যখন মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশসমূহের কথা আসে, তখন আপনাদের মনে প্রথমে কোন বিষয়টি ভেসে উঠে? আমি বিশ্বাস করি যে অনেকে কাতারের কথা ভাবছেন, কারণ সেখানে এখন চলছে বিশ্বকাপ। আপনারা হয়ত জানেন, এবারের বিশ্বকাপের মূল স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরবের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করছে চীন।
চীন ও আরবের সুসম্পর্কের সাক্ষী শুধু ওই ভবনগুলো নয়, বরং সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুটি শীর্ষ সম্মেলন। প্রথম চীন-আরব ও চীন-উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ শীর্ষ সম্মেলন গত ৯ ডিসেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ দুটি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এটা তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফরের গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য। চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলনের কথা যদি বলি, তাহলে চীন-আরব সহযোগিতা ফোরাম থেকে বলা শুরু করতে হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে চীন ও আরব লীগ চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। আর এ ফোরাম পরে চীন-আরব সংলাপ ও সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। এ পর্যন্ত এ ফোরাম ৯ বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এবং ষষ্ঠ ফোরাম থেকে প্রতিবার প্রেসিডেন্ট সি ফোরামে অংশ নেন বা তাতে অভিনন্দবার্তা পাঠান।
প্রেসিডেন্ট সি একবার বলেছেন, আরব বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা যেন পুরাতন বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত্ করা। এবারের চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি প্রথমবারের মতো চীন-আরব বন্ধুত্বের চেতনা উত্থাপন করেন, তা হল পরস্পরকে সম্মান ও সাহায্য করা, সমান ও উভয়ের কল্যাণ, সহনশীলতা ও পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। আগামী ৩-৫ বছরে চীন ও আরবের সহযোগিতার পরিকল্পনাও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট সি। উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সবুজ উদ্ভাবন, জ্বালানি নিরাপত্তা, সভ্যতা সংলাপ, যুব প্রতিভা ও নিরাপত্তাসহ ৮ ক্ষেত্রে অভিন্ন অভিযান চালানো হবে। এ ৮টি যৌথ অভিযান আরব দেশর বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী উত্থাপন করা হয়। যেমন, আরব দেশে চীনা চিকিত্সক দল পাঠানো, চীন-আরব খরা, মরুকরণ এবং ভূমি ক্ষয় সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চীন-আরব পরিষ্কার জ্বালানি সহযোগিতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
পাশাপাশি, সহযোগিতার বস্তাব লক্ষ্যমাত্রাও উল্লেখ করা হয়। গেল ১০ বছরে চীন-আরব বাণিজ্যিক পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর ২০২৭ সালে তা হবে ৪৩০ বিলিয়ন ডলার।
চীন- উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ শীর্ষ সম্মেলনেও অনেক লক্ষ্যণীয় সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা পেশ করা হয়। যেমন, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত দেশ থেকে আরও বেশি অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করবে চীন। রেনমিনপি দিয়ে তেল ও গ্যাসের দাম শোধ করবে। আরব মহাকাশচারীরা চীনা স্পেস স্টেশনে যাবেন। আর ৫জি, ৬জি সহযোগিতাও জোরদার করা হবে।
এবারের দুটি শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বের দৃষ্টি আকষর্ণ করেছে। এক দিনে প্রেসিডেন্টস সি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের ১২ জন নেতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন এবং এর মধ্যে ৮জন শীর্ষ নেতা। প্রেসিডেন্ট সির এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফর হল চলতি বছরের শেষের দিকের গুরুত্বপূর্ণ চীনা কূটনৈতিক কার্যক্রম। বছরের শুরু থেকেই চীন বড় দেশ হিসেবে চীনা বৈশিষ্ট্যের কূটনৈতিক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের মন এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলার আধুনিক পরিকল্পনা কখনও ভুলে যাবে না এবং সবার সামনে তুলে ধরা হবে। চীনের এ নতুন যাত্রা বিশ্বকে আরও নিশ্চয়তা ও ইতিবাচক শক্তি প্রদান করবে। (শিশির/ এনাম/রুবি)