আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ১০৪
2022-12-15 18:12:42

১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান অনন্য:  শামীমা চৌধুরী, কবি, সাংবাদিক, গবেষক 

২. নতুন ক্যারিয়ারে নতুন দিগন্ত

৩.  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন চাং তাওরোং

৪.  পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন যারা

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান অনন্য:  শামীমা চৌধুরী, কবি, সাংবাদিক, গবেষক

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ের লাল সবুজ পতাকায় বাংলাদেশের নারীর রয়েছে বিপুল অবদান। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারীর অবদান প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলবো। আমাদের স্টুডিওতে উপস্থিত আছেন কবি,সাংবাদিক ও গবেষক শামীমা চৌধুরী। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।  

 

১৯৭১ সালে শামীমা চৌধুরী স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সেই সময় দিন পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রাজবাড়ি শহরে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন খুব কাজ থেকে। তার পরিবার ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। বড় ভাই ও বোন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাংগঠনিক কাজ করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তারা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে তিন ভাগে দেখেন। প্রথম হলো প্রস্তুতি পর্ব। সেই সময় নারীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, সাংগঠনিক কাজ করেছে। তিনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। 

দ্বিতীয় পর্ব হলো সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর্ব। সেখানে তারামনবিবি, কাঁকনবিবি, বীথিকা বিশ্বাসের মতো অনেক নারী অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। অনেকেই তথ্য আদানপ্রদান, অস্ত্র বহন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য দানসহ নানা রকম সহযোগিতা করেছেন। 

আবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক নারী। তিন থেকে চারলাখ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগও কম নয়। ভাগীরথীর মতো অনেক নারী শহীদ হয়েছেন। 

যুদ্ধপরবর্তিকালেও নারীরা দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে কাজ করেছেন। 

শামীমা চৌধুরী তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা জীবনে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান প্রসঙ্গে গবেষণা করেছেন। তিনি বাংলা প্রেস ইন্সটিটিউটের একজন গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। 

তিনি কবিতা এবং উপন্যাসও লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার উপন্যাস রয়েছে। তিনি নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করে শোনান। 

নতুন ক্যারিয়ারে নতুন দিগন্ত

চীনের অনেক তরুণী আজকাল গতানুগতিক চাকরি ছেড়ে নতুন ক্যারিয়ার বেছে নিচ্ছেন। এরা অনেক সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে নতুন পেশাবেছে নিচ্ছেন এবং সফল হচ্ছেন। চলুন শোনা যাক, এমন এক তরুণীর কথা।

থাং সুয়ে একজন সাহসী নারী। প্রেমিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর চব্বিশ বছর বয়সী থাং সুয়ে তার চাকরি ছেড়ে দেন এবংচেচিয়াং প্রদেশের আনচি কাউন্টিতে একটি খামার কেনেন।

২০১৯ সালে হুনান প্রদেশের হুনান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর হাংচৌর একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন।

নগর জীবনের মানসিক চাপ, উদ্বেগ, চাকচিক্য এসব কিছুতে কেমন একটা অবসাদে ভুগছিলেন থাং সুয়ে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন প্রকৃতিরকাছাকাছি সরল জীবন যাপন করবেন।

এ বছরের শুরুর দিকে তিনি অনলাইনে একটি খামার বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন। খামার কিনবেন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তিনি কৃষিকাজেরউপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন অনলাইনেই।

এরপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছোট একটি খামার কিনে ফেলেন। ১.৩ হেক্টর জমির সেই খামারটিতে সবজি চাষ শুরু করেন থাং সুয়ে।অনলাইনে বিক্রি করেন তার খামারে উৎপাদিত তাজা সবজি।

এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আয় করছেন তিনি। মানসিকভাবেও অনেক শান্তিময় জীবন যাপন করছেন।

হাংচৌভিত্তিক মানবসম্পদবিভাগের পরিচালক সু লান মনে করেন, এখনকার তরুণ প্রজন্মের উপর আর্থিক চাপ অনেক কম। ১৯৭০ বা ৮০দশকে যারা জন্মেছেন তাদের তুলনায় নব্বই দশকে যাদের জন্ম হয়েছে তারা তুলনামূলকভাবে অনেক উন্মুক্ত সমাজে বড় হয়েছেন। প্রযুক্তি ওতথ্যে তাদের অনেক বেশি প্রবেশাধিকার রয়েছে। তারা ঝুঁকি নিতেও পারছেন।

নতুন প্রজন্মের নারীরা তাদের ইচ্ছামত চলতে পারছেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন, নিজের জীবনে অনেক সাহসিকতার পরিচয়ও দিতে পারছেন।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন ‘মাদার অব হুইট’ চাং তাওরোং

একজন নারী দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন, গবেষণা করছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। তিনি গমের ১৩টি নতুন ধরনউদ্ভাবন করেছেন যা উচ্চফলনশীল ও সহজে উৎপাদনযোগ্য। তাকে নাম দেয়া হয়েছে ‘মাদার অব হুইট’।

চাং তাওরোং। এখন তার বয়স পঞ্চাশ বছর। হুব্যেই প্রদেশের সিয়াংইয়াং একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠানের একজনগবেষক তিনি।

সিয়াংইয়াং হলো এই প্রদেশের সবচেয়ে বড় গম উৎপাদনকারী এলাকা। প্রদেশের ৪০ শতাংশ গম এখানে উৎপাদন হয়। চাং এবং তারসহকর্মীদের উদ্ভাবিত জাতের গম চাষ হচ্ছে  ২ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে এবং এখান থেকে নেট লাভ হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ইউয়ানের বেশি।

২৬ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৩টি নতুন জাতের গম উদ্ভাবন করেছেন চাং। চীনা প্রবাদ হলো, একটি বীজ দুনিয়া বদলে দিতে পারে।সত্যিই তাই। চাংয়ের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল  গমের জাতগুলো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে।

হেইলংচিয়াং প্রদেশের তাছিং শহরে হেইলংচিয়াং বায়ি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে গ্র্যাজুয়েশন করেন চাং। তিনি তখনও ভাবেননিসারা জীবন কৃষি বিষয়ক গবেষণা করে কাটাবেন।

তিনি তার হোমটাউন সিয়াংইয়াংয়ে ফিরে ১৯৯৭ সালে একাডেমিতে যোগ দেন। চাকরিতে বেতন ছিল কম। চাং ভাবছিলেন কিছুদিন পরেঅন্য চাকরিতে চলে যাবেন। কিন্তু কৃষি গবেষণায় তার ভালোলাগা তৈরি হতে থাকে। তিনি যখন ভাবেন দেশের জন্য কাজ করছেন তখন তারউৎসাহ আরও বেড়ে যায়।

গম বোনা হয় অক্টোবরের শেষে। মে এবং জুন মাসে গমের ফসল ওঠে। এই সময়টাতে চাং অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। কারণ তিনি দেখতে চানতার উদ্ভাবিত বীজ থেকে কেমন ফলন হচ্ছে, তার গুণগত মান কেমন।

শুধু উচ্চ ফলনশীলই নয়, সেগুলো যেন প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করতে পারে সেদিকেও নজর দেন তিনি।

কোভিড ১৯ মহামারির পর বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন চাং।

চাং এবং তার সহকর্মী গবেষকরা গ্রামে কৃষকদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন। তারা যেন সঠিক বীজটি বেছে নিতে পারে, সেগুলোরগুণাগুন বিষয়ে জানতে পারে সেজন্য সরাসরি কথা বলেন তাদের সঙ্গে। চাং তাওরোংকে ভালোবেসে উপাধি দেয়া হয়েছে ‘গমের জননী’ বামাদার অব হুইট।

এই নিবেদিত প্রাণ গবেষক এখনও কাজ করছেন উন্নতজাতের গমবীজ উদ্ভাবনের জন্য।

পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন যারা 

বিশ্বের অধিকাংশ সমাজেই গৃহসহিংসতা বা পারিবারিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা। পারিবারিক নির্যাতনে সাধারণত নারী ও শিশরাভিকটিম হয়।  এই সমস্যা সমাধানে পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে গড়ে তোলা হয়েছে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ সমিতি। সরকার ওসামাজিক শক্তিগুলো একহয়ে এখানে কাজ করছে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

বিশ্বের বিভিন্ন সমাজে পারিবারিক নির্যাতনের সমস্যা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত নারী ও শিশুরা ভিকটিম হয়ে থাকে।

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের শাওসিং সিটিতে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। এই সমিতি, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা, স্থানীয় নারী সংগঠন এবং পেশাজীবী কর্মীরা সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনাগুলোর সমাধান করছেন।

কিছুদিন আগে স্থানীয় একজন নারী অভিযোগ করেন যে তিনি তার স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পুলিশ এবং সমিতির সদস্যরা এইঅভিযোগের প্রেক্ষিতে কাজ শুরু করেন।   তারা এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন, সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং করেন, এর নেতিবাচকফলাফল তাদের বুঝাতে সক্ষম হন এবং শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে মিটমাট হয়েছে। ব্যক্তিটি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। এইদম্পতি এখন ভালোভাবে সংসার করছেন।

শাওসিং সিটির সিনছাং কাউন্টির নারী ফেডারেশনের চেয়ারওম্যান লিইয়ু ছিওয়েই বলেন, 

‘এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। ভিকটিম নারী আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি এই সমাধানে খুশি হয়েছেন। তিনিডিভোর্স চাননি। চেয়েছিলেন তার স্বামীর ব্যবহারে পরিবর্তন। এখন তার স্বামী অনেক ভালো ব্যবহার করছেন। তিনি সমিতির কাছ থেকেনিজের পরিবারের মানুষদের মতো উষ্ণতা পেয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে এ ধরনের কাজ ভালো ফলাফল বয়ে আনছে।’

লিইয়ু চিওয়েই একজন নারী নেত্রী হিসেবে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে ভালোভাবেই কাজ করছেন। এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগের ফলেসমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং অনেক পরিবারেই শান্তি ফিরে এসেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি অফিসও স্থাপন করা হয়েছে। এখানে পারিবারিক নির্যাতনের ভিকটিমদের সার্বিকভাবে ওয়ানস্টপ সেবাদেয়া হয়। আইনজীবী, পুলিশ, সাইকোলজিকাল কাউন্সিলররা সমন্বিতভাবে কাজ করেন।  

এভাবে সামাজিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে চলেছে এই সমন্বিত উদ্যোগ। 

সুপ্রিয় শ্রোতা , আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময়শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলারওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদেরফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতেপাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল