চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত ১৯ নভেম্বর ব্যাংককে এপেক নেতাদের ২৯তম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের প্রক্রিয়া শেষ করে বেইজিংয়ে ফিরে আসেন। সি চিন পিং’র এবারের ব্যাংকক সফরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। সেগুলো হলো, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং চীন-থাইল্যান্ড বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা।
চলতি বছরে এপেক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘উন্মুক্ততা, যোগাযোগ ও ভারসাম্য'। গত ১৯ নভেম্বর সম্মেলনে টেকসই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তিন দফা প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন: প্রকৃত বহুপক্ষীয়বাদে অবিচল থেকে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থা রক্ষা করতে, অভিন্ন কল্যাণ ও সহনশীলতায় অবিচল থেকে পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়ন করতে, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতায় অবিচল থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র ভাষণে এবং সম্মেলনে প্রকাশিত ঘোষণায় একটি শব্দ খুব গুরুত্ব পায়। শব্দটি হচ্ছে 'পুত্রজায়া ভিশন'। পুত্রজায়া ভিশন কী? ১৯৯৪ সালে এপেকের নেতারা ইন্দোনেশিয়ার বোগরে “বোগর লক্ষ্য” উপস্থাপন করেন। তাতে ২০২০ সালের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। ২০২০ সালে বোগর লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর মালয়েশিয়ার এপেকে 'পুত্রজায়া ভিশন ২০৪০' গৃহীত হয়। এতে ২০৪০ সাল নাগাদ একটি উন্মুক্ত, প্রাণচঞ্চল, বলিষ্ঠ এবং শান্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠন করার এবং এ অঞ্চলের জনসাধারণ ও পরবর্তী প্রজন্মের অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়।
বোগর লক্ষ্য থেকে পুত্রজায়া ভিশনে একটি অভিন্ন সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। ২০২০ সাল থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বরাবরই এ ভিশন বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এবারের এপেক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সি চিন পিং বলেন, “আমরা একসাথে পুত্রজায়া ভিশনের বীজ রোপণ করেছি। সবার উচিত এ বীজের যত্ন নিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ফুল লালন করা।
অবাধ ও উন্মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এপেকের গঠনতন্ত্র ও নীতি এবং পাশাপাশি, পুত্রজায়া ভিশনের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এবারের সম্মেলনে এ বিষয়ের গুরুত্ব আবার তুলে ধরেন সি চিন পিং।
২০১৪ সালে এপেকের নেতারা বেইজিংয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে সি চিন পিং বেশ কয়েকবার বলেছেন যে, এ অবাধ বাণিজ্যিক অঞ্চলের পথ সহজগম্য হবে না। সবার উচিত এ দিকে, এই বড় লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ব্যাংকক সফরে চীন-থাইল্যান্ড সম্পর্কের নতুন যুগ উন্মোচনের কথা বলেছেন সি চিন পিং। গত ১৯ নভেম্বর দু’দেশের নেতারা আরও স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং টেকসই চীন-থাইল্যান্ড অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
চীন-থাইল্যান্ড বন্ধুত্ব হাজার বছরের। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে তত্কালীন চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং থাইল্যান্ড সফরকালে বিশেষভাবে বন্যাদুর্গত অঞ্চল সফর করেন এবং দুর্গতদের সমাবেদনা জানান। চলতি বছর চীন-থাইল্যান্ড সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী। গত জুলাই মাসে চীন-আইল্যান্ড অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠনে একমত হয় দু’দেশ। চীন-থাইল্যান্ড অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি দু’দেশের সম্পর্কের উচ্চতার প্রতিফলন, যা দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতা গভীরতর করতে দিকনির্দেশনা দেবে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার সঙ্গে বৈঠকের সময় সি চিন পিং বলেন, ইতিহাসের নতুন বিন্দুতে দাঁড়িয়ে, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বিশেষ মৈত্রী জোরদার এবং চীন-থাইল্যান্ড সম্পর্কের নতুন যুগ উন্মোচন করতে ইচ্ছুক চীন। দু’নেতা ‘চীন-থাইল্যান্ড কৌশলগত সহযোগিতা সংক্রান্ত অভিন্ন অভিযান পরিকল্পনা (২০২২-২০২৬)’সহ নানা সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন।
বালি দ্বীপ থেকে ব্যাংকক, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চি পিং এবারের ৬ দিন ৫ রাতের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে ৩০টিও বেশি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি নানা বিষয়ে প্রস্তাব ও উদ্যোগ উত্থাপনের পাশাপাশি বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন। তাতে নতুন যুগে চীনের মানবিক দিক ও দায়িত্ববোধ প্রতিফলিত হয়েছে।
(রুবি/আলিম)