ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল চীনের ঐতিহ্যবাহী চা তৈরীর কৌশল ও সংশ্লিষ্ট রীতি
2022-12-02 21:40:43

গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় চীনের ঐতিহ্যবাহী চা তৈরীর কৌশল ও সংশ্লিষ্ট রীতিনীতিকে মানব জাতির অবৈষয়িক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ ঐতিহ্যের আওতায় রয়েছে চীনের ১৫টি প্রদেশ ও অঞ্চলের ৪৪টি চায়ের আইটেম। এ পর্যন্ত মানব জাতির অবৈষয়িক ঐতিহ্যের তালিকায় চীনের মোট ৪৩টি ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। ফলে সংখ্যার দিক থেকে চীনের অবস্থান সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে।

 

চীনের সংস্কৃতির মধ্যে চা-সংস্কৃতি বহু পুরোনো। প্রায় সব চীনা চা খায়। আর শুনলাম বাংলা ভাষায় ‘চা’ শব্দটি চীনা ভাষা থেকে এসেছে। চীনা ভাষায় চাকে আমরা ‘ছা’ বলি।  একটা জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩৭ সালে চীনের রাজা শেন নং চা খাওয়া আবিষ্কার করেন। তখন তিনি একটি চা গাছের পাশে বসেছিলেন। হঠাত্ এক ঝটকা বাতাসে কয়েকটি চায়ের পাতা তার গরম পানির মধ্যে পড়ে যায়। এভাবে তিনি আবিষ্কার করেন যে চায়ের পাতা গরম পানির মধ্যে দিয়ে খেতে বেশ মজা। তখন থেকে চীনাদের চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে।

চীনের চাকে তাদের রং অনুযায়ী ছয়টা প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো সবুজ চা, সাদা চা, হলুদ চা, লাল চা, বাদামী চা এবং কালো চা। এর বাইরে যদি আরেক প্রকার চাকে যোগ করতে চান তাহলে সেটা হলো ফুলের চা। এ কয়েকটি প্রধান প্রকারের অধীনে প্রায় ২০০০ রকমের চা আছে।

  

চায়ের অনেক গুণ আছে। চা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে প্রতিদিন লিকার চা অথবা গ্রিন টি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। চা দেহে ও মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে। পরোক্ষভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সামগ্রিক হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। প্রতিদিন লিকার চা অথবা গ্রিন টি পানের অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। চায়ে থাকা ট্যানিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান হজমশক্তি বাড়ায়। চা চুলের পুষ্টি জোগায়, যার ফলে প্রতিদিন চা পানে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চা ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে। ত্বককে মসৃণ, সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। চা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যার সুপ্রভাব সারা দেহে পড়ে।

এখনকার জীবনে অনেক ধরনের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি আবার অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে প্রায়ই চাপের মধ্যে থাকতে হয়। চা বানানোর সময় মনকে শান্ত রাখতে হয়। শান্ত ও সুখী মন নিয়ে চা বানালে চায়ের মধ্যেও ইতিবাচক শক্তি আসে! এ রকম চা খেলে মানুষ কেবল স্বাদই পায় না,বরং এর ইতিবাচক শক্তিও শরীরের উপলব্ধি করে।

চীনের চা সিল্ক রোড, চা ও ঘোড়ার পথসহ নানা পদ্ধতিতে দেশের সীমানা অতিক্রম করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্ববাসীর মন কেড়েছে। বর্তমানে চীনা চা বিশ্ববাসীর যোগাযোগ ও সংযুক্তি এবং বিশ্ব সভ্যতার সঙ্গে চীনা সভ্যতার বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ সেতু বন্ধনে পরিণত হয়েছে। এটি মানব সভ্যতার অভিন্ন সম্পদও বটে।

(রুবি/এনাম)