একটি দেশের শীর্ষনেতার ‘ভ্রাম্যমাণ কার্যালয়’ কেমন হয়
2022-12-16 18:52:43

প্রিয় বন্ধুরা, একটি দেশের শীর্ষনেতার কার্যালয় কেমন স্থান? আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো কখনোই তা দেখার সুযোগ পাবো না। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর রাজধানী বেইজিংয়ের স্থায়ী কার্যালয় ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ভ্রাম্যমাণ কার্যালয় আছে। এমন ভ্রাম্যমাণ কার্যালয়ে জনসাধারণ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারে, মনের কথা শেয়ার করতে পারে।

২০২১ সালের ১৩ মে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্য নান প্রদেশের নান ইয়াং শহরে জাহাজ করে তান চিয়াং খৌ জলাধার পরিদর্শন করেন। জাহাজে তিনি এক বোতল পানি জলাধার হাতে ধরে হাসতে বলেন, এখানকার পানির গুণগতমান ভালো। তিনি বলেন, তিনি অনেক আগেই এই জায়গায় আসতে চেয়েছিলেন। দক্ষিণাঞ্চলের পানি উত্তরাঞ্চলে স্থানান্তরকরণ প্রকল্পের নির্মাণ অবস্থা, এখানের জনগণের স্থানান্তরকরণ প্রকল্পের ওপর তিনি সবসময় নজর রাখেন। এবার এখানে এসে দেখেছেন, সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে, তিনি এতে খুব খুশি হয়েছেন। এবার তান চিয়াং খৌ জলাধার পরিদর্শন করা, জনগণের জীবনের খোঁজখবর নেওয়া হল তাঁর এই পরিদর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য। আর জাহাজের ভিতর একটি কাঠের টেবিল হল তাঁর ‘ভ্রাম্যমাণ কার্যালয়’।

এই জলাধার নির্মাণের জন্য আশেপাশের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাই জাহাজ থেকে নেমে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তেমন একটি অভিবাসী গ্রামে যান, জলাধার নির্মাণের সময় স্থানান্তর করা মানুষদের দেখতে যান।

আসলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে সি চিন পিং দেশের ছোট বড় সব জায়গা পরিদর্শন করেছেন। ২০২১ সালের ২২ জুলাই তিনি সিছুয়ান-তিব্বত রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন-লিনচ্রি রেলস্টেশনে যান। ট্রেনে উঠে তিনি জানালা দিয়ে বাইরে দেখেন। ট্রেনটি নদ-নদী, গিরিখাত, টানেল ও সেতু অতিক্রম করে। তিনি বলেছিলেন, সিছুয়ান-তিব্বত রেলপথ নির্মাণ চীনের পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে সিছুয়ান ও তিব্বতের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। ট্রেনে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে রেলপথ নিয়ে গভীর আলোচনা করেছিলেন। ছোট একটি ট্রেনের বগি, তাঁর একটি ভ্রাম্যমাণ কার্যালয়!

তিনি বলেন, চীনের যোগাযোগের ম্যাপ ঠিক যেন আলোকচিত্রের মত। দেশের মধ্য, পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেলপথ নির্মাণ অনেক উন্নত। তবে, পশ্চিমাঞ্চলে আরো কিছু ‘ছবি’ আঁকতে হয়। যাতে, সুন্দর চীনের যোগাযোগের আলোকচিত্র আরো সুন্দর হয়।

১৯৯৮ সালের জুন মাসে তত্কালীন ফুচিয়ান প্রদেশের সিপিসি’র উপ-সম্পাদক সি চিন পিং প্রথমবারের মত তিব্বতে যান। তিব্বতের রাজধানী লাসার বিমানবন্দর থেকে লিনচ্রি শহরের পা-ই থানায় পৌঁছাতে সারাদিন সময় লেগে যায়। তখন সড়কের অবস্থা ছিল অনেক বিপদজনক। মাঝে মাঝে পথে গাছ পড়ে থাকতো, সবাই গাড়ি থেকে নেমে গাছ টেনে পথের পাশে সরিয়ে নিতো।

তবে ২৩ বছর পর লাসা থেকে লিনচ্রিগামী রেলপথে দুই জায়গায় যাতায়াতে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা!

এই দশ বছরে চীনে নতুন তৈরি রেলপথ ও সড়কের দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটার। দেশে নতুন চালু হওয়া নৌপথের দৈর্ঘ্য ১.২ লাখ কিলোমিটার। নতুন তৈরি পরিবহন বিমানবন্দর ৮২টি, দেশে বিমাবন্দরের মোট সংখ্যা ২৫০টি। ডাক পোস্ট স্টেশনের সংখ্যা চার লাখেরও বেশি। সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর সি চিন পিং-কেন্দ্রীক সরকারের নেতৃত্বে চীনের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

গত ১১ এপ্রিল সি চিন পিং হাই নান প্রদেশের উ চি শান শহরের মাও না গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জনগণের খোঁজখবর নেন।

স্থানীয়দের বাসায় গিয়ে তিনি বলেন, আসুন, সবাই একসাথে বসুন, আপনাদের পরিচয় দিন। আনন্দময় আমেজে কেউ বলে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকের পর বড় শহরে না গিয়ে বরং গ্রামে ফিরে স্বপ্ন পূরণ করেছে। কেউ বলে, তিনি গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাকর্মী, তাঁর প্রিয় কাজ হল পাহাড়ে পাখির গান শোনা। কেউ বলে, আগে তার পরিবার দরিদ্র ছিল, তবে সরকারের সাহায্যে চা চাষের মাধ্যমে ধনী জীবনের পথ আর স্বপ্ন নয়। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবার গল্প শুনে খুব আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই গ্রাম অনেক সমৃদ্ধ। দারিদ্র্যবিমোচন এবং গ্রামীণ পুনরুদ্ধারের সংযোগ করতে হয়। আগে মানুষের সম্পদের পাহাড় থাকলেও তারা তা ভোগ করতে পারত না। এখন মানুষ প্রকৃতি থেকে অনেক সম্পদ পায়। পরবর্তীতে গ্রামে প্রাকৃতিক পর্যটন শিল্প উন্নত করা যায়। এখানের ভবিষ্যত্ আরো উজ্জ্বল হতে পারে।