উচিয়ামা বই দোকান ও জাপানে চীনা অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা
2022-11-21 14:40:49

চীনের ক্রীড়াসংস্কৃতি

ক্রীড়া খাতে শক্তিশালী দেশের স্বপ্ন চীনা স্বপ্নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংকে কেন্দ্র করে, সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি জাতীয় উন্নয়ন ও জাতীয় পুনর্জাগরণের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে, একটি শক্তিশালী ক্রীড়াদেশ হিসেবে চীনকে গড়ে তোলার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা পেশ করে। গত দশ বছরে দেশের ক্রীড়া খাতে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই দশ বছরে চীন একটি শক্তিশালী ক্রীড়াদেশ হবার পথে ক্রমশ সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। জাতীয় ফিটনেস, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা, ও ক্রীড়া শিল্পের সমন্বিত উন্নয়নও সাধিত হয়েছে এ সময়।

চিয়াংসু প্রদেশের নানচিংয়ের চিয়া নদীর তীরে, ভোরের দিকে ক্রীড়াপ্রেমীদের দৌড়াতে দেখা যায়। লুও ওয়েইওয়েই তাদের একজন। তাঁর বয়স ষাট বছর। তিনি কয়েক বছর অ্যাট্রোফিক গ্যাস্ট্রাইটিস ও আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগেছেন।

একসময় এক কিলোমিটার হাঁটা তার জন্য কঠিন ব্যাপার ছিল। অথচ এখন তিনি প্রতিবছর এক ডজনেরও বেশি হাফ-ম্যারাথনে দৌড়ান। লুও ওয়েইওয়েই তার চারপাশের লোকজনের উৎসাহে পাঁচ বছর ধরে ব্যায়াম করছেন।

চলতি বছরের জুলাই মাসে যখন তিনি হাসপাতালে যান, তখন ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন তিনি প্রায় সুস্থ।

খেলাধুলা ও শরীরচর্চার কারণে নতুন জীবন পাওয়া লুও ওয়েইওয়েইয়ের গল্প নতুন যুগে চীনের জাতীয় ফিটনেস চেতনা বাস্তবায়নের প্রতীক। গত দশ বছরে চীনের মানুষের গড় আয়ু ৭৪.৮ বছর থেকে বেড়ে ৭৮.২ বছর হয়েছে।

ক্রীড়ায় শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলতে চাই জনগণকেন্দ্রিক চেতনার বাস্তবায়ন। জনগণকে ক্রীড়ামুখী করতে হবে; তাদের  শরীরচর্চার চাহিদা পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি, জনগণের সর্বাত্মক উন্নয়নের সঙ্গে ক্রীড়াকে যুক্ত করা, সবার জন্য ফিটনেস জাতীয় কৌশল গ্রহণ করা, এবং ক্রমাগত মানবস্বাস্থ্যের উন্নতি করাও জরুরি। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশকে সুস্থ ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ক্রীড়া খাতের শক্তিশালী দেশের ভিত্তি হল জনগণের ক্রীড়া। ২০০৯ সালে চীন প্রতিবছর ৮ অগাস্টকে "জাতীয় ফিটনেস দিবস" হিসাবে ঘোষণা করে। সেবছরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ২০২৫ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-স্তরের জাতীয় ফিটনেস গণ-সেবাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন মাথাপিছু খেলার মাঠ হবে গড়ে ২.৬ বর্গমিটার। আর নিয়মিত শরীরচর্চাকারীর সংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার ৩৮.৫ শতাংশ।

২০০৮ সালে থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, চীন সক্রিয়ভাবে অলিম্পিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে, অলিম্পিক চেতনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এবং অলিম্পিক আন্দোলনে নতুন অবদান রেখে চলেছে। ক্রীড়া খাতে অন্যতম বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে চীন!

