প্রেক্ষাগৃহে মুভি দেখা কি এখনও জনপ্রিয়?
2022-11-24 10:07:35

বর্তমানের ‘মাল্টি স্ক্রিনের যুগে’ অধিকাংশ মানুষ তথ্য অর্জন, বিনোদন লাভ এবং যোগাযোগ করার জন্য পর্দার ওপর নির্ভর করে থাকেন। স্ক্রিন-ভিত্তিক অডিও-ভিজুয়াল বিষয়বস্তু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পছন্দ হয়ে উঠেছে।

 

তারা অনেক সময় ধরে সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ব্রাউজ করে বা গেম খেলতে ভার্চুয়াল স্পেসে অনেক সময় ব্যয় করে। তাই অনেক পণ্ডিত এ থেকে অনুমান করেন যে মুভি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া এখন বিনোদনের একটি ঐতিহ্যবাহী এমনকি সেকেলে বিষয় হয়ে পড়েছে।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তা নয়। বর্তমানে অনেক তরুণ দর্শক সিনেমা হল থেকে দূরে থাকে না, বরং তারা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখায় বেশি মনোযোগ দেয়। একসাথে সিনেমা দেখার জন্য বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে। তাই সিনেমা হলগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ভূমিকা পালন করতে পুরোপুরি সক্ষম। এই পরিস্থিতিতে ‘মাল্টি স্ক্রিনের যুগে’ স্ক্রিন আর্ট হিসেবে চলচ্চিত্রের সাংস্কৃতিক মিশনটিকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে আমাদের।

 

সামাজিক যোগাযোগ থেকে সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা অর্জন তরুণদের অন্যতম প্রধান চাহিদা। আজকের তরুণরা হচ্ছে সেই প্রজন্ম - যারা ইন্টারনেটের সাথে বড় হয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই ইন্টারনেটে নানা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকে। অনেকের জীবন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে থাকে। তুলনামূলকভাবে বলতে গেলে, বাস্তবে মানুষের সাথে মানুষের গভীর যোগাযোগের অভাব রয়েছে। তাই ইন্টারনেট থেকে বাস্তবে ফিরে আসার সময় ‘সামাজিক ভীতি’র প্রবণতা দেখা যায়। সুতরাং, যখন তারা অফলাইনে মেলামেশা করে, তখনও তারা ‘সিনেমা দেখা, খাবার খাওয়া ও শপিং করা’র মোড বেছে নিতে পছন্দ করে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং সাধারণ বিষয়গুলোকে খুঁজে পেতে আবেগ থেকে মুক্তি এবং সামাজিক সংযোগের একটি বিন্দু হিসেবে সিনেমার প্লটগুলোর আলোচনাকে ব্যবহার করে।

 

এই সামাজিক মোডটি বিংশ শতাব্দীর ৮০ এবং ৯০-এর দশকে দেখা যেত। তখন সন্ধ্যায় রাতের খাবারের পরে লোকেরা চারদিক থেকে স্কয়ারে জড়ো হত, একে অপরের সঙ্গে আড্ডা দিত এবং সিনেমা দেখে সময় কাটাত। আজকাল থিয়েটারগুলো স্কয়ারগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে। অনেক দর্শক আবেগপূর্ণ সংযোগ তৈরির জায়গা হিসেবে একসাথে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। এটি প্রমাণ করে যে একটি ভাল সাংস্কৃতিক জায়গার প্রতি মানুষের সাধারণ প্রত্যাশা রয়েছে। 

 

চলচ্চিত্রের যুগে বিনোদনের বিকল্পের অভাবের বিপরীতে মানুষ শুধুমাত্র সিনেমা দেখতে থিয়েটারে যেতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে আজকের চলচ্চিত্রগুলো প্যাড, হোম প্রজেকশন, এবং মোবাইল ফোনসহ ভিডিও টার্মিনাল প্রজেকশনের রূপে মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে। দর্শকরা মুভি দেখার জন্য যেকোনো সময় যে কোন জায়গায় প্রগ্রেস বার টেনে আনতে পারেন, যাতে মুভি দেখার আচরণ মোবাইল, এলোমেলো এবং খণ্ডিত দেখায়। যাইহোক, থিয়েটারগুলো আলাদা। দর্শকদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময়কাল, বিষয়বস্তু দেখার এবং এমনকি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সিনেমা দেখতে হবে। একই দিকে তাকানো, একই ছবি দেখা এবং একই জায়গায় একই আবেগ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

 

আজকের সাইবার স্পেসে চলচ্চিত্র সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রায়ই জনমতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সম্পর্কে আলোচনা, নিবন্ধ, টপিক এবং থ্রেড আকারে উঠে আসে এবং সেগুলো প্রায়শই হট সার্চের তালিকায় থাকে। অনেক দর্শক জনপ্রিয় সামাজিক বিষয়ের আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন।

 

তাই মুভি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করা শুধুমাত্র দেখার একটি কাজ নয়, এর মানে হল যে দর্শকরা সিনেমার সাহায্যে তাদের নিজস্ব চেনাশোনা ভেদ করতে পারে, অনলাইন বা অফলাইনে ব্যাপক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সামাজিক সত্তার বোধ খুঁজে পেতে পারে, এবং অন্যদের সঙ্গে মানসিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

 

থিয়েটারে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় তরুণ দর্শকদের দেখার পছন্দও পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটাল ইন্টারনেট প্লেব্যাক প্রযুক্তির আপগ্রেডের সাথে ফোর-কে প্রযুক্তি ঘরে বসে সিনেমা দেখার জন্য সাধারণ দর্শকদের চাহিদা মেটাতে পারে। এমনকি থ্রি-ডি ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং ডলবি সাউন্ড ইফেক্ট, যা একসময় থিয়েটারের জন্য একচেটিয়া ছিল, এখন বিভিন্ন আকারে হোম থিয়েটারে প্রবেশ করেছে। দর্শকদের জন্য চমৎকার অডিও-ভিজুয়াল ইফেক্ট পাওয়ার জন্য খরচও কমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের মুভি দেখার প্রত্যাশা শুধুমাত্র অডিও-ভিজুয়াল ইফেক্টের প্রযুক্তির উপর ফোকাস করা নয়, বরং সত্যিকার আবেগের অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

 

‘ছোট্ট একটি লাল ফুল’ মুভি

এমন প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে প্রবেশ করা তরুণ দর্শকরা দেশীয় বাস্তবসম্মত সিনেমা দেখার জন্য অভূতপূর্ব উৎসাহ দেখিয়েছে। যেমন, ‘গৃহে প্রত্যাবর্তন’ ‘সাধারণ বীর’-সহ নানা মুভি সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। এসবের মাধ্যমে তরুণ দর্শকেরা বিভিন্ন মহলে কর্মরত সাধারণ বীরদের সম্পর্কে জানতে পারেন। ‘বোন’ এবং ‘ছোট্ট একটি লাল ফুল’ মুভিতে আজকাল তরুণ-তরুণীদের নানা বাস্তব সমস্যা ফুটে উঠেছে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা তুলে ধরা হয়েছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থিয়েটারগুলোতে বিভিন্ন ক্লাসিক্যাল মুভি’র রি-স্ক্রিনিং কার্যক্রমও অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা তরুণ দর্শকদের সাড়া পেয়েছে। পর্দা একটি আয়না, যা বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং পর্দার আলো ও ছায়া সৃষ্টিকারীদের সময়ের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে এবং দর্শকদের সমাজ সম্পর্কে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারিবারিক স্নেহ এবং জীবনের মূল্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে এমন বাস্তব চলচ্চিত্রগুলো প্রায়শই বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

বিষয়বস্তু দর্শকের মনস্তত্ত্বের উপর কাজ করে এবং দর্শকদের মানসিক দিকও বিষয়বস্তু তৈরির উপর প্রতিক্রিয়া দেখায়। ‘মাল্টি-স্ক্রিন যুগে’ তরুণ-তরুণীদের চলচ্চিত্র দেখার অভিযোজন পরিবর্তনের ফলে বাস্তবসম্মত এবং মূলধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করে। আশা করা যায় যে বেশিরভাগ চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই প্রবণতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করবেন, সাংস্কৃতিক মিশন কাঁধে রাখবেন, আরও বাস্তবসম্মত চিত্রনাট্য লিখবেন, জনগণের মানসিক শক্তি জোরালো করতে সক্ষম শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম সৃষ্টি করবেন এবং চীনের চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবেন। লিলি/এনাম/রুবি