যাত্রীবাহী বিমান শিল্পে একটি কথা খুব প্রচলিত: ‘তৈরির চেয়ে কেনা, কেনার চেয়ে ভাড়া দেওয়া ভালো।’ এখন চীনের নিজের তৈরি বিমান সি-৯১৯ নীল আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। চীনাদের নিজস্ব বিমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আজকের বিশেষ ভিডিও অনুষ্ঠানে আমরা জানব একটি বিমানের জন্মের প্রক্রিয়া।
গত ৯ ডিসেম্বর চীনের নিজের তৈরি সি-৯১৯ যাত্রীবাহী বিমান চীনের ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয় । ফলে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স সি-৯১৯ বিমানের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু করেছে। চীনের যাত্রীবাহী বিমান প্রশাসনের হুয়া তোং ব্যুরো ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সকে বিমান উড্ডয়নের লাইসেন্স দিয়েছে। তাতে প্রমানিত হয়েছে যে এ বিমান নিরাপদ।
সেদিন থেকে চীনের যাত্রীবাহী বিমান ব্যুরোর অনুরোধে কমপক্ষে ১০০ ঘণ্টা ধরে খালি বিমান উড্ডয়নের পরীক্ষা শুরু করেছে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স। তা আগামী বছরের মার্চ মাসে সম্পন্ন হবে।
সি-৯১৯ চীনের নিজস্ব গবেষণায় তৈরি একটি যাত্রীবাহী বিমান। এর প্রথম গবেষণা থেকে উত্পাদন পর্যন্ত একাধিক মূল প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী সফলতা লাভ করেছে চীন। সি-৯১৯ বিমানের আকৃতি
অনেকের মনে ছাপ ফেলেছে। তাতে ৪টি বড় আকারের গ্লাস দেখা যায়। ঐতিহ্যবাহী বিমানের মাথায় দুটি এবং পাশে ৪টিসহ মোট ৬টি গ্লাস রয়েছে। কিন্তু সি-৯১৯-এ রয়েছে কেবল ৪টি। এ নকশার মাধ্যমে চালকরা আরও সুদূরে দৃষ্টি প্রদানে সক্ষম হয়। গ্লাস বাঁকা থাকলে বায়ু প্রতিরোধক শক্তি কমানো যায়। তাতে তেল সাশ্রয় হয়। সি-৯১৯ বিমানে রয়েছে চীনের নিজস্ব তৈরি সুপারক্রিটিকাল উইং, যা বিমান উড্ডয়নের প্রতিরোধক শক্তি কমাতে সহায়ক। তাছাড়া, সি-৯১৯ বিমানে যে অ্যাভিওনিক্স সিস্টেম থাকে- তার পর্যাপ্ত কেন্দ্রিকীকরণ করা হয়। এবং ব্যবস্থামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে চালকরা দ্রুত বিমানটি চালাতে সক্ষম হয়।
চীনের তৈরি বিমানটির নকশাকারী উ কুয়াং হুই বলেন, সি-৯১৯ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা চীনের যাত্রীবাহী শিল্প গঠন করবো। এ পর্যন্ত সি-৯১৯ একক আইল বিমানের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রসর। তাছাড়া, চীনে আছে শক্তিশালী শিল্পের ভিত্তি। কার্বন ফাইবার, ল্যান্ডিং গিয়ারে ব্যবহৃত ইস্পাতসহ নানান উপাদান এবং কিছু কিছু ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম তৈরির দক্ষতা ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে চীনে।
বর্তমানে সি-৯১৯ বিমানের টাইপ সার্টিফিকেট এবং উত্পাদন সার্টিফিকেট রয়েছে। তাতে প্রতিফলিত হয় যে বড় বিমানের পাইকারী উত্পাদনে দক্ষ চীন। বড় বিমানের কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়।
২০০৭ সালে সি-৯১৯ প্রকল্প শুরুর দিকে কী ধরণের গবেষণা ও উন্নয়ন পদ্ধতি বেছে নেওয়া হবে তা ছিল চীনা বিমান সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে প্রধান বিষয়। সারা চীনে ২০টির বেশি প্রদেশ ও শহর, ২০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এবং ২ লাখের বেশি মানুষ এ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। সবাই একমত হয় যে প্রধানত নিজের ওপর নির্ভর করতে হবে। ফলে বিমানটির নকশা, একত্রিত করা এবং বিক্রিসহ সব নিজে শেষ করেছে চীন। পাশাপাশি, প্রধান নির্মাণকারী এবং সরবরাহকারী বেছে নেওয়া হয়। ফলে গবেষণার ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি গবেষণার সময় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিমান শিল্প একটি দেশের সরঞ্জাম প্রস্তুতকরণের মানের এবং একটি রাষ্ট্রের ব্যাপক শক্তির প্রতীক। বর্তমানে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, চীন ও রাশিয়ার বড় আকারের যাত্রীবাহী বিমান তৈরির দক্ষতা রয়েছে। এটিও চীনের শিল্পমান যে বিশ্বের সেরা তার প্রমাণ।
(রুবি/এনাম)