 

উচিয়ামা বই দোকান ও জাপানে চীনা অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা

‘জাপানি পাঠকরা চীনা সংস্কৃতির ব্যাপারে আগ্রহী। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অধিক হারে জাপানি পাঠক চীনা কমিক ও উপন্যাস কিনছেন। জাপানি পাঠকরা আজকে যেসব কমিক্স পছন্দ করেন, তার মধ্যে চীনা কমিক উল্লেখযোগ্য।’ জাপানের টোকিওতে অবস্থিত উচিয়ামা বইদোকানের মালিক উচিয়ামা ফুকা সিনহুয়া বার্তা সংস্থার প্রতিবেদককে এ সব কথা বলেন।

টোকিওর জিমবোচোতে অবস্থিত উচিয়ামা বইয়ের দোকানের মূল শাখাটি ১৯১৭ সালে চীনের সাংহাইয়ে খোলা হয়েছিল। এর ইতিহাস এক শ বছরেরও বেশি। উচিয়ামা সুকা বই দোকানের চতুর্থ প্রজন্মের মালিক। তিনি বলেন, দোকানে বই কিনতে আসা গ্রাহকদের প্রায় ৮০ শতাংশ জাপানি এবং প্রায় ২০ শতাংশ চীনা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যেই চীনা অ্যানিমেশন উচিয়ামার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে, সেটি হল "লুও সিয়াওহেই: যুদ্ধের কিংবদন্তি"। ২০২০ সালে, জাপানে "লুও সিয়াওহেই: যুদ্ধের কিংবদন্তি" চলচ্চিত্রটি ৩.৭৫ লাখ দর্শক দেখে এবং ৫৮০ মিলিয়ন ইয়েন বক্স অফিস আয় করে। উচিয়ামা বলেন, শুরুতে বই দোকান "লুও সিয়াওহেই: যুদ্ধের কিংবদন্তি" কমিক বইটি সংগ্রহ করতে চেয়েছিল এই কারণে যে, ২০ বছর বয়সী একজন জাপানি নারী পাঠক এটি কিনতে চেয়েছিলেন। তারপর এখন পর্যন্ত, অনেক জাপানি বইভক্ত এটি কিনতে এসেছেন। সবাই মনে করেন যে "লুও সিয়াওহেই" খুব কিউট। তা ছাড়া, অ্যানিমেশনে চীনা সংস্কৃতির অনেক উপাদান রয়েছে।

উচিয়ামার বয়স ৫০ বছর। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে, ২৪ বছর ধরে বইয়ের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, একসময় দোকানে চীনা কমিক বই বিক্রি হতো, যেগুলোর বেশিরভাগ জাপানি কমিকের চীনা ভাষায় অনুবাদ। তখন পাঠকরা সাধারণত চীনা ভাষা শেখার জন্য সেগুলো ব্যবহার করতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনা লেখকদের মূল কমিক বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালে, উচিয়ামা বই দোকানের মোট বিক্রির ৫.৬ শতাংশ ছিল কমিক্স এবং ২০২১ সাল নাগাদ, তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে। ২০২১ সালে, বই দোকানে চীনা কমিকসের বিক্রির পরিমাণও ২০১৬ সালের তুলনায় ২.৭ গুণ বেড়েছে।

জাপানের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে নারী পাঠকরা, চীনা কমিকস, বিশেষ করে প্রাচীন শৈলীর কমিকস খুব পছন্দ করেন। প্রতিবেদক বই দোকানের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের এলাকায় "লুও সিয়াওহেই: যুদ্ধের কিংবদন্তি" ছাড়াও, "অমানবিক"-এর মতো আরও অনেক চীনা কমিক দেখেছেন। গ্রাহকরা সেগুলো দেদারছে কিনছেও।

উচিয়ামা সুকা দোকানে "প্রাচীন শৈলী ও কমিক কৌশল শিখুন"-এর একটি কপি তুলেছিলেন। কারণ, অনেকে বইটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আসলে যারা কমিক পছন্দ করেন, তাদের অনেকে আবার নিজেরা আঁকেনও। "এমন অনেকে  আছেন যারা বিশেষভাবে চীনা কমিক পড়ে চীনা ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন," জানালেন তিনি।

জাপান অ্যানিমেশনের বড় দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জাপানি বাজারে চীনা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন অ্যানিমেশান দেখা যাচ্ছে।

আসলে অ্যানিমেশন দেখা অনেক দেশের তরুণদের একটি সাধারণ শখ এবং তারা স্বাভাবিকভাবেই এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। উচিয়ামা বলেন: "কিছু জাপানি পাঠক আছেন, যারা চীনা কমিকসের মতো বই কেনেন। তাদের কাছে এ হচ্ছে একেকটি জানালাস্বরূপ, যার মাধ্যমে তারা চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে পারেন।"

