কায়িক শ্রম, অভিজ্ঞতা, ও গুণগত মানসম্পন্ন শ্রমিক প্রসঙ্গ
2022-11-28 16:34:16

কায়িক শ্রমের শিক্ষা চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ব্যবস্থা দেশের উন্নয়ন ও নির্মাণকাজের জন্য উপযোগী ও শ্রেষ্ঠ শ্রমিক গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। এ ব্যবস্থা শ্রমিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, শ্রমের মূল্য দিতে শেখায়, এবং কাজের দক্ষতা বাড়ায়। গত ১০ বছরে চীনের সরকার শিক্ষার ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশেষ করে, কায়িক শ্রমের শিক্ষার ক্ষেত্রে নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা, শরীরচর্চা, শিল্পকলাসহ বিভিন্ন দিকের সার্বিক উন্নয়নে মানদন্ড নির্ধারিত হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য, নতুন যুগে চীনের জন্য শ্রেষ্ঠ শ্রমশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা, শ্রমিকদের জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গুণগত মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, এবং এর মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।

শ্রমিকদের কায়িক শ্রমের মূল্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা থাকতে হবে

আমাদের ছোটবেলা থেকে শিক্ষকদের বলতে শুনেছি, কায়িক শ্রম আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। যারা ভালো করে কাজ করতে পারেন, তাদের কায়িক শ্রম বা কাজের সম্মান করা উচিত। তাই চীনের বিভিন্ন খাতে ‘শ্রেষ্ঠ শ্রমিক পুরস্কার’ বা ‘সেরা কর্মী পুরস্কার’ বিতরণ করা হয়।

নতুন যুগে যে-কোনো কাজে আমাদের পাশে আদর্শ ব্যক্তিদের প্রয়োজন। সিপিসি’র ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে সার্বিক সমাজতান্ত্রিক ও আধুনিক শক্তিশালী দেশ গঠনের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে, যা চীনা জনগণের যৌথ প্রয়াস ও পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে অর্জন করতে হবে। নতুন যাত্রায় চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণের মেধা, দক্ষতা, অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এ পর্যায়ে কায়িক শ্রমের মূল্য সম্পর্কে প্রত্যেক শ্রমিকের সঠিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি।

চীনের প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে, কায়িক শ্রম সম্পত্তি সৃষ্টির প্রক্রিয়া। এটি মানবজাতির বিশেষ মৌলিক সামাজিক তত্পরতাও বটে। তাই, বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকে কায়িক শ্রমের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা দেওয়া জরুরি। শ্রমসম্পর্কিত শিক্ষা কেবল চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভিত্তি নয়, বরং চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণকারীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে।

নতুন দফার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপ্লব ও শিল্পগত সংস্কার মানবজাতির শ্রমের পদ্ধতি ও আকার পরিবর্তন করছে। সৃজনশীলতা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন খাতের জ্ঞান ও তথ্যাদি এখন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

শ্রমসংশ্লিষ্ট শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের চাহিদা বিবেচনা করতে হবে। নতুন শিল্প, নতুন আকার ও প্রযুক্তির চাহিদা অনুসারে সাধারণ শ্রম, উত্পাদন ও পরিষেবাসহ শ্রমের বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করতে হবে, যাতে বিভিন্ন শ্রমশিক্ষার পদ্ধতি সমৃদ্ধ করা যায়।

শ্রমের শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণের সংমিশ্রণে শ্রমশিক্ষার মান উন্নত করা সম্ভব। সমাজের বিভিন্ন বাস্তব অনুশীলন ও চর্চায় শিক্ষার্থীরাও নতুন জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে, অন্যদের জন্য পরিষেবা দিতে পারে। বিশেষ করে, বিভিন্ন দাতব্য শ্রম আর স্বেচ্ছাসেবক পরিষেবায় শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ব ও চেতনা জোরদার করা যায়। এভাবে তারা অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নিজের আবাসিক কমিউনিটিতে সেবা দিতে পারে।

আরও উন্মুক্ত ও বাস্তব শ্রমশিক্ষার অনুশীলনব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে, আরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এভাবে বাস্তব জীবনে শ্রমের চাহিদা আর ক্লাসের পড়াশোনার বিষয় সংযুক্ত করা যায়। কায়িক শ্রম আর লেখাপড়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন। শ্রমশিক্ষা এবং নৈতিকতার চর্চাও পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া উচিত। এভাবে শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে কায়িক শ্রমের কাজ করতে পারে। কেবল শ্রমের সর্বশেষ দক্ষতা অর্জন করা নয়, বরং স্বাধীন ও বুদ্ধিমান জীবন কাটানোর সামর্থ্যও তাদের বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এই শিক্ষা নিয়ে গড়ে ওঠা ব্যক্তি হবেন আধুনিক সমাজ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দক্ষ ও নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি।

শ্রমশিক্ষা একটি জটিল বিষয়। তাই গোটা সমাজের যৌথ প্রয়াস দরকার। সর্বপ্রথমে শ্রমের শিক্ষার প্রশ্নে পরিবারের ভূমিকা সুসংবদ্ধ করতে হবে। কারণ, পরিবার শ্রমশিক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। পিতামাতা বাচ্চার কায়িক শ্রমের দক্ষতা গঠনে স্পষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাঁরা স্কুলের সংশ্লিষ্ট চাহিদা অনুসারে, জীবনযাপনে নিজের বাচ্চার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। বলা যায়, পিতামাতা বাচ্চাদের জন্য আয়নার মতো। বাবা-মা কী করেন, বাচ্চারা তা শিখবে। তাই বাবা-মাকে আন্তরিকতার সাথে কায়িক শ্রমের কাজ করতে হবে, ঘরের কাজ করার সময় বাচ্চাদের কিছু দায়িত্ব বা কাজ দিতে হবে, এভাবে ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের কায়িক শ্রমের অভ্যাস তৈরি হবে; তাঁরা শ্রমের মর্যাদা দিতে শিখবে এবং দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে উঠবে।

সামাজিক শ্রমশিক্ষা পদ্ধতি আরও সম্প্রসারিত হতে হবে। সমাজের বিভিন্ন খাতে শ্রমশিক্ষার জন্য সমর্থক ভুমিকা পালন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্য ইন্টার্নশিপ বা চর্চার সুযোগ দেওয়া যায়। সামাজিক শিক্ষা ও স্কুলের শিক্ষার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উপযুক্ত শ্রমিক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, ভালো পড়াশোনার পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর এসব মিলিয়ে সৃষ্টি হতে পারে একটি চমত্কার শ্রমের পরিবেশ।

শিক্ষার্থীদের চাহিদাকেও সম্মান দিতে হবে। বিভিন্ন স্কুল শ্রমশিক্ষার প্রধান শক্তি, তাই শ্রম কোর্স চালু করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মেজরের অনুশীলন ও ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।  ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শ্রম কোর্সের পদ্ধতি সমন্বয় করতে হবে। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যবোধ ও চেতনা গড়ে উঠবে। এই চেতনা শ্রমশিক্ষার কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায় আজকের বিদ্যাবার্তা এখানে শেষ হয়ে এলো।আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে মিস হলে আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে ভুলবেন না।আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা Bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আগামী সপ্তাহের একই দিনের একই সময় আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)