২০২২ সালে উৎপাদন কম হলেও বাংলাদেশে চালের সংকট নেই। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, দেশে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৪ লাখ টন চাল বেশি আছে। পাশাপাশি, ইন্দোনেশিয়াকে টপকে আবারও বিশ্বের তৃতীয় চাল উৎপাদনকারী দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক পূর্বাভাসেও বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বেড়ে হবে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২২ সালে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে প্রায় ২৫ লাখ টন কম হতে পারে। চলতি বছর বোরো ফসল উৎপাদন কম হয়েছে; পাশাপাশি আমন উৎপাদনের সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৫ লাখ টনের মতো ধান উৎপাদন কম হতে পারে বাংলাদেশে। তবে উৎপাদন কমলেও দেশে চালের সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৪ লাখ টন চাল বেশি আছে। এই চাল রয়েছে সরকারি গুদাম, বড় চালকলমালিক ও কৃষক, ফড়িয়া, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বা ব্রি’র এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে চালের মূল্যবৃদ্ধির একটি সমীক্ষা: কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ের অবস্থা’ শীর্ষক ওই গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য ও ব্রির নিজস্ব জরিপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তবে, যোগান ঠিক থাকলেও বাজারে চালের দাম কেন কমছে না? বর্তমানে দেশে মোটা চালের কেজি ৪৬ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি ৫৪ থেকে ৫৮, আর সরু ৬২ থেকে ৭২ টাকা।
গবেষক দলটি বলছে, হাওরে হঠাৎ বন্যায় ছয় থেকে আট লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়। এর পর আমন মৌসুমে ভরা বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। ফলে আমনের উৎপাদন কমে যায়, সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়েও আমনের ক্ষতি হয়।
গবেষণার তথ্যমতে, ২০২২ সালে আমন মৌসুমে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়ে ২৪ টাকা ৩১ পয়সা, আর তা বিক্রি করে পান ২৮ টাকা ৭৪ পয়সা। বোরোতে ২৬ টাকা ১০ পয়সা খরচ আর দাম পান ৩০ টাকা ৮০ পয়সা।
এদিকে গত জুন মাসের এক খবরে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়াকে টপকে আবারও বিশ্বের তৃতীয় চাল উৎপাদনকারী দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বেড়ে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টন হবে। এফএও থেকে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ফুড আউটলুক-জুন ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৫ জুলাই) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টন চাল উৎপাদন করে। ওই বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে।
এ নিয়ে টানা চার বছর বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। চলতি বছর উৎপাদনে শীর্ষে থাকবে চীন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে আবারও তৃতীয় স্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। এ বছর তাদের মোট উৎপাদন দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৫২ লাখ টনে দাঁড়াবে। চীন ১৪ কোটি ৬১ লাখ ও ভারত ১২ কোটি ৭৪ লাখ টন চাল উৎপাদন করে এক ও দুই নম্বর অবস্থানে থাকবে বলে প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় চালের উৎপাদন বাড়বে।
তবে, দেশে কখনই চালের সংকট দেখা দেবে না বলে মনে করছেন কৃষি খাতের নীতিনির্ধারকরা। চাল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে এখন তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে উৎপাদনকে আরো বেশি বেগবান করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যদিও দেশের কৃষি উৎপাদন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে এর ভিন্ন চিত্র। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য চালে আমদানিনির্ভর থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সন্নিবেশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ পাঁচ বছরে চালের ভোগ ও ব্যবহার হয়েছে উৎপাদনের চেয়ে বেশি। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং চালের জন্য আমদানিনির্ভরতা দিনে দিনে বেড়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এজন্য ৩২৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়ে চাল আমদানির অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঋণপত্র খুলেও চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার টন। আর সরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার টন।