দেহঘড়ি পর্ব-১০০
2022-12-16 19:43:33

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং ’মৌসুমী স্বাস্থ্য পরামর্শ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

বন্ধ্যাত্বের টিসিএম দাওয়াই

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএম-এ বলা হয় ‘বন্ধ্যাত্ব’ বলে কিছু নেই। এর কারণ হলো টিসিএম ভারসাম্যের একটি তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কারোর গর্ভধারণের অক্ষমতাকে একটি ভারসাম্যহীনতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গর্ভধারণের জন্য এই ভারসাম্যহীনতা দূর করা প্রয়োজন হয়, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা নয়। সাধারণত টিসিএম চিকিৎসকরা শরীরের মূল ভারসাম্যহীনতার চিকিত্সা করেন এবং এর ফলে শরীরের লক্ষণগুলোর উপশম হয়। এই চিকিৎসাব্যবস্থা অন্য যে কোনও অবস্থার ক্ষেত্রে যতটা প্রযোজ্য, ততটা প্রযোজ্য প্রজনন ক্ষেত্রেও। একজন নারীর স্বাভাবিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা হলো তার মাসিক শুরু হওয়ার সময় থেকে রজঃনিবৃত্তি শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত ‘সম্ভাব্য গর্ভধারণ’ অবস্থায় থাকা। টিসিএম তত্ত্ব মতে, এই অবস্থার কোনও বিচ্যুতি কোনও না কোনও ভারসাম্যহীনতা; ‘বন্ধ্যাত্ব’ নয়। এর সহজ অর্থ হলো কোনও ব্যক্তিরি সর্বোত্তম প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে বিচ্যুতি। টিসিএম দর্শনে মনে করা হয়, একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা এবং সুস্থ শিশু পেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুর মা ও বাবার শরীর যথাসম্ভব সুস্থ রাখা। টিসিএম টিকিৎসকরা একটি স্বতন্ত্র  চিকিত্সা পদ্ধতির বিস্তৃত প্রর্ণালী ব্যবহার করেন, যা মূলত একটি আলাদা ডায়গনস্টিক ব্যবস্থা, ভেষজ সূত্র, আকুপাংচার পয়েন্টের উদ্দীপনা, শারীরিক কাজ, খাদ্যতালিকা, জীবনযাত্রা ইত্যাদির সমন্বয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাকে শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ করার মাধ্যমে প্রজননক্ষমতা বাড়ায় এবং এ প্রজননক্ষমতার জন্য অপরিহার্য হরমোন উৎপাদন করে। উপরন্তু, প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করা এবং সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করার মাধ্যমে চীনা ভেষজ এবং আকুপাংচার মন ও শরীরে গভীর শিথিলতা পুনরুদ্ধার করে প্রজনন প্রক্রিয়াকে চাঙ্গা করে।

প্রত্যেক রোগীর স্বতন্ত্র চিকিত্সা

কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে অন্য কারোর ভারসাম্যহীনতার মিল থাকে না সবসময়। সেকারণে প্রত্যেকের চিকিৎসার পদ্ধতি হয় আলাদা। টিসিএম টিকিৎসকরা স্বতন্ত্র টিসিএম ডায়াগনসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথমে রোগীর শরীরের ভারসাম্যহীনতা নির্ণয় করেন। এ ডায়াগনসিস পদ্ধতিতে অন্তর্ভূক্ত থাকে জিহ্বা পর্যবেক্ষণ করে নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা, নাড়ি পরীক্ষা করা এবং রোগীর সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য-ইতিহাস ও অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জানা। এসবের মাধ্যমে ভারসাম্যহীনতা নির্ণয় করা হয়ে গেলে, রোগীর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আকুপাংচার ও চাইনিজ ভেষজ চিকিত্সা শুরু করা হয়। যদি খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভ্যাস ও জীবনধারা রোগীর ভারসাম্যহীনতায় অবদান রেখে থাকে, তবে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেন টিসিএম টিকিৎসকরা।

গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি

আকুপাংচার ও ভেষজ ওষুধের চিকিত্সা রোগীর শরীরকে তার সর্বোত্তম ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। চিকিৎসা শুরু করার পর একজন রোগী দ্রুত কতগুলো সাধারণ পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। এগুলো হলো ডিম্বস্ফোটনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আসা, মাসিকের অনিয়ম দূর হওয়া এবং সুস্বাস্থ্যের অনুভূতি ফিরে আসা। আরও সূক্ষ্ম পরিবর্তনের মধ্যে থাকতে পারে সেই সব হরমোনের স্বাভাবিকীকরণ, যা ডিম্বস্ফোটন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে, টিসিএম একজন মানুষের শরীরকে একটি স্বাস্থ্যকর ও আরও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যেতে কাজ করে, যা গর্ভধারণে সাহায্য করে।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব

টিসিএম পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর। একজন পুরুষের কম শুক্রাণু সংখ্যা, কম গতিশীলতা বা যৌন অক্ষমতা সবই শরীরের ভারসাম্যহীনতার সাথে যুক্ত হতে পারে এবং এসব ক্ষেত্রে টিসিএম দুর্দান্ত সাফল্য এনে দিতে পারে।

আইভিএফ ও অন্যান্য সহায়ক প্রজনন থেরাপি

আজকাল অনেক দম্পতি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন-আইভিএফ কিংবা ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ইনজেকশন-আইইউআই এর সহায়তায় প্রজনন থেরাপি নিয়ে থাকেন। বর্তমানে টিসিএম’র একটি ভীষণ কার্যকর ব্যবহার হলো আইভিএফ’র আগে এবং অব্যবহিত পরে আকুপাংচার নেওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, আইভিএফ চিকিত্সার আগে ও পরে আকুপাংচার নিয়েছেন এমন নারীদের গর্ভধারণের হার যারা ওই সময় আকুপাংচার নেননি তাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। আইভিএফ ও অন্যান্য সহায়ক প্রজনন থেরাপিগুলো খুব ব্যয়বহুল ও মানসিকভাবে কষ্টদায়ক। অন্যদিকে টিসিএম’র খরচ অতি সামান্য এবং সাধারণত এ চিকিৎসা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। টিসিএম চিকিৎসকরা মনে করেন, মানসিক চাপ যদি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়, তাহলে দম্পতিদের উচিৎ আইভিএম চিকিৎসা নেওয়ার আগে কয়েক মাস ধরে টিসিএম ব্যবহার করে দেখা। কেউ যদি ইতোমধ্যেই আইভিএফ চিকিৎসা শুরু করে থাকেন, তাহলে তাদেরও উচিৎ অনতিবিলম্বে টিসিএম থেরাপি নেওয়া।  - রহমান

# আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশে স্ট্রোক রোগের চিকিৎসা অবকাঠামো নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদ্রোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। মৃত্যুর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বা শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্ট্রোককেই বেশি দায়ী করা হয়। বাংলাদেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। দেশে এক বছরে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে মারা গিয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য গ্রহণের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে বাড়ছে মৃত্যুও। দেশের ৬৪টি জেলার ২৫ হাজার ২৮৭ মানুষের ওপর করা ওই জরিপের ফলাফলে বলা হয়, দেশে এখন প্রতি হাজারে ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী আছেন। এমন যখন পরিস্থিতি তখন দেশে এ রোগের চিকিৎসার অবকাঠামো কেমন, তা নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন দেশের একজন বিশিষ্ট নিউরোসার্জন ডাক্তার অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। তিনি কর্মরত ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।