ডিসেম্বর ১৫: মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতি মানুষের বেঁচে থাকার ও বিকাশের জন্য জরুরি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে, সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের পাঁচটি দিক তুলে ধরেন। তিনি এমন আধুনিকায়নের কথা বলেন, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি মিলেমিশে থাকে।
কিভাবে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থান নিশ্চিত করা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায়, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলো মূলত "আগে দূষণ ও পরে নিয়ন্ত্রন" নীতি অনুসরণ করেছে। বিশাল বস্তুগত সম্পদ তৈরির সময়, তারা প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনেও কম যায়নি। ২০১২ সালে সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর বেইজিং সফরকালে সি চিন পিং বলেছিলেন: "আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পুরানো পথ অনুসরণ করে একটি আধুনিক দেশ গড়তে পারি না।" বিগত দশ বছরে চীন দৃঢ়তার সাথে আধুনিকায়নের পশ্চিমা মডেল পরিত্যাগ করে চলেছে। এই মডেলে প্রকৃতিকে অবমূল্যায়ন করা হয়, প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়। চীন বরং টেকসই উন্নয়নের ধারণা মেনে চলেছে এবং অবিচলভাবে সভ্য উন্নয়নের পথ অনুসরণ করেছে ও করছে।
আজ যখন ইউননানের হাতিরা উত্তরে যায় এবং বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দক্ষিণে ফিরে আসে, যখন সবুজ শীতকালীন অলিম্পিক সময়ের একটি সুন্দর স্মৃতি হয়ে ওঠে, যখন উত্তাল ইয়াংজি নদী ও হলুদ নদীকেন্দ্রিক একটি নতুন পরিবেশগত আন্দোলন গড়ে ওঠে, তখন চীনা আধুনিকায়নের আসল চিত্র ফুটে ওঠে।
চীনা স্টাইলের আধুনিকায়ন মানে শুধুমাত্র উঁচু উঁচু ভবন আর বিশাল বিশাল রাস্তাঘাট নয়, বরং চীনা আধুনিকায়ন সবুজ জল, সবুজ পাহাড়, ও নীল আকাশের জন্য লড়াইয়ের আধুনিকায়ন। একই সাথে, মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থান মানে উচ্চমানের উন্নয়ন অর্জনের জন্য পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সবুজ উন্নয়নের পথে অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাওয়া। হেইলুংচিয়াংয়ের ইচুনে প্রাকৃতিক বনে বাণিজ্যিক লগিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, সেখানে আরও বেশি পর্যটক আকৃষ্ট হয়েছে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। এমন অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়।
"প্রকৃতিকে সম্মান করা, প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য করা এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করা হল একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশকে সর্বাত্মকভাবে গড়ে তোলার পূর্বশর্ত।" চীনের আধুনিকায়নের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধা। সমস্যা সমাধান ও অসুবিধা দূর করার লড়াইয়ের প্রক্রিয়ায় চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বড় লড়াই, কঠিন লড়াই, তিক্ত লড়াই। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে "উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করা", "পরিবেশদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ ভালোভাবে প্রচার করা", "বৈচিত্র্য, স্থিতিশীলতা এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা"-র কথা বলা হয়েছে।
নতুন যাত্রায়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের চেতনাকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে; সি চিন পিংয়ের পরিবেশগত সভ্যতার চিন্তাভাবনাকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; শিল্প পুনর্গঠন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। কার্বন হ্রাস, দূষণ হ্রাস, সবুজ সম্প্রসারণ এবং বৃদ্ধি—এই হচ্ছে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের আসল কথা।
হেবেইয়ের শিজিয়াজুয়াং-এ বসবাসকারী একজন সিনিয়র ফটোগ্রাফার ওয়াং রুচুন ২০১৪ সাল থেকে প্রতিদিন সকালে একই আকাশের ছবি তুলছেন। শুরুর দিকে ক্যামেরায় নীল আকাশ ও সাদা মেঘের অস্তিত্ব ছিল কম। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। তাঁর আলোকচিত্রেও যেন চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের সুফল ফুটে উঠেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)