লোহিত সাগরের নতুন শহর: মরুভূমিতে সবুজ ও নিম্ন কার্বনের নগর তৈরি করছে চীন ও সৌদি আরব
2022-12-09 11:56:01


সৌদি আরবের পশ্চিমে লোহিত সাগরের তীরে আবহাওয়া ভাল এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব লোহিত সাগরের তীরে নতুন শহর নির্মাণের ধারণা উত্থাপন করে। এটি হবে তেলের উপর নির্ভরতাহীন এবং একটি সবুজ ও নিম্ন কার্বনের বড় কমপ্লেক্স শহর।

 

 

লোহিত সাগরের নতুন শহরের অবস্থান হবে সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলের তাবুক প্রদেশে এবং তার আয়তন হবে ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। মানুষেরা তাকে নতুন প্রজন্মের সৌদি শহর বলে ডাকে। ২০৩০ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর প্রতিবছর ১০ লাখ দেশ-বিদেশের পর্যটক এটি ভ্রমণ করতে পারবে। তখন পর্যটকরা আবিষ্কার করতে পারবেন যে শহরের পরিবেশ, নির্মাণ ও পরিচালনা থেকে ঘরোয়া পানি ও বিদ্যু সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বড় বা ছোট অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে চীনের  চিহ্ন।  

 

 

চীন একটি ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্লান্ট এলাকা নির্মাণের দায়িত্ব বহন করে।মোট ৪০৬৮ সারি সোলার প্যানেল নিয়ে গঠিত এ এলাকা প্রতিঘণ্টায় ১২২ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উৎপাদন করতে পারবে। তা ৫০০০টি পরিবারের একদিনের চাহিদা পূরণ করবে।

 

লোহিত সাগরের নতুন শহরে থাকবে ৫টি এমন ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্লান্ট। এসব নির্মাণ করবে চীনা কোম্পানি। তাছাড়া, এনার্জি স্টোরেজ পাওয়ার স্টেশন, সাবস্টেশনসহ মাইক্রো গ্রিড সমর্থন অবকাঠামো নির্মাণ করবে চীন। এসব শহরের বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং লোহিত সাগরের নতুন শহরের জ্বালানির হৃদয় হবে।

 

সৌদি লোহিত সাগরের নতুন শহর প্রকল্পের সিইও কেন লারসন বলেছেন, আমরা চীনা কোম্পানিকে বেছে নিয়েছি কারণ তাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে এবং স্থানীয় ফটোভোলটাইক বাজারে চীনা কোম্পানি উন্নত অবস্থানে রয়েছে। চীনা কোম্পানির দক্ষতা এমন বড় আকারের, দীর্ঘসময়ের ও জটিল প্রযুক্তিগত প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

 

 স্থানীয় আবহাওয়া বিবেচনা করে চীনা কোম্পানি ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য একটি বুদ্ধিমান ট্র্যাকিং বন্ধনী এবং একটি স্বয়ংক্রিয় ক্লিনিং রোবট তৈরি করবে। তা ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্লান্টকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

 

 এ প্রকল্পের চীনা কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন,  সৌদি আরবে দেখা দেয় বালির ঝড় এবং এখানে পানি সম্পদের অভাব রয়েছে।  আমরা এমন  ক্লিনিং রোবট তৈরি করলে নানা সুবিধা তৈরি হবে। যেমন: রোবটের পরিষ্কার কাজ করতে কোন পানি লাগবে না এবং রোবটে রয়েছে একটি ফটোভোলটাইক প্যানেল এবং স্টোরেজ ব্যাটারি। তাতে রোবটের ক্রমাগত কাজ নিশ্চিত করে। ভবিষ্যতে এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জনশক্তি এবং খরচও কম হবে।

 

মরুভূমির পরিবেশের বিপরীতে যেখানে ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্ল্যান্টটি অবস্থিত তা থেকে গাড়িতে ২০ মিনিটের দূরত্বে কৃত্রিম জলাভূমি আরেকটি মনোরম দৃশ্য তৈরি করবে। এখানকার নলখাগড়াগুলো একজন মানুষের উচ্চতার সমান। শহরের পরিবেশের উন্নতির পাশাপাশি এই কৃত্রিম জলাভূমিটি পুরো শহরের গার্হস্থ্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে।

 

প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, নলখাগড়া হল পয়ঃনিষ্কাশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়৷ এই পর্যায়ে নলখাগড়ার শিকড় নর্দমায় জৈব পদার্থ, ধাতু এবং লবণের মতো অপসারণের জন্য সম্পূর্ণ পুলের নীচে একটি জাল তৈরি করে৷ আমরা সেচ পুকুরে ভাল জল নিষ্কাশন এবং সেচের জল তৈরি করব।

 

চীনে তৈরি কৃত্রিম জলাভূমি প্রকল্পের প্রথম পর্যায় চালু হয়েছে এবং প্রতিদিন ৬০০০ কিউব মিটার পানি সম্পদ পুনর্ব্যবহার করতে পারে এবং পুরো প্রকল্প শেষ করার পর প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা হবে প্রতিদিন ১৬ হাজার কিউব মিটার। তখন লোহিত সাগরের নতুন শহরে বাস্তবায়ন হবে সবুজ, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন। তা চীনা নকশা, তৈরি ও নির্মাণের প্রকল্পগুলোকে সৌদি আরবের উচ্চ স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

 

(শিশির/এনাম/রুবি)