বন্ধুরা, কোনো দেশের নেতা বিদেশ সফরে সবসময় কিছু উপহার নিয়ে যান বা উপহার দেন। এর পিছনে অনেক গল্প ও তাৎপর্য রয়েছে। যা একই সঙ্গে একটি দেশের বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। তাহলে চীনের প্রেসিডেন্ট যখন বিদেশ সফরে যান, তখন তিনি কি কি উপহার নিয়ে যান? আজ এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল, বন্ধুর পুনর্মিলনের মত একটি বিশেষ সাক্ষাৎ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর পুরোনো বন্ধুর জন্য বিশেষভাবে আয়োজন করেন। আর এতে বিশেষ একটি উপহার ছিল, সুন্দর বাক্সের মধ্যে রয়েছে অনেক আগে তোলা একটি ছবি। যা পুরোনো মার্কিন বন্ধু ডভোচেকের জন্য সি চিন পিং-এর বিশেষ উপহার।
সাক্ষাৎকালে সি চিন পিং এবং মার্কিন বন্ধু ডভোচেক সেই ছবি দেখে অনেক সুন্দর স্মৃতির কথা স্মরণ করেন। সি বলেন, তখন নাস্তা খেলাম, আপনি মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিলেন এবং অফিসে চলে গেলেন। তারপর আমরা বাসার সামনে থেকে ছবিটি তুলেছিলাম।
এলেনর ডভোচেক বলেন, আমাদের উপহার দেওয়ার দরকার নেই, আমাদের সঙ্গে আপনার মৈত্রী যথেষ্ঠ মূল্যবান। সি এর জবাবে বলেন, ঠিক, এটি ৩০ বছরের মৈত্রী!
১৯৮৫ সালে সি চিন পিং তখন চীনের চেং তিং জেলার সিপিসি সম্পাদক ছিলেন, তিনি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের মাস্কাটাইনে কৃষি ও পশু পালনের প্রযুক্তি শিখছিলেন। সফরকালে সি চিন পিং ডভোচেক দম্পতির বাসায় তাঁর ছেলের রুমে দুই দিন ছিলেন।
২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সি চিন পিং বিশেষ করে- আইওয়া রাজ্যে ২৭ বছর আগে পরিচিত হওয়া পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেন।
সেবার দেখা সাক্ষাতের সময় সি চিন পিং ডভোচেক দম্পতিকে বলেন, আপনারা বিশেষ করে ফ্লোরিডা রাজ্য থেকে এসেছেন, আপনাদেরকে ধন্যবাদ। যদিও শুধু দুই দিন আপনার বাসায় ছিলাম, তবে তা ছিল আমার এবং মার্কিন সাধারণ মানুষের পরিচিত হওয়ার দুটি দিন, যা আমাদের জন্য খুব স্মরণীয়।
দেশের মধ্যে সম্পর্ক জনগণের মৈত্রীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। সি চিন পিং বিভিন্ন দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পছন্দ করেন।
২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর লাওস সফরকালে ব্যস্ততা থেকে সি চিন পিং বিশেষ করে হোটেলে লাওসের ফলসেনা পরিবারের বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেন। আধা ঘন্টা সময়ে তিনি ফলসেনা পরিবারের বেইজিং জীবনের কথা স্মরণ করেন। দেখা শেষে তিনি ২০১০ সালে ফলসেনা পরিবারের সঙ্গে তোলা একটি ছবি উপহার হিসেবে তাদেরকে দেন।
গত দশ বছরে সি চিন পিং বিভিন্ন দেশের বন্ধুর সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে ‘মৈত্রী কূটনীতির’ নতুন ধরণ সৃষ্টি করেছেন। উপহার হল কূটনীতির একটি অংশ। যা অনুভূতির প্রকাশ করে এবং মনের দূরত্ব কমিয়ে দেয়।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সি চিন পিং প্রথমবারের মত ভারত সফরে যান। সেদিন ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৬৪ বছর বয়স। মোদি একজন নিরামিষ-ভোজী মানুষ। তাই সি চিন পিং তাঁর জন্য বিশেষ করে একটি নিরামিষ কেক নিয়ে যান। মোদি আন্তর্জাতিক দাবা পছন্দ করায় সি চিন পিং তাঁকে জেড পাথরের তৈরি দাবা এবং চীনের বৈশিষ্ট্যময় সূচিকর্ম দেন।
২০১৬ সালের ২৮ মার্চ, চেক প্রজাতন্ত্র সফরকালে সি চিন পিং চেক প্রেসিডেন্ট মিলোস জেমানকে একটি চেয়ার উপহার দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, চেয়ারটি চীনের মিং আমলের স্টাইলের, সুন্দর এবং বসতেও অনেক আরাম।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের মহামারির পর সি চিন পিং প্রথমবার বিদেশ সফরে যান। কাজাখস্তান ছিল তাঁর সফরের প্রথম ধাপ। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ চীন সম্পর্কে খুব ভালোমতো জানেন। সি চিন পিং-এর দেওয়া উপহারের মধ্যে ছিল হস্তলিপিশিল্পের যন্ত্র। এসব উপহার থেকে প্রকাশিত মৈত্রীর মাধ্যমে বিশ্ব চীনের কূটনীতির উষ্ণতা অনুভব করেছে। সেই সঙ্গে বিদেশি বন্ধুরা চীনকে আরো ভালোভাবে জানতে পেরেছে।
রাষ্ট্রীয় উপহার, জনগণের মৈত্রীর দূত, দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাক্ষী। যা চীনের সমৃদ্ধি ও সুদীর্ঘকালের সংস্কৃতির প্রতিফলন।