দেহঘড়ি পর্ব-৯৬
2022-11-25 20:28:17

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’, খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং মৌসুমী স্বাস্থ্য পরামর্শ।

 

#ভালো_থাকার_আছে_উপায়

যেভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াবেন এই শীতে

এক অন্যরকম আবেশ নিয়ে হাজির হয় শীতকাল। প্রকৃতির মতো শরীরেও ভর করে আড়ষ্ট। যেন ইচ্ছে করে লেপ মুড়ি দিয়ে সারাদিন ঘরে থাকি। এসময় অনেকেই কমিয়ে দেন পানি খাওয়ার অভ্যেস। পর্যাপ্ত পানি পান না করায় বদহজম থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দেখা দেয় অনেকের। যাদের সারা বছর সমস্যা হয় না, তাদেরও শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শীতকালের এই কষ্ট দূর করতে কিছু খাবারের ওপর ভরসা রাখতে পারেন আপনি। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে- কমলা, কিশমিশ, খেজুর ও আমলকি। 

আমরা সবাই জানি, পেট পরিষ্কার হয় না হওয়ার বিষয়টিই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে সেখান থেকে আরও বড় জটিলতার আশঙ্কা করে থাকেন চিকিৎসকরা।

ঠিক করে পেট পরিষ্কার না হওয়া, পেটে এবং কোমরে ব্যথা, অরুচি— এগুলোই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু উপসর্গ। এই সমস্যা দেখা দিলে একদম অবহেলা করা যাবে না।

এবার চলুন শুনে আসি, সমস্যা এড়াতে দারুণ সব সমাধানের গল্প:

দিনের শুরুতেই কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নেন লেবু । এরপর সেটা খেয়ে, কিছুটা সময় নিয়ে হাঁটতে বের হোন। বাড়ির বাইরে যেতে ইচ্ছে না হলে ঘরের মধ্যেই খানিকটা হেঁটে নিতে পারেন। এড়াছা অফিস কিংবা কোন কাজে বের হলে প্রথমেই রিকশা না ডেকে কিছুদূর পথ হাঁটতে পারেন। এতে শরীরের অঙ্গগুলো হয়ে উঠবে সক্রিয় আর আপনি মুক্তি পাবেন কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল বিষয় থেকেও। নিয়মিত খাওয়া দরকার পাকা পেঁপে। চাইলে কাঁচা পেপেও ইচ্ছেমতো রেপিসিতে খেতে পারেন। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ডাল খেতে পারেন আপনি।

এই সমস্যা থেকে আসলেই যদি মুক্তি পেতে চান, তবে আপনার জন্য কার্যকর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।

১. খাওয়ার পরে গোসল না করা:

কারণ, খাওয়ার সময় শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, তাপমাত্রাও থাকে উর্ধ্বমুখী। এর ফলে হজম হয় দ্রুত। আসলে খেয়ে ওঠার ঠিক পরের মুহুর্তে শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। ফলে দেখা দেয় হজমের সমস্যা।

২. দেরি করে দুপুরের খাবার না খাওয়া:

সকালের খাবারের পর দুপুরের খাবার দেরিতে খেলে অনেক ক্ষণ ধরে পেট খালি থাকার ফলে গ্যাস জমতে শুরু করে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর খাবার পেটে পৌঁছাতেই শুরু হয় বদহজম।

৩. খাওয়ার পরপরই ঘুমানোর অভ্যেস বাদ দিতে হবে:

কারণ আগেই বলেছি খাওয়ার সময় শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে বলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং হজম দ্রুত হতে থাকে। তাই খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পড়লে দেহের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং ঠিক মতো হজম হয় না। আর এতেই দেখা দেয় বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা।

এ কয়েকটি নিয়ম কয়েকদিন মেনে চললেই, আশা করা যায় এই শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব একটা ভুগতে হবে না আপনাকে। - অভি/রহমান

 

#কী_খাবো_কী_খাব_না

কুসুম গরম পানির যত উপকারিতা

পানির অপর নাম জীবন। সুস্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা আমরা সবাই জানি। চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ শরীরের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান খুব দরকারি। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা, শরীরকে সচল রাখা, ত্বক ও চুলকে ঠিক রাখা, কিডনির যত্ন নেওয়ার জন্য পানি অপরিহার্য উপাদান।

সাধারণত আমরা স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ঠাণ্ডা পানি পান করে থাকি। তবে গরম পানি পান করা যে আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা আমরা অনেকেই জানি না। ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে উষ্ণ পানি পানে রয়েছে নানা উপকারিতা। চীন, জাপানসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষ নিয়মিত গরম পানি পান করে। চীনা মানুষেরাতো স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ঠাণ্ডা পানি কখনো পানই করে না; শীত-গ্রীষ্ম থেকে শুরু করে সকল মৌসুমেই তারা উষ্ণ পানি পান করে।

জানিয়ে দিচ্ছি উষ্ণ পানি পানের কী কী উপকারিতা রয়েছে:

১. শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমায় উষ্ণ পানি। সারাদিন কাজ করে আমাদের যে ক্লান্তিবোধ আসে, তা দূর হয় উষ্ণ পানি পানে।

২. উষ্ণ পানি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে না।

৩. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমায় গরম পানি পান। গরম পানি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগই থাকে না।

৪. খুশকি কমাতে উষ্ণ পানি বেশ কার্যকর। সারাদিন ধরে গরম পানি পান করলে নানা কারণে মাথার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসে। ফলে খুশকি দ্রুত কমে যায়।

৫. পিরিয়ডের সময় মেনস্ট্রয়াল ক্র্যাম্প কমাতে গরম পানি পানের কোনও বিকল্প নেই। গরম পানি পান পেটের পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যথা কমতে সময় লাগে না।

৬. গরম পানি পানে ত্বক টান টান হয়ে ওঠে এবং বলিরেখাও হ্রাস পায়। ফলে ত্বকে বয়সের কোনো ছাপ পড়ে না।

৭. উষ্ণ পানি পান চুলের কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে চুল পড়া কমে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

৮. উষ্ণ পানি খাওয়ামাত্র শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করায় ঘামের মাধ্যমে টক্সিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে শরীর সহজেই বিষমুক্ত হয়।

৯. একলাসিয়া শরীরে খাবারকে আটকে রাখার প্রবণতা বাড়ায়। কিন্তু গরম পানি একলাসিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

কিভাবে গরম পানি পান করবেন…

সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ২ গ্লাস গরম পানি পান করতে হবে। প্রথম দিকে একসাথে ২ গ্লাস পানি পান করতে অসুবিধা হতে পারে আপনার। সেক্ষেত্রে প্রথম এক গ্লাস দিয়ে শুরু করুন এবং তার একটু একটু বাড়িয়ে এক সময় দুই গ্লাস খাওয়া শুরু করুন। এর পর দিতে যতবার আপনার পানি পানের প্রয়োজন হয়, উষ্ণ পানি পান করুন। রাতে শোবার আগে আরেক গ্লাস উষ্ণ পানি পান করুন। - অভি/রহমান

 

# আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি দাঁত ও মাড়ির সমস্যা নিয়ে। এমন কোনও মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি কখনও না কখনও দাঁতের সমস্যায় ভোগেননি। দাঁতের সুস্বাস্থ্য প্রয়োজন শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়; শরীরের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্যও এটা প্রয়োজনীয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দাঁত ও মাড়ির রোগের যোগসূত্র রয়েছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পাকস্থলীর সমস্যা, চোখের সমস্যা এমনকি অকালজন্মের ঝুকির সঙ্গেও। দাঁত ও মাড়ির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আল ওয়াহিদ।

 

 

#মৌসুমী_স্বাস্থ্য_পরামর্শ

যে নিয়ম মানলে ফাটবে না ঠোঁট

বছরজুড়েই ঠোঁট ফেটে থাকে অনেকের। তবে শীতে আবহাওয়া শুকনো থাকে বলে এ সমস্যাটা প্রকট হয়। এ কারণে ঠোঁটের চাই বাড়তি মনোযোগ। এখন থেকেই যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিশেষ কিছু যত্ন নেয়া যায়, তবে পুরো শীতজুড়েই ঠোঁট থাকবে সতেজ ও উজ্জ্বল।

ঠোঁটে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করলেই বিশেষ উপকার মিলবে বলে জানিয়েছে রুপবিশেষজ্ঞরা। এ জন্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটের ত্বকে স্ক্র্যাবিং করতে পারেন। আধা চা–চামচ টক দইয়ের সঙ্গে আধা চা–চামচ আইসিং সুগার মিশিয়ে নিন। বাড়িতে থাকা চিনি বেটেই তৈরি করা যাবে এই আইসিং সুগার। এই মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ধুয়ে ফেলার আগে কিছুটা সময় ম্যাসাজ করে নিন। এতে রক্ত চলাচল ভালো হওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটের মরা ত্বকও উঠে আসবে। এই স্ক্র্যাবার দিয়ে ত্বক পরিষ্কারের পর খোসাসহ লেবুর টুকরো ঠোঁটে ঘষুন। এতে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে। তারপর ঠোঁট পানিতে ধুয়ে লিপবাম লাগিয়ে নিন। যাদের ঠোঁট অতিরিক্ত শুষ্ক তারা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। সপ্তাহে তিন দিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন রুপবিশেষজ্ঞরা।

ঠোঁটে কি সরাসরি গ্লিসারিন দেয়া যায়?

শীতে অনেকেই ঠোঁটে সরাসরি গ্লিসারিনের ব্যবহার করেন। এতে উপকার তো হয়ই না, উল্টো ঠোঁটের ত্বকের ক্ষতি করে। এ জন্য গ্লিসারিনের সঙ্গে অন্য উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন শোভন। এই যেমন ১০ ভাগ গোলাপজলের সঙ্গে ৩ ভাগ গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

লিপবাম বা ময়েশ্চারাইজার

ত্বকে শুষ্কতা অনুভব করলে লিপবাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ঠোঁটের ত্বক বেশি শুষ্ক, তারা অবশ্যই কোকোয়া বাটারসমৃদ্ধ পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন। চাইলে লিপবামের পরিবর্তে বাটার বা মাখনও ব্যবহার করতে পারেন।

ফাটা ঠোঁটে কি লিপস্টিক দেওয়া যাবে?

এখন তো অনুষ্ঠানের সময়। ইতিমধ্যেই যাদের ঠোঁট ফেটে গেছে তারা কি তাহলে লিপস্টিক ছাড়াই অনুষ্ঠানে যাবেন? তাঁদের জন্য পরামর্শ, তাঁরা সাজগোজের ঠিক এক ঘণ্টা আগে থেকেই ঠোঁটে পুরু করে গ্লিসারিন লাগিয়ে রাখুন। তবে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না। ম্যাট লিপস্টিক ত্বককে আরও শুষ্ক করে। এর বদলে বরং গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে স্কিন বিশেষজ্ঞরা। আর লিপস্টিক ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্রাইমার লাগিয়ে নিন।

পানি করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতে আমলকী, কমলার মতো ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল খেতে পারেন। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ভেজিটেবল স্যুপ রাখার চেষ্টা করুন। ভেজিটেবল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

যা কখনোই করবেন না:

১. অনেকেই এই সময় জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেন। এটা একেবারেই করা যাবে না। ঠোঁট শুষ্ক মনে হলেই লিপবাম ব্যবহার করুন।

২. কখনোই লিপস্টিক না তুলে ঘুমাতে যাবেন না। লিপস্টিক তুলতে অবশ্যই অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন। এ ছাড়া শীতের সময় ঠোঁটে দীর্ঘক্ষণ লিপস্টিক না লাগিয়ে রাখাই ভালো।

৩. সাবান বা ফেসওয়াশ কখনোই ঠোঁটে ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে

আশা করা যায় এই নিয়মগুলো মেনে চললে এবারের শীতে সুস্থ থাকবে ঠোঁট আর আপনি থাকবেন সতেজ ও লাবণ্যময়ী। - অভি/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।