গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে মার্কিন নাগরিক ব্রায়ান লিন্ডেন লেখাপড়ার জন্য চীনে আসেন। সেই থেকে গত ৩০ বছর ধরে তিনি চীনে বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি চীনের গ্রামে থাকেন। তিনি চীনা গ্রামগুলোর বিরাট পরিবর্তন অনুভব করেন। তিনি চীনা গ্রামগুলোর পরিবর্তনের মাধ্যমে চীনের উন্নয়নের পদ্ধতি বুঝতে পেরেছেন। চলুন, আমরা ব্রায়ান লিন্ডেনের গল্প দেখবো।
ব্রায়ান লিন্ডেন হলেন ইউননান প্রদেশের তালি’র ‘সিলিন ইউয়ান’ হোটেলের মালিক। তাঁর একটি চীনা নাম আছে: লিনতেং। তাঁর হোটেল ‘সিলিন ইউয়ান’ আগে দীর্ঘ ইতিহাসসহ পাই জাতির বাসিন্দাদের একটি উঠান ছিল। উঠানটি অবস্থিত তালি’র সিচৌ পাচীন থানায়। থানার এক কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত এরহাই হ্রদ। ৫ ও ৬ কিলোমিটারেরও কম দূরে পাহাড়। এসব মিলে যেন একটি সুন্দর গ্রামীণ ছবি। এটি লিনতেংয়ের চোখে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামাঞ্চল। তিনি বলেন, তিনি শতাধিক দেশের শহর ও গ্রামে গিয়েছেন। তবে, তাঁর চোখে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো চীনের গ্রামগুলো।
২০০৪ সালে লিনতেং যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ত্যাগ করেন ও গৃহবাড়ি বিক্রয় করে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সিচৌ প্রাচীন থানায় স্থানান্তরিত হন। লিনতেংয়ের চোখে চীনের গ্রামে সংস্কৃতি, দৃশ্যাবলী, আতশবাজি ও মানুষের স্পর্শ রয়েছে। প্রতিদিন ভোরে তিনি বাজারে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে চ্যাট করেন। তিনি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত, পরিশ্রমী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে ভালবাবেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে, গ্রামগুলোর পরিবর্তনে তাঁদের জন্য সৃষ্ট লাভ ও সুখ অনুভব করেন। লিনতেং মনে করেন, চীনের গ্রামের মানুষের ইতিবাচক ও উদ্যোগী মনোভাব আছে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ইউননান প্রদেশের তালি পাই জাতির স্বায়ত্তশাসিত বান্নারের ১১টি দরিদ্র জেলা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। লিনতেং বলেন, এটি একটি বিরাট পরিকল্পনার ফল। তিনি মনে করেন, দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনার মাধ্যমে চীনা গ্রামগুলোর অবকাঠামো আরও উন্নত হয়েছে এবং গ্রামবাসীদের শিক্ষার মান বেড়েছে।
লিনতেং বলেন, তিনি পৌর সরকারকে সম্মান করেন। স্থানীয় সরকার এরহাই হ্রদ সংরক্ষণ করেছে, খুনমিং থেকে তাইলি হাইস্পিড রেলওয়েই নির্মাণ করেছে, এবং হাসপাতাল ও বিদ্যালয় গড়ে তুলেছে। লিনতেংয়ের মনে হয়, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা অন্যান্য দেশের জন্য মূল্যবান।
লিনতেং বলেন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ভিত্তি, দৃঢ় উন্নয়ন ও উন্মুক্ত নীতি এবং প্রত্যেক চীনা নাগরিকের পরিবার ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ চীনের উন্নয়নের কারণ। তিনি বলেন, চীনে প্রত্যেক মানুষ কেবল নিজের জন্য নয়, বরং দেশ ও দশের জন্য পরিশ্রম করেন। প্রত্যেকেরই তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ রয়েছে এবং এই দায়িত্ববোধটি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের বাইরে। এটি প্রশংসার যোগ্য। তিনি মনে করেন, এটি একটি টেকসই সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি। তাদের সন্তানেরা লেখাপড়ার পর চীনের স্বার্থে ও গ্রামগুলোর ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য তাদের জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তার সুফল তারা ভাগ করতে চান জন্মভূমির সাথে।
বহু বছর ধরে লিনতেং সারা বিশ্ব থেকে কয়েক লাখ ভ্রমণকারীকে নিয়ে সিচৌ থানার গ্রামগুলো ভ্রমণ করেছেন। তাঁরা খুব কাছ থেকে চীনকে অনুভব করেছেন। তিনি চীনে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন এবং বিদেশী সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। একটি নিবন্ধে তিনি বিখ্যাত পশ্চিমা দার্শনিক ইসায়া বার্লিনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছিলেন, আমাদের চীনকে একক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। যদি আমরা হেজহগের মতো অত্যধিক আত্মবিশ্বাসী ও একগুঁয়ে থাকি, তাহলে আমরা চীনা অলৌকিক ঘটনার পিছনের গল্প পুরোপুরি বুঝতে পারব না। পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ মার্কিন মিডিয়ামের মধ্য দিয়ে চীনকে জেনেছেন। সেজন্য তাঁরা সত্য চীনকে জানেন না। আমি আশা করি, তাঁরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীনকে বুঝতে পারবেন অথবা চীনে এসে সত্য চীনকে বুঝবেন।’
৬০ বছর বয়সী লিনতেং এখনো অনেক ইচ্ছা পূরণ করতে চান। তিনি ভালভাবে হোটেলের ব্যবসা করতে চান। তিনি নিজের গল্প ও অভিজ্ঞতা আরো বেশি মানুষকে বলতে চান। লিনতেং বলেন, সারা জীবন চীনে থাকবেন এবং নিজের চোখে চীনের আরো উন্নয়ন দেখতে চান। প্রেমা, সিএমজি, বেইজিং থেকে।
(ছাই/আলিম)