সপ্তম সিঙ্গাপুর হক্কিয়েন (Hokkien) সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত
2022-12-13 21:10:16

গত ২ ডিসেম্বর, সিঙ্গাপুরের হাক্কিয়েন গিল্ড হলের (guild hall) উদ্যোগে ‘সপ্তম সিঙ্গাপুর হাক্কিয়েন সাংস্কৃতিক উৎসব’ শুরু হয়েছে। এই বছরের ফুজিয়ান  হাক্কিয়েন সাংস্কৃতিক উৎসবের থিম হল "ফুজিয়ান স্টাইল, ফুজিয়ান আর্ট এবং ফুজিয়ান স্বাদ"। বিস্ময়কর গান-নাট্য পরিবেশনা, ফুজিয়ান অভিবাসীদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর বক্তৃতা ও খাঁটি ফুজিয়ান রন্ধনপ্রণালী বিপুল সংখ্যক সিঙ্গাপুরবাসীকে আকৃষ্ট করেছে এবং তারা স্বাদ উপভোগ করেছে। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এবং অংশগ্রহণকারীরা বলেন যে, তারা ফুজিয়ানের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে চান। সেদিন অনুষ্ঠিত ফুজিয়ান হাক্কিয়েন সাংস্কৃতিক উৎসবের পারফরম্যান্স হলে, দক্ষিণ ফুজিয়ান পুতুল, ফুজিয়ান নার্সারি রাইমস, মার্শাল আর্ট, জিথার এবং চা শিল্পের মতো পারফরম্যান্স মঞ্চস্থ করা হয়। তাদের মধ্যে, সিঙ্গাপুরের নান ছিয়াও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত পাপেট শো ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিয়ে স্কুলের প্রতিনিধিত্বকারী পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র চেন ইউফেই খুব খুশি এবং গর্বিত বোধ করে। সে বলে,

"আমরা জীবন্ত মানুষের মতো পুতুল দেখাতে চাই এবং গল্পের মাধ্যমে সত্য কথা বলতে পারি। এই পাপেট শো সম্পর্কে অনেকেই জানেন না এবং এই ঐতিহ্য একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি খুব খুশি কারণ আমি উত্তরসূরি।"

 

পারফরম্যান্স স্টুডিও’র বাইরে ফুজিয়ানের বিভিন্ন খাবারের স্টলের সামনেও ছিল দীর্ঘ লাইন। মিসেস লিউ শুহুই, যার বয়স ষাটের বেশি, ফুজিয়ান রাইস নুডুলসের বেশ কয়েকটি বড় প্যাক কিনেছেন। তিনি বলেন, তিনি প্রায়শই তার নাতিকে সপ্তাহের দিনগুলিতে হাক্কিয়েন গিল্ড হলের এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়ে যান। তিনি আশা করেন যে এই কার্যক্রমগুলি তরুণ প্রজন্মকে চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও শিখতে সাহায্য করবে।

 

"আমি অনেক গিল্ড হলের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। আমি অগাস্টের মধ্য-শরতের উৎসবে অংশগ্রহণ করি, লণ্ঠন জ্বালাই, মুন কেক খাই এবং চা পান করি। মাঝে মাঝে আমি আমার নাতিকে ফুজিয়ান গিল্ড হলে নিয়ে যাই। সেখানে ১৫ই অগাস্ট মধ্য-শরৎ উৎসব উদযাপন হয়। ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রচার করা খুবই ভাল। পরবর্তী প্রজন্মকে জানতে দিন এবং আমাদের শহরটি কোথায় তাও জানতে দিন।"

 

সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং ফুজিয়ান সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, সিঙ্গাপুরে চীনারা বহু-জাতিগত ও বহু-সাংস্কৃতিক পরিবেশে বাস করে এবং সিঙ্গাপুরের হাক্কিয়েন সংস্কৃতি অন্যান্য জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে অনন্যভাবে একীভূত। সিঙ্গাপুরের চীনাদের এই অনন্য সংস্কৃতি এবং পরিচয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, হাক্কিয়েন গিল্ড হল স্থানীয় হাক্কিয়েন সংস্কৃতিকে তার নিজস্ব উপায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হিসাবে, স্থানীয় হাক্কিয়েন সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে; যা সিঙ্গাপুরে চীনা সংস্কৃতির টেকসই উন্নয়ন এবং উত্তরাধিকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

 

সিঙ্গাপুরের হাক্কিয়েন গিল্ড হলের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উপ-পরিচালক সু ঝেনইয়ি বলেন, সিঙ্গাপুরে চীনাদের মধ্যে হাক্কিয়েন সম্প্রদায় হল বৃহত্তম গোষ্ঠী। যা গোটা সিঙ্গাপুরের চীনাদের প্রায় ৪০ শতাংশ। বছরের পর বছর ধরে, ফুজিয়ান সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে ফুজিয়ান সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ঐতিহ্যবাহী ফুজিয়ান সঙ্গীত, যেমন- নানইন এবং গেজাই অপেরা সিঙ্গাপুরে প্রবর্তিত হয়েছে। পারফরম্যান্সে স্বদেশি পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

 

হোক্কিয়েন গিল্ড হল প্রতি দুই বছর একবার ফুজিয়ান হাক্কিয়েন সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে। এটি ফুজিয়ানের সাংস্কৃতিক ইতিহাস, শিল্প ও খাদ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে স্থানীয় ফুজিয়ান সমাজের পূর্বপুরুষের সংস্কৃতির স্মৃতিকে ক্রমাগত জাগ্রত ও গভীর করছে। যাতে সাংস্কৃতিক শিকড় রক্ষা করা যায়।

 

(জিনিয়া/তৌহিদ)