নভেম্বর ২১: এপেক নেতাদের ২৯তম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন গত শনিবার থাইল্যান্ডে সমাপ্ত হয়েছে। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি এশিয়া ও প্যাসিফিকের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির একীকরণ ত্বরান্বিতকরণে কয়েক দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। তাঁর প্রস্তাব বিভিন্ন মহলে প্রশংসিতও হয়েছে।
সম্মেলনে ‘এপেক ঘোষণা’-সহ দু’টি দলিল গৃহীত হয়। এ সব দলিলে চীনের সংশ্লিষ্ট নীতি প্রতিফলিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক তথ্যমাধ্যমের অভিমত, সি চিন পিং-এর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য বিশ্ব পরিচালনার ‘এশিয়া মূহূর্তকে’ আলোকিত করেছে। চীন অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করার নেতৃত্বস্থানীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
এপেক হলো এশিয়া ও প্যাসিফিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা মঞ্চ। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের ভবিষ্যৎঅনিশ্চিত। কোনো কোনো দেশ স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারার আলোকে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ কৌশল গ্রহণ করেছে, যা এশিয়া ও প্যাসিফিক সহযোগিতার পথে গুরুতর বাধাস্বরূপ। বিশ্ব অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে, এশিয়া ও প্যাসিফিকের সহযোগিতা কোন দিকে যাবে, কোন পথে যাবে, তা শুধু এতদঞ্চলের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত নয, বরং বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নেও এ প্রভাব থাকবে। চলতি বছরের এপেক সম্মেলন ‘উন্মুক্ত, যোগাযোগ ও ভারসাম্য’-কে প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করে, যা এশিয়া ও প্যাসিফিকের দেশগুলোর অভিন্ন আকাঙ্খার প্রতিফলন।
চীন হলো এপেকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ২০১৩ সাল থেকে সি চিন পিং বেশ কয়েক বার এপেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন, এশিয়া ও প্যাসিফিকের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করেছেন। এবারের এপেকের শিল্প ও বাণিজ্য নেতাদের সম্মেলনে সি চিন পিং নতুন পরিস্থিতিতে এশিয়া ও প্যাসিপিক সহযোগিতার ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এপেকের নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে সি চিন পিং শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল, সমৃদ্ধশালী, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর, পারস্পরিক সহযোগিতার এশিয়া ও প্যাসিফিক অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
চীন ‘এশিয়া ও প্যাসিফিক অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি’ গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে এশিয়া ও প্যাসিফিক সহযোগিতার সঠিক দিক রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এটা বড় দেশ হিসেবে চীনের দায়িত্বশীল বোধের প্রতিফলন।
এপেক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো এশিয়া ও প্যাসিফিকের অর্থনীতির উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা। