চীনের শিশু চলচ্চিত্রের হালচাল
2022-12-15 14:58:29

১৯২২ সালে চীনের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘দুষ্টু ছেলে’ মুক্তি পায়,যা চীনা শিশু চলচ্চিত্রের শতাব্দী প্রাচীন বিকাশের সূচনা করেছে। গত একশত বছরে চীনা শিশু চলচ্চিত্রগুলো ছোট থেকে দীর্ঘ, সাদা-কালো  থেকে রঙিন, নির্বাক থেকে সবাক হওয়ার অসাধারণ যাত্রা সম্পন্ন করেছে। এতে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়া রেকর্ড করা হয়েছে।

 

চায়না চিলড্রেন’র অ্যান্ড টিনএজার্স ফিল্ম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে ছোটদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের বার্ষিক আউটপুট দেশীয় চলচ্চিত্রের বার্ষিক আউটপুটের প্রায় ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপুল সংখ্যক শিশুর সংখ্যার সাথে তুলনা করলে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রযোজনা বড় নয় এবং বাজারে এখনও উচ্চমানের শিশু চলচ্চিত্রগুলোর সংখ্যা কম।

 

এ ছাড়া, অনেক শিশুতোষ চলচ্চিত্র শ্যুট হওয়ার পর মুক্তি পাওয়ার সুযোগও পায় না। সেগুলো কেবল একদিনের জন্য প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। তা ছাড়া, বাজারে রিটার্নের কম হারের কারণে, ফিল্ম স্টুডিওগুলো সাধারণত শিশুদের চলচ্চিত্রের শুটিং করতে খুব বেশি আগ্রহী নয়।

 

কীভাবে শিশুদের জন্য শ্রেষ্ঠ মুভি নির্মাণ করা যাবে?

 

সম্প্রতি চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের সিয়ামেন শহরে চীনা শিশু চলচ্চিত্রের সৃষ্টি ও বিকাশের শতবর্ষী ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। তাতে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক এবং গবেষকরা যৌথভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের মধ্যে দেশীয় শিশু চলচ্চিত্রের শৈল্পিক সাফল্য এবং সৃজনশীল অভিজ্ঞতার সন্ধান এবং সংক্ষিপ্তসার করেছেন এবং নতুন যুগে দেশীয় শিশু চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনী বিকাশ এবং পুনরুজ্জীবনের উপায় অন্বেষণ করেছেন।

 

তারা সবাই মনে করেন, শিশু চলচ্চিত্রের সৃষ্টিকারীদের মনে অবশ্যই একটি শিশুর মতো নিষ্পাপ ভাবনা থাকতে হবে।

একজন ব্যক্তির বয়স যতই হোক না কেন, সর্বদা একটি চলচ্চিত্র তার স্মৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকে, শৈশবের স্মৃতি এবং বিশ্বের প্রাথমিক ছাপ বহন করে।

চায়না চিলড্রেন’স অ্যান্ড টিনএজার্স ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি হুয়াং জুনের মতে, শিশু চলচ্চিত্র শিশুদের একটি জানালা দেয়, যার মধ্য দিয়ে তারা পর্দার মাধ্যমে দুর্দান্ত এবং সর্বদা পরিবর্তনশীল জীবন দেখতে পারে। পর্দায় দেখানো সব কিছুই শিশুদের হৃদয়ে প্রবেশ করতে এবং সুস্থ মানুষে পরিণত করতে সাহায্য করতে পারে।

 

তাই হুয়াং চুন মনে করেন,

 

শিশুতোষ চলচ্চিত্রকে অবশ্যই শিশুদের হৃদয়ে সত্য, মঙ্গল ও সৌন্দর্যের বীজ বপন করতে হবে, যাতে তারা শিকড় ধরতে পারে, ফুল ফুটাতে পারে এবং ফল ধরাতে পারে। এটি শিশুদের চলচ্চিত্র নির্মাণের সবচেয়ে মহৎ লক্ষ্য। তাই শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ শিশুদের দৃষ্টিকোণ থেকে শুরু করতে হবে, শিশুদের জীবনের প্রতিফলিত করতে হবে এবং শিশুদের পুরো গল্পের বর্ণনামূলক বিষয় হতে হবে।

সদ্য সমাপ্ত ৩৫তম চীনের গোল্ডেন রুস্টারস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শিশু চলচ্চিত্র ভালোভাবে উপস্থান করা হয়েছে। ‘গুডবাই দ্য গ্রাউন্ডহগ’ নামের মুভি শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় এবং  ‘বুনি বিয়ার্স: ব্যাক টু আর্থ’ নামের মুভি শ্রেষ্ঠ আর্ট ফিল্মের পুরস্কার লাভ করে। এর প্রায় ১০টি সিরিজ নির্মিত হয় এবং  দেশীয় শিশু চলচ্চিত্রের একটি নামকার্ড হয়ে উঠে। এর পরিচালক তিং লিয়াং মনে করেন, সকল সৃষ্টিই চিন্তার উদ্ভাবন। চিন্তায় উদ্ভাবন ছাড়া ভালো কাজ সৃষ্টি করা কঠিন। বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে অবশ্যই শিশুদের বুদ্ধিমত্তা এবং নান্দনিকতাকে সম্মান করতে হবে এবং নির্মাতাদের সর্বদা তাদের হৃদয়ে একটি শিশুর মতো নির্দোষ মন থাকতে হবে, যাতে নির্মিত কাজগুলো শিশুদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হতে পারে।

 

শিশুদের চলচ্চিত্রগুলো  ‘আকর্ষণীয়’ হতে হবে, যদি তারা শিশুদের অনুমোদন পেতে চায়। কেমন ‘আকর্ষণীয়’? শিশুরা মার্শাল আর্ট মুভি এবং ভয়ানক মারামারির দৃশ্যসহ অ্যাকশন মুভি দেখতে পছন্দ করে। আজকের জমকালো মুভি স্পেশাল এফেক্ট প্রযুক্তি শক্তিশালী এবং উত্তেজনাপূর্ণ ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরি করার সুবিধা প্রদান করে। তবে, শিশু চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যটি মনে রাখা উচিত্ এবং শিশু চলচ্চিত্রের শিক্ষামূলক কাজটি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাই, শিশু চলচ্চিত্রগুলোকে ‘আকর্ষণ’ অন্ধভাবে অন্বেষণ করা উচিত নয়, বরং আরো উষ্ণ এবং প্রেমময় বিষয়বস্তু প্রদান করা উচিত্।

 

চায়না চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি হাউ ক্যমিং বলেন যে, চমৎকার শিশু চলচ্চিত্রগুলো শিশুদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য, তাই শিশু চলচ্চিত্রগুলোর শিক্ষামূলক ভূমিকা কোনও সময় ছেড়ে দেওয়া উচিত্ নয়। শিক্ষা এবং প্রচার দুটি ভিন্ন ব্যাপার। শিশু চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে যেগুলো শুধুমাত্র প্রচার করে সেগুলো শিশুদের পক্ষে জয়ী হতে পারে না এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা চলচ্চিত্রের শিক্ষাগত দায়িত্বও পালন করতে পারে না। চমৎকার শিশু চলচ্চিত্রগুলো সর্বদা শিক্ষামূলক ফাংশন, মজাদার এবং নান্দনিক হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, শিশু চলচ্চিত্র কর্মীদের নিজেদেরকে শিল্পী এবং শিক্ষাবিদ  মনে করা উচিত্।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে হিট হওয়া শিশু চলচ্চিত্রের মধ্যে অধিকাংশই হলো কার্টুন ও অ্যানিমেশন মুভি। মানুষের অভিনীত শিশু চলচ্চিত্রের সংখ্যা খুব কম। চীনে বর্তমানে ২০ কোটিরও বেশি শিশু আছে। বাজার-ভিত্তিক পরিবেশে শিশু চলচ্চিত্রগুলোর শক্তিশালী জনকল্যাণ আছে। তাই শিশু চলচ্চিত্রের গণকল্যাণের তহবিলকে সমর্থন এবং উন্নয়ন করা উচিত্,শিশু চলচ্চিত্র রচনার দলকে শক্তিশালী করে তোলা এবং শিশু চলচ্চিত্রের উন্নয়নকে সমর্থন করার ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত্।