স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে
2022-11-29 11:54:38

গত শনিবার চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশনের অধীনে চায়না রোড এ্যান্ড ব্রিজ কোর্পারেশনের নির্মাণ করা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম যোগাযোগ পথের (টানেল) একটি সুড়ঙ্গের (টিউব) নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে গিয়ে শেষ হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সবসময় আশা করতেন চট্টগ্রামের মানুষের যোগাযোগের অবস্থা উন্নত করা যায়। এমন স্বপ্ন পূরণের পথ হল চীন ও বাংলাদেশের নিরলস চেষ্টা। যা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর আরেকটি মাইলফলক।

 

দক্ষিণ এশিয়ায় পানির নিচ দিয়ে নির্মাণ করা এটাই প্রথম টানেল। এর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩ কিলোমিটার। পরিকল্পিত গতি ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার। প্রায় ৩৮০ একর  জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন এই টানেলের প্রবেশ পথে আছে বৃষ্টি থেকে সুরক্ষা পাবার শেল্টার। পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা, দুই পাড়ে চলাচলের জন্য আছে ২টি করে মোট ৪টি লেন। আছে চমৎকার ডিজাইনের টোলপ্লাজা ও সার্ভিস এরিয়া বাংলো।

প্রকল্পটি চীন আমদানি-রপ্তানি ব্যাংকের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে। এতে চীনের মানদণ্ডে ডিজাইন করে, চীনের সরঞ্জামে নির্মাণ করে এবং চীনের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় চলে। তা বিদেশে চীনের অবকাঠামো নির্মাণের একটি উজ্জ্বল নেমকার্ড হবে। প্রকল্পটি ‘বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার’ অর্থনৈতিক করিডোর এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে চট্টগ্রামের যোগাযোগ-ব্যবস্থা উন্নত করবে, আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়ন এগিয়ে নেবে, সেই সঙ্গে আশেপাশের দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকায়ন জোরদার হবে।

 

শনিবার সকালে এই নির্মাণকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে এটাই প্রথম টানেল। এটি একটি বিস্ময়। এটি আমাদের জন্য বিরাট কাজ। তাই সরাসরি দেখার আগ্রহ ছিল। দেখে আসতে পারলে ভালো হতো। এখন মন পড়ে আছে চট্টগ্রামের টানেলে।’টানেলের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি একটি বিরাট অর্জন। টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দুই প্রান্ত সমানভাবে উন্নত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন ও নগরায়ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। টানেলের মাধ্যমে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে উঠবে।

টানেলের কাজ শেষ করার এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীন-বাংলাদেশ নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার। আর এই টানেল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলেও আশা করেন লি জিমিং।

 

অবকাঠামো নির্মাণ হল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করা। আর অবকাঠামো হল যোগাযোগের ভিত্তি। তবে, অনেক দেশের কাছে দুর্বল অবকাঠামো উন্নয়নের বাধা।

বাস্তবতা বিবেচনা করলে, চীন ও ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশ অবকাঠামো নিয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে সড়ক, বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুত্ স্টেশন ইত্যাদি। যা সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, জনগণের জীবিকা উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছে।

যেমন, এই টানেল প্রকল্প। দীর্ঘকাল ধরে যোগাযোগ সমস্যা হল চট্টগ্রাম উন্নয়নের এক সমস্যা। এর আগে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের শুধু লঞ্চ বা ফেরি চলাচল করত। সময় লাগত ৪ ঘন্টা। অনেক অসুবিধা হয়। যোগাযোগের অবস্থা গুরুতরভাবে চট্টগ্রাম এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাধা দেয়।

এখন এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ধাপে ধাপে পূরণ হচ্ছে, আর এই পথে চীন সবসময় পাশে আছে। জানা গেছে, প্রকল্প চালু হওয়ার পর কর্ণিফুলী নদী পার হতে মাত্র ৪ মিনিট সময় লাগে। ভবিষ্যতে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করবে এই টানেল। সেই সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব দিকে শহরাঞ্চলকে যুক্ত করে সেখানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এটি। ওই এলাকায় যে শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার কাজও শুরু হবে জোরেসোরে। অন্যদিকে পশ্চিম দিকে চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে সাগর ও বিমান বন্দরেরও দূরত্বও কমে আসবে। কম খরচে ভ্রমণ আরো সহজ হবে। আর দুই বন্দর থেকেই পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

 

এমনটিই বলেছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি বলেছিলেন, প্রাচীনকাল থেকেই চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রী রয়েছে। রেশমপথ দু’দেশের হাজার বছরের মৈত্রীর সাক্ষী। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নকৌশল সংযোগ করে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণকাজ জোরদার করবে, দু’দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেবে।