এমন একদল লোক রয়েছেন যারা তাদের পেশাগত দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশ্বকে আরও উন্নত করতে নিজেদের ভূমিকা পালন করছেন। তারা হলেন স্বেচ্ছাসেবক। চীনা স্বেচ্ছাসেবকরা "উৎসর্গ, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সহায়তা এবং অগ্রগতির" স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব পোষণ করেন।
১৮ বছর বয়সী হ্যপেই জাংচিয়াখৌ’র মেয়ে ছেন গ্য আর বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি কাতারে অধ্যয়নরত আছেন এবং বিশ্বকাপের জন্য সেবামূলক কাজেও অংশ নিচ্ছেন। তিনি প্রধানত দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারীদের পথনির্দেশনার কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে এবং সবসময় হাসতে হয়। ছেন গ্য আর বলেন, "অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, 'আপনি কোথা থেকে এসেছেন'। আমি বলি, 'চীন থেকে এসেছি'। আমি খুব গর্ব বোধ করি। কারণ, আমি চীনা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিনিধিত্ব করছি। ভাবতে আমার খুব ভাল লাগে।"
স্বেচ্ছাসেবকরা আধুনিক সভ্যতা ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত, চীনে মোট স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ২১.৭ কোটিতে পৌঁছায়। এর অর্থ গড়ে ৭ জনের মধ্যে ১ জন স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়া, চীনে মোট ১১.৩ লাখ স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ৬২.১ লাখ স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্প নথিভুক্ত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবার সময় মোট ১৬১.৪ কোটি ঘন্টা পৌঁছেছে। মাথাপিছু স্বেচ্ছাসেবকদের পরিষেবা সময় ৭.৪৪ ঘন্টা।
মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবক। তারা নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা, চেকপয়েন্ট ডিউটি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণে সামাজিক কর্মীদের সহায়তা করেন; রাস্তা ও আবাসিক এলাকায় প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সহায়ক শক্তি। বেইজিং-এর থুংচৌ জেলার জুংছাং(中仓) স্ট্রিটের ইয়ুনহ্য(运河) বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে, ৫৮ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক বাই শিয়াং ক্য(白香阁) বিভিন্ন ভবনের মধ্যে যাতায়াত করেন, তালিকা অনুসারে একের পর এক বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাসিন্দাদের খাবার সরবরাহ করেন। তিনি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেন। মাঝে মাঝে সন্ধ্যা সাতটা বা রাত আটটাও বাজে। সারাদিন হাঁটার পর তাঁর পা শক্ত হয়ে যায়। বাই শিয়াং ক্য বলেন, "এখন যেহেতু আমি অবসরপ্রাপ্ত, সমাজের জন্য কিছু করার মাধ্যমে নিজের অবদান রাখতে চাই। অন্যদের সাহায্য করা খুবই অর্থপূর্ণ।"
চীনা নারী স্বেচ্ছাসেবীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তারা শহুরে ও গ্রামীণ আবাসিক কমিউনিটিতে বিশেষ সমস্যাযুক্ত নারী ও পরিবারগুলির ওপর দৃষ্টি রাখেন। তারা সমাজের বৃদ্ধ ও শিশু এবং অন্যান্য সদস্যের জন্য, বিশেষ বিষয় ব্যাখ্যা করেন, আইন জনপ্রিয়করণ কাজ করেন, স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন।
চীনা মহাকাশচারী লিউ ইয়াং একজন নারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আশা প্রকাশ করেন যে, আরও বেশি নারী স্বেচ্ছাসেবকদের দলে যোগ দেবেন এবং স্বপ্ন পূরণের সাহসী সংগ্রামী হবেন!"
বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশের মেয়ে তাহমিনা সুরতানা। তিনি বলেন, "চীনে একটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবা ব্যবস্থা রয়েছে এবং এখানে অনেক লোক রয়েছেন যারা সমাজ ও অন্যদের জন্য অবদান রাখতে ইচ্ছুক। বিশ্বের সব দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা বন্ধু। আসুন একসাথে স্বেচ্ছাসেবায় যোগদান করি, বিশ্বকে বোঝার জন্য একটি নতুন জালানা খুলি এবং আমাদের নিজের জীবনের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি।”
প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবক আগুনের ঝলকের মতো, এবং যখন তারা একত্রিত হয়, তারা হাজার হাজার তারা হয়ে ওঠে, যা উজ্জ্বলভাবে জ্বলে। প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবক একটি তুষারকণার মত, যা শীত কমায়; তারা তাদের স্বেচ্ছাসেবার আলোতে আলোকিত।
(ইয়াং/আলিম/ছাই)