নভেম্বর ২৯: গতকাল (সোমবার) বিকেলে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ের গণমহাভবনে মঙ্গোলিয়ার সফররত প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠকে সি বলেন, ‘আমরা দুই মাস পর নির্ধারিত সময়ে আবার দেখা করেছি, যা সম্পূর্ণভাবে চীন-মঙ্গোলিয়া সম্পর্কের উচ্চস্তরের প্রতিফলন ঘটায়। চীন ও মঙ্গোলিয়া একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। চীন ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা দু’দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থে জরুরি। চীন বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তির ধারণা এবং প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার কূটনীতি মেনে চলে।’
চীন ও মঙ্গোলিয়া পারস্পরিক আস্থা ও স্বার্থের একীকরণকে গুরুত্ব দেয়। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন,
‘চীন ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব উন্নয়নে একটি ভাল গতি বজায় রয়েছে। দু’পক্ষ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য হাতে হাত মিলিয়েছে, একে অপরকে সাহায্য করেছে, এবং ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। দু’দেশের সম্পর্ক রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক পরিবেশে, যৌথভাবে অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার ভিত্তিতে, চীন ও মঙ্গোলিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চায় বেইজিং।
বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট সি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিক অবস্থা এবং চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিপিসি বিভিন্ন জাতির জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের পথে, চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে কেবল যে চীন সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে তা নয়, বরং বিশ্বের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান ও স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং একে অপরের উন্নয়নপথকে সম্মান করার ভিত্তিতে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে চায় বেইজিং। দু’পক্ষের উচিত বিভিন্ন স্তরে সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং দেশ পরিচালনা বিষয়ে একে অপরের কাছ থেকে শেখা। দু’দেশের উচিত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাব ও ‘তৃণভূমি সড়ক’ লক্ষ্যমাত্রা, বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রস্তাব ও মঙ্গোলিয়ার ‘নতুন পুনরুদ্ধার নীতি’, চীনের ‘দুই-পদক্ষেপ’ উন্নয়ন-কৌশল ও মঙ্গোলিয়ার ‘সম্ভাবনা ২০৫০’ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ননীতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই তিনটি প্রধান বিষয় চীন ও মঙ্গোলিয়ার সম্পর্কের উন্নয়নে প্রবল চালিকাশক্তি যোগাবে। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্য, জ্বালানি ও খনি এবং আন্তঃসংযোগ ও আন্তঃযোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা বাড়াতে চীন ইচ্ছুক। মঙ্গোলীয় পক্ষের ‘এক বিলিয়ন গাছ লাগানোর’ পরিকল্পনার প্রশংসা করে চীন। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে মরুকরণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সহযোগিতাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করতে চীন ইচ্ছুক। দু’পক্ষকে আইন প্রণয়ন সংস্থা, সরকার, রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, মিডিয়া, যুব ও মানবিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। মঙ্গোলীয়ান যুব ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন সমর্থন দিয়ে যেতে ইচ্ছুক বলেও প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন।
এ সময় মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সিপিসি’র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের সফল আয়োজনের জন্য আমি আরেকবার অভিনন্দন জানাই। সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে অভিনন্দন জানাই। সিপিসি’র নেতৃত্বে চীন সফলভাবে প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য অর্জন করেছে। এর আনন্দ বোধ করে মঙ্গোলিয়া। মঙ্গোলিয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, সিপিসির’ সাধারণ সম্পাদক সি ও সিপিসি অব্যাহতভাবে চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে সময়মতো সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ে তুলতে পারবে।’
দু’পক্ষ ‘নতুন সময়পর্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও মঙ্গোলিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়াসংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি’-ও প্রকাশ করে। বৈঠকের পর, আর্থ-বাণিজ্যিক, পুঁজি, শুল্ক, মেরুকরণ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দু’প্রেসিডেন্ট। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)