আগামীকাল (বুধবার) জীববৈচিত্র কনভেনশন স্বাক্ষরকারীদের ১৫তম সম্মেলনের (কপ-১৫) দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিবেশন কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি দেশ হিসেবে চীন অধিবেশনের বাস্তব ও রাজনৈতিক বিষয়াদিতে নেতৃত্ব দেবে। প্রথম পর্যায়ের অধিবেশন ফলপ্রসূ হয়েছে। তাতে খুনমিং ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং প্রথম দফার জাতীয় পার্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে চীন।
একটি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে চীন পৃথিবীর অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি রক্ষায় নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে চীন সান চিয়াং ইউয়ান ও পাণ্ডাসহ ৫টি জাতীয় পার্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে এবং গঠন করে খুনমিং জীববৈচিত্র্য তহবিল।
চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান ছুই শু হং বলেছেন, খুনমিং ঘোষণা ২০২০ সালের পর বিশ্ব জীববৈচিত্র্য কাঠামোর রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছে। চীনের প্রথম ৫টি জাতীয় পার্ক খোলা হয়েছে। বেইজিং ও কুয়াংচৌতে চালু হয়েছে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান।
হাই নান রেইনফরেস্ট জাতীয় পার্ক হলো চীনের প্রথম সারির জাতীয় পার্কগুলোর অন্যতম। নয়টি শহর ও জেলায় মোট ৪২৬৯ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এ পার্ক।
হাইনানের গিবন হলো প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষিত বন্য প্রাণী এবং আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন তাকে "সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমানে সেখানে ৩৬টি গিবন রয়েছে। গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের শেষের দিকে হাইনানে গিবনের সংখ্যা ৭-৯টিতে নেমে গিয়েছিল; এমনকি প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেও সন্দেহ করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে হাই নান রেইনফরেস্ট জাতীয় পার্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। ফলে গিবন সংরক্ষণের উপর বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। গেল ৩ বছরে গাছপালা পুনরুদ্ধার, এয়ার করিডোর নির্মাণসহ নানাভাবে গিবনের জন্য আরও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা হয়। তা ছাড়া, জাতীয় পার্ক প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ করে আসছে। বন উজাড়কারীদের গিবন সংরক্ষকে পরিণত করা হয়। অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৩৫ সালে হাইনানে গিবনের সংখ্যা বেড়ে ৬০-৭০টিতে দাঁড়াবে।
কপ-১৫-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিবেশনের মূল লক্ষ্য হবে ২০২০ সালের পর বিশ্ব জীববৈচিত্র্য কাঠামো তৈরি করা এবং মানুষ ও প্রকতৃতির সহাবস্থান বাস্তবায়ন করা। সভাপতি দেশ হিসেবে চীনও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের নানা অনুশীলনের মাধ্যমে পৃথিবীর অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের দৃঢ়তা প্রমাণ করেছে।
প্রকৃতির পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ রেড লাইনের প্রয়োগ ও সংরক্ষণের নিশ্চিয়তা প্রদান করে। সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে জাতীয় কৌশলের পর্যায়ে উন্নীত করেছে এবং ধারাবাহিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ রেড লাইন গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। চীন যথাক্রমে কয়েক ডজন দলিল প্রকাশ করে রেড লাইনের মাধ্যমে কোন কোন উন্নয়ন বা নির্মাণকে নিষিদ্ধ করেছে।
বর্তমানে চীনের ভূভাগের মোট ৩০ শতাংশ রেড লাইন সংরক্ষণ অঞ্চলের আওতাভুক্ত রয়েছে। উপাত্ত অনুযায়ী, চীনে রেড লাইন সংরক্ষণের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত হয়েছে এবং ৭৪ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ ও প্রাণী সুরক্ষা পেয়েছে।
প্রতিবছর বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ গ্রীনহাউস গ্যাস শোষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বিশ্বের অর্ধেক জিডিপি প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে। জীববৈচিত্র রক্ষা মানে মানব জাতির কল্যাণ রক্ষা। আজকাল বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে এবং তা মানব জাতির জন্য অভিন্ন চ্যালেঞ্জ। চীন বাস্তব কাজের মাধ্যমে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য প্রশাসনে চীনের বুদ্ধি ও পরিকল্পনা প্রদান করছে। আসন্ন কপ-১৫-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিবেশনে সভাপতি দেশ হিসেবে নানা পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২০ সালের পর বিশ্ব জীববৈচিত্র্য কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টা চালাবে চীন। পাশাপাশি, একত্রে পৃথিবীর অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন এবং বিশ্ব জীববৈচিত্র্য প্রশাসনের নতুন যাত্রায় সহায়তা করবে বেইজিং। (শিশির/এনাম/রুবি)