একত্রে ‘চার কন্যা’ জন্মদানকারী এক পরিবারের স্বপ্নের বাস্তবায়ন
2022-12-16 15:17:53



বিভিন্ন সময়কালে চারটি কন্যা সন্তান

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে চিয়াং সু প্রদেশের ছোং ই জেলার শা পাও উপজেলার শাং পাও গ্রামের অধিবাসী উ নিয়ান ইয়ো’র স্ত্রী হাস্পাতালে একত্রে চারটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। সে সময় থেকে এ গ্রামীন পরিবারের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এ বিশেষ পরিবারের পরিবর্তনশীল জীবন চীনের দরিদ্রদের দারিদ্র্যমুক্তি এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের প্রতিফলন।

শাং পাও গ্রামের সোপানযুক্ত ক্ষেত্র

শাং পাও গ্রাম চিয়াং সি প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পবর্তাঞ্চলে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম। চীনের তিনটি সোপানযুক্ত ক্ষেত্রের অন্যতম শাং পাও সোপানযুক্ত ক্ষেত্র এ গ্রামের নামকার্ড। গ্রামটি বিখ্যাত হলেও তাতে যাওয়ার অসুবিধা এবং অ্যাপায়নের ক্ষমতা সীমিত হওয়ার কারণে এখানকার পর্যটন শিল্প উন্নত নয়। গ্রামবাসীরা কৃষি কাজ এবং অন্য স্থানে কাজ করে জীবিকা উপার্জন করেন। উ নিয়ান ইয়ো এখানকার একজন সাধারণ কৃষক।

 

সে সময় এ পরিবারের বার্ষিক আয় ছিল ২৩০০ ইউয়ান। তাই চারটি সন্তান একসঙ্গে জন্ম নেয়ার আনন্দের সঙ্গে তাদের দায়িত্বও বেড়ে যায়। তাদের নিয়ে উ নিয়ান ইয়ো খুব চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী অতীতে কুয়াং তোং প্রদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। তাদের জন্মের পর সেখানে যেতে পারিনি। আমাদের আছে মাত্র কিছু জমি, অন্য কোনো উপার্জন ছিল না। বাচ্চাদের দুধ কিনতে অনেক টাকা ধার করেছিলাম। 

চারটি বাচ্চা সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের সময় তৃতীয়টির ওজন ছিল মাত্র দুই কেজি। বড়টির জন্মগত স্পাইনা বিফিডা থাকার সন্দেহ ছিল এবং অস্ত্রোপচারের জন্য ১ লাখ ইউয়ানের বেশি খরচ হয়েছিল। তাছাড়া, একটি শিশু যত দিন অসুস্থ থাকবে তত দিন বাকি তিনটিও অসুস্থ থাকবে। দুটিকে অন্য পরিবারে লালনের ভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও অবশেষে তাদের হাসি মুখ দেখে সিদ্ধান্তটি বাদ দিলেন উ নিয়ান ইয়ো। 

উ নিয়ান ইয়ো’র পরিবারের অবস্থা জেনে তাঁদেরকে দারিদ্র্যবিমোচন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার। পাশাপাশি, দম্পতির জন্য জনকল্যাণমূলক কর্মসংস্থান প্রদান করে। চারটি মেয়ের জন্য নিম্ন সংরক্ষক নিশ্চয়তার আবেদন করা হয়েছে। দম্পতি ভোর সকালে পরিশ্রম চালিয়ে সবচেয়ে দুর্গত সময় কাঁটিয়ে উঠেছেন।

দারিদ্র্যবিমোচন নীতির সাহায্যে উ নিয়ান ইয়ো বাগানে মাছের পুল এবং মুর্গীর খাঁচা নির্মাণ করেছেন। মাছের পুলের পাশে আঙুর গাছ চাষ করেছেন তিনি। মাছ ও মুর্গি লালন করা এবং আঙ্গুর গাছ চাষ করা স্থানীয় সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন শিল্পের অন্যতম।

  প্রি-স্কুলে কন্যা সন্তানরা

আরও আনন্দের কথা হলো যে চারটি বাচ্ছা সুস্থভাবে বড় হয়েছে। বড় বাচ্ছা উ মেং থিং’র পরীক্ষায় জানা গেছে যে তার স্পাইনা বিফিডা গুরুতর নয়। তার শারীরিক অবস্থা প্রভাবিত হয়নি। স্থানীয় চিকিত্সা নীতির সুবিধায় চারটি শিশুর চিকিত্সা ব্যয়ের ৯০ শতাংশ পরিশোধ হয়।

খননকারী সরঞ্জাম মরামত করছেন উ নিয়ান ইয়ো

২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি এ পরিবার দরিদ্র পরিবারের তালিকা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। উ সিয়ান ইয়ো খননকারী সরঞ্জাম চালাতে শিখেছেন। কৃষি ও বাচ্চা লালন কাজের পাশাপাশি তিনি স্থাপত্য তৈরির কারখানায় কাজ করতে যান। উপজেলা সরকারও মাঝেমধ্যে এ দম্পতিকে বন রক্ষক এবং ক্লিনার হিসেবে নিয়োগ করে। 

গত কয়েক বছরে উপজেলায় ব্যাপকভাবে পর্যটন শিল্প উন্নয়ন করা হয়েছে। পাহাড়ের বাইরে যাওয়ার পথ অনেক সুগম হয়েছে। শাং পাও সোপানযুক্ত ক্ষেত্র দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। উ নিয়ান ইয়ো তার তিন তলা বাড়ি হোমস্টে হিসেবে গড়ে তুলে পর্যটকদের অ্যাপায়ন করতে চান।

 চোখে পানিযুক্ত উ নিয়ান ইয়ো বলেন, মনোযোগ দিয়ে কাজ করে জীবনের মান উন্নত করা এবং সন্তানদেরকে ভালো শিক্ষা দিয়ে বড় করা হলো আমার বৃহত্তম স্বপ্ন।

(রুবি/এনাম)