সৌদি গণমাধ্যমে চীনের প্রেসিডেন্টের প্রবন্ধ প্রকাশিত
2022-12-08 14:38:46

চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলন ও চীন-উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এবং সৌদি আরব সফরের লক্ষ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) রিয়াদে পৌঁছেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এ উপলক্ষ্যে তিনি আল রিয়াদ পত্রিকায় ‘হাজার বছরের মৈত্রীর উত্তারাধিকার ধারণ করে একত্রে সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি’শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন।

প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, চীনা জনগণের গভীর বন্ধুত্ব নিয়ে আমি আবারও রিয়াদে এসেছি এবং আরব বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলন ও চীন-উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ শীর্ষ সম্মেলন এবং সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফর করছি। এটি যেমন উত্তরাধিকারের যাত্রা,তেমনি সৃষ্টির যাত্রাও বটে। চীন-আরব, চীন-উপসাগরীয় দেশসমূহ, ও চীন-সৌদি ঐতিহ্যিক মৈত্রী জোরদার করার উদ্দেশ্যে এ যাত্রা চীন ও আরব এবং উপসাগরীয় দেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা করবে।

চীন ও আরব দেশের মধ্যে বিনিময়ের ইতিহাস ২০০০ বছরের প্রাচীন। স্থল ও সামুদ্রিক রেশপথমের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা আসা-যাওয়া করতেন এবং এশিয়া মহাদেশের দুটি মহান সভ্যতা একে অপরের পরিপূরক ছিল। চীনের চীনা মাটির বাসন, কাগজ তৈরি এবং মুদ্রণ কৌশল পশ্চিমে যায় এবং  আরবি জ্যোতির্বিদ্যা, ক্যালেন্ডার এবং ওষুধ চীনে আসে। আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করি, উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করি এবং সভ্যতা বিনিময়ের ফলাফল বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করি, তা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। চীন ও উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে বিনিময়ের ইতিহাস বইয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত  বহু পথে বিস্তীর্ণ হয়েছে।

নবী মুহাম্মদ (স.) একবার বলেছিলেন: "জ্ঞান অর্জনে এমনকি সুদূর চীনে যাওয়া উচিত।" প্রাচীনকাল থেকে চীন ও সৌদি আরব পরস্পরকে সম্মান করে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান করে আসছে।

আরব দেশসমূহ উন্নয়নশীল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচার রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আরবের মানুষেরা স্বাধীনচেতা এবং বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে, আধিপত্যকে ভয় পায় না এবং অগ্রগতি অনুসরণ করে। আরব দেশের সম্পদ বৈচিত্যপূর্ণ এবং শিল্প স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। দেশের নির্মাণে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে এবং দেশের সুপ্ত শক্তি বিশাল। বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সভ্যতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে আরব দেশগুলো।

গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে চীন যথাক্রমে আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। দু’পক্ষের পারস্পরিক সমঝোতা নিয়ে পরস্পরকে সম্মান ও সাহায্য করে। সমান ও পারস্পরিক লাভজনক বন্ধু ও অংশীদার দু’পক্ষ। একবিংশ শতাব্দীতে  পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখে চীন ও আরবের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি ও সভ্যতার বিনিময় জোরদার হয়েছে।

গেল ১০ বছরে চীন-আরব সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে এবং নানা ক্ষেত্রে ধারাবাহিক আইকনিক ও যুগান্তকারী সফলতা অর্জন করেছে। চীন সকল আরব দেশের সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতা, যৌথ উন্নয়ন ও ভবিষ্যতমুখী কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং ১২টি আরব দেশের সঙ্গে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক তৈরি করেছে। বিশটি আরব দেশের সঙ্গে  ‘এক অঞ্চল এক পথ’প্রস্তাবের আওতায় সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর করেছে চীন।  আর ১৭টি দেশ বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এবং ১৫টি আরব দেশ এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। মোট ১৪টি আরব দেশ চীন-আরব ডেটা নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রস্তাবে অংশ নিয়েছে। আরব দেশগুলো দৃঢ়ভাবে একচীন নীতি  এবং চীনের নিজের কেন্দ্রীয় স্বার্থ রক্ষাকে সমর্থন করে। পাশাপাশি, চীনও আরব দেশসমূহকে তাদের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন করে। ফিলিস্তিনসহ নানা ইস্যুতে আরব দেশসমূহের পক্ষে রয়েছে চীন।

 

বিশ্ব আজ শতাব্দীর অদৃশ্য বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন ও আরবদের অভিন্ন  ঐতিহাসিক কর্তব্য আছে। আর তা হল: জাতির পুনরুদ্ধার ও দেশের উন্নয়ন বস্তবায়ন করা। নতুন পরিস্থিতিতে চীন ও আরব দেশগুলো ঐতিহ্যিক মৈত্রী উত্তাধিকার করে একত্রে নতুন যুগের মুখে চীন -আরব অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করবে। চীন ও আরব দেশসমূহ পরস্পরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করার চেতনায় অবিচল থাকবে এবং পরস্পরকে সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন দেবে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। খাদ্য, জ্বালানি, বিনিয়োগ, চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে। আর উচ্চ মান ও গভীরতর পারস্পরিক লাভ এবং জয়-জয় বাস্তবায়ন করবে। (শিশির/এনাম/রুবি)