 

ইসরাইলি প্রকাশক পিয়েরে রাভির সাক্ষাত্কার

চীনা পিনইনে লেখা "হ্যালো, জেরুসালেম থেকে" শীর্ষক একটি ছোট ব্ল্যাকবোর্ড পশ্চিম জেরুসালেমের ইসরাইলি প্রকাশক পিয়েরে রাভির বাড়ির দেয়ালে ঝুলানো আছে। এর পাশের ক্যাবিনেটে, চীন থেকে পাঠানো পুরস্কারের সার্টিফিকেট এবং ট্রফির পাশাপাশি রাভির সন্তানদের ছবি রয়েছে। রাভি সাংবাদিকদের বলেন, “এগুলো আমার গর্ব।

চীনা বই বিশেষ অবদান পুরস্কার হল প্রকাশনা শিল্পের সর্বোচ্চ বিদেশি-সম্পর্কিত পুরস্কার যা জাতীয় সংবাদ প্রকাশনা ব্যুরোর উদ্যোগে জাতীয় সম্মানের কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে, বেইজিংয়ে ‘১৪তম চীনা বই বিশেষ অবদান পুরস্কার’ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সেখানে ১৫টি দেশের ১৫ জন বিজয়ীকে সম্মানিত করা হয়, যারা চীনের প্রকাশনা শিল্পকে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দিতে এবং চীনের সাথে বিভিন্ন দেশের বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষা প্রচারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। রাভি তাদের একজন।

"আমি যখন ইমেলে প্রথম খবরটি জানি, তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশ্যই আমি খুব আনন্দিত ও অবাক হয়েছিলাম। এই সম্মান আমার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ।" রাভি এখনও পুরস্কারের কথা ভেবে উদ্বেলিত হন।

ছোটবেলা থেকেই, রাভি চীনসম্পর্কিত বই পড়তে শুরু করেন এবং প্রাচ্যের সুদূর প্রাচীন সভ্যতা তাকে আকর্ষণ করে। সেই সময়ে, বাজারে হিব্রু ভাষায় খুব কম চীনসম্পর্কিত বই পাওয়া যেতো। বেশিরভাগই ছিল ঐতিহাসিক বই। এ জন্য রাভি খুব দুঃখ অনুভব করতেন।

শৈশবের দুঃখ পরে রাভির ক্যারিয়ার অন্বেষণের মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। তিনি তার নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, চীনা প্রকাশনা সংস্থাগুলির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন এবং প্রকাশনার জন্য হিব্রু ভাষায় ২০টিরও বেশি চীনা বই ধারাবাহিকভাবে সংকলন করেন। এর মধ্যে রয়েছে চীনের উন্নয়ন দর্শনের বই, উপন্যাস এবং একাডেমিক বই, ইত্যাদি। তিনি তার মেয়ের সঙ্গে সহ-লেখক হিসেবে দুটি শিশুতোষ বই চীনা ভাষায় অনুবাদও করেন। চীনের প্রেস বইগুলো প্রকাশ করেছে।

"এইভাবে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন আমার শৈশবের ইচ্ছা পূরণ করেছে। আমি চীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছি," রাভি বলেন।

২০১৯ সালে, রাভি ছেংতু যান এবং প্রথমবারের মতো মশলাদার হট পটের স্বাদ গ্রহণ করেন। তখন তিনি নিজের চোখে জায়ান্ট পান্ডাও দেখেন। তিনি বলেন, চীনা শহরগুলোর দ্রুত উন্নয়ন আশ্চর্যজনক। তিনি ইসরাইল ও চীনের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রচারের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হন।

রাভি বলেন, ইসরাইল ও চীন একে অপর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। দুই দেশের অনেক মানুষ কখনও একে অপরের দেশে যায়নি। উভয় দেশের জনগণের একে অপরের সম্পর্কে যে নেতিবাচক পূর্বধারণা রয়েছে, তা হ্রাস করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। "আমার মতে, সংস্কৃতি, বিশেষ করে বই, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। বই বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে ব্যবধান কমাতে, দূরত্ব কমাতে সাহায্য করে।" রাভি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইলি পাঠকদের হাতে আরও চীনা বই তুলে দিতে চান। আর এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই তিনি একাধিক চীনা প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন।

 

 

(জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)