চীন-মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের তাত্পর্য
2022-11-23 12:57:42

নভেম্বর ২৩: গতকাল (মঙ্গলবার) ক্যাম্বোডিয়ায় নবম আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেং হ্য এবং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।

বালি দ্বীপে চীন-মার্কিন শীর্ষ বৈঠকের পর, দু’দেশের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তা পর্যায়ে এই প্রথমবারের মতো বৈঠক হলো। এ বৈঠক চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ফোনালাপ এবং জুন মাসে অফলাইনে বৈঠকের পর চীন ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীদ্বয়ের তৃতীয় মতবিনিময়।

এর আগে চীন-মার্কিন শীর্ষ বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, দু’দেশের উচিত পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সহযোগিতা ও কল্যাণের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সঠিক পথে উন্নয়ন নিশ্চিত করা, পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না-করা।

আসলে দু’দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর, দু’দেশের কর্মদল আট দিনের মধ্যে তিনটি ক্ষেত্রে পাঁচ বার যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, আর্থ-বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে তিন বার যোগাযোগ করেছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূতদের মধ্যেও একবার যোগাযোগ হয়েছে। আর এবারের চীন-মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হল দু’দেশের সশস্ত্রবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতৈক্য বাস্তবায়নে নেওয়া আরেকটি ব্যবস্থা।

চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌশল ও নিরাপত্তা গবেষণাকেন্দ্রের গবেষক চৌ পো বলেন, প্রেসিডেন্ট সি সামরিক দিক দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে না-পড়ার কথা বলেছেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দু’টি বড় দেশ। এই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ না-হওয়া, যুদ্ধ না-হওয়া দু’দেশ ও বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংঘর্ষে না-জড়ানো আসলেই সংকট নিয়ন্ত্রণের একটি অংশ। এবার বৈঠক হল চলতি বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের তৃতীয় বারের মতবিনিময়। তিন বারই দু’পক্ষ সংকট নিয়ন্ত্রণের বিষয় উল্লেখ করেছে। ২০২১ সালের সময় যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি দুই বার চীনকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কোনোমতেই যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করবে না। প্রশ্ন হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মাথায় আসলে কী চিন্তা কাজ করছে? এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তাই প্রতি বার চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের সময় চীন সংকট নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে। গত এপ্রিল মাসে চীনের কথা ছিল: ঝুঁকির সংকট নিয়ন্ত্রণ করা, বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা করা, দু’দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্কের স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। এমন কথা বলার প্রেক্ষাপট হল, কিছু কিছু আঞ্চলিক সমস্যার কারণে হয়তো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং সশস্ত্রবাহিনী পর্যায়ে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার ইচ্ছা আছে।

গত জুন মাসে চীনের কথা ছিল, মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মতভেদকে  সংঘর্ষ ও বৈরিতায় রূপান্তরিত হতে দেওয়া যাবে না। অবশ্য, চীনের বক্তব্যে পরিবর্তন এসেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। জুন মাসের বৈঠকের আগে মার্কিন সামরিক নৌজাহাজ তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করে। চীনের গণমুক্তি ফৌজ পুরো যাত্রায় মার্কিন জাহাজের ওপর কড়া নজর রাখে এবং যে-কোনো উসকানি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়।  

আসলে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্ধারণের পর বিভিন্ন দিক থেকে চীনকে অবরুদ্ধ ও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে আসছে। অবশ্য, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছে যে, সংঘর্ষ ও বৈরিতায় কেউ জয়ী হবে না। এতে দু’দেশের স্বার্থই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জুন মাসের বৈঠকে দু’পক্ষ একমত হয়েছে যে, দু’দেশের সশস্ত্রবাহিনীর  উচিত যোগাযোগ বজায় রাখা এবং সংকট নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া। বৈঠকে চীন আবারও তাইওয়ান সমস্যায় চীনের দৃঢ় অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেং হ্য বলেছেন, তাইওয়ান সমস্যা হলো চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি। তাইওয়ান চীন-মার্কিন সম্পর্কের একটি ‘রেড-লাইন’, যা অতিক্রম করা যাবে না।

বৈঠকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়ও উল্লেখ করেছে। এশিয়ার কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে শান্তি ও স্থিতিশীলতা। এশিয়ায় শুধু যুদ্ধজাহাজ ও বিমানবাহী জাহাজ পাঠানোয় অভ্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে। (শুয়েই/আলিম/আকাশ)