ডিসেম্বর ১৫: চীন সরকার সম্প্রতি কোভিড মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নতুন কিছু ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঝুঁকির ক্ষেত্র ভাগ করা, কোয়ারেন্টাইনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা এবং বয়স্কদের টিকাদান জোরদার করাসহ ১০টি বিষয়। ‘নতুন দশটি ব্যবস্থা’ প্রবর্তনের লক্ষ্য হচ্ছে মহামারী প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক ও সুনির্দিষ্ট স্তর ক্রমাগত উন্নত করা, মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের উপর মহামারীর প্রভাব কমিয়ে আনা। এখন বেইজিং ও শাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলি থেকে বেশিরভাগ অঞ্চলে, জনগণের আঞ্চলিক ভ্রমণ সুযোগ পুনরায় শুরু হয়েছে এবং চীনা সমাজ উৎপাদন এবং জীবনকে স্বাভাবিক করার দিকে এগিয়ে চলেছে।
চীন কেন এই পর্যায়ে মহামারী প্রতিরোধ নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ করলো? বিস্তারিত শুনুন আজকের অনুষ্ঠানে।
এটি একটি সক্রিয় এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত যা গত তিন বছর মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মহামারী পরিস্থিতির নতুন পরিবর্তন এবং বিভিন্ন অবস্থার ওপরব্যাপক গবেষণা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নেওয়া উল্লেখযোগ্য সাফল্য। অন্য কথায়, চীন গত তিন বছর তা কার্যকরভাবে মহামারী প্রতিরোধে ব্যবহার করেছে এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুযোগ ও শর্ত জিতেছে।
বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে করোনাভাইরাসের তুলনায় ওমিক্রন ভাইরাসের প্যাথোজেনিসিটি উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। চীন, কোভিডমহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে, বর্তমানে সমগ্র জনসংখ্যার ৯০ ভাগেরও বেশি সম্পূর্ণ টিকা দিয়েছে। যাতুলনামূলকভাবে শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে।
একই সময়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াইয়ে চীন প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে এবং এর ওষুধ গবেষণা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা ও উপাদান সহায়তার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, ভাইরাসের বিষয়ে চীনা জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি আরও উন্নত হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, চীন মহামারী প্রতিরোধ নীতি অনুকূলকরণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য একটি সমালোচনামূলক "উইন্ডো পিরিয়ড" শুরু করেছে।
বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যখন কোনও দেশ বা অঞ্চলের মহামারী প্রতিরোধ নীতি ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়, তখন প্রায় সবসময়ই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসা সংস্থানের ঘাটতি দেখা দেয়। চীন সরকার মহামারী প্রতিরোধ নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যই নয়, বরং এটি চীনের মহামারী প্রতিরোধের মূল উদ্দেশ্যকেও প্রতিফলিত করে। তা হলো- মানুষ ও জীবন সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ।
মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেরকার্যকর সমন্বয়ের কারণে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে ৮.১শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি। এই বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে, চীনের মোট আমদানি ও রপ্তানি মূল্য গত বছরের একই সময় তুলনায় ৯.৯ শতাংশ বেড়েছে। কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। চীনের মহামারী প্রতিরোধের নতুন নীতি চালু করা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলি ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছে; যা বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও বেশি গতিশীল করবে।
একই সময় মহামারীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের জন্য চীন তার সামর্থ্যঅনুযায়ী সহায়তা করছে। বিগত তিন বছরে, চীন তার মহামারী বিরোধী অভিজ্ঞতা এবং পদ্ধতিগুলি বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে, ১২০ টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২.২ বিলিয়ন ডোজ টিকা সহায়তা দিয়েছে, দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে মহামারী প্রতিরোধের উপকরণ সরবরাহ করেছে এবং রপ্তানি করেছে।
বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারী চলছে এবং মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া, বিজ্ঞানসম্মত প্রতিরোধ-ব্যবস্থা মেনে চলা এবং সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা—এটাই মহামারীর বিরুদ্ধে চীনের লড়াইয়ে ‘পরিবর্তন’ ও‘অপরিবর্তন’।
জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই