: সমতার অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক একটি শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে, আফ্রিকা থেকে চীনের পরিষেবাতে আমদানি গড়ে বার্ষিক ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রতি বছর মহাদেশটিতে প্রায় ৪ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করছে।  

 

চীনেরে বেসরকারি কোম্পানি আফ্রিকার প্রধান বিনিয়োগ শক্তি হয়ে উঠেছে। তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মচারি স্থানীয় হওয়ায় তারা লাখের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ, চীন আফ্রিকা জুড়ে সাড়ে তিন হাজারের‌ও বেশি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে।

চীনা উদ্যোগগুলো আফ্রিকাকে প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা এবং মান সরবরাহ করেছে, যার ফলে স্থানীয় কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ, চাকরি এবং উচ্চ আয় অর্জন করেছে।

অ্যাঙ্গোলায় চায়না রেলওয়ে ২০ ব্যুরো গ্রুপ কর্পোরেশন দ্বারা নির্মিত ১ হাজার ৩৪৪কিমি-দীর্ঘ বেঙ্গুয়েলা রেলওয়ে উভয়পক্ষের জন্যই সুফল বয়ে এনেছে। মোম্বাসা-নাইরোবি রেলওয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৪৬ হাজার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

২০২১ সালের শেষ নাগাদ চীন টানা ১৩ বছর ধরে আফ্রিকার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। চীন- টোগো, জিবুতি এবং রুয়াণ্ডাসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৮ শতাংশ করযোগ্য আইটেমের উপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং হয়ে উঠেছে আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি রপ্তানি গন্তব্য।

চীনের সর্বাত্মক সহযোগিতা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে, এ ক্ষেত্রেও কিছু কিছু মহল ‘চীনের ঋণ ফাঁদে’র জুজুর ভয় দেখছে।

চীন বরাবরই ঋণফাঁদের বিষয়টি নাকচ করে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ছিন কাং সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য উপাত্ত দিয়ে এ অভিযোগের জবাব দিয়েছেন।

ছিন কাং যুক্তি দেখিয়ে বলেন, পশ্চিমা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আফ্রিকার ঋণ চীনের তিন গুণ, আর তাদের সুদের হারও দ্বিগুণ।

ছিন কাং বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর ঋণের এক চতুর্থাংশ মাত্র চীনের কাছে। চীন অনেক কম সুদে হাইওয়ে, হাসপাতালের মতো অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দিয়ে থাকে।

কাজেই আফ্রিকায় চীন ঋণ ফাঁদ তৈরি করছে এমন অভিযোগ ধোপে টেকে না। আফ্রিকার সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতেই সহযোগিতা করে যাচ্ছে চীন।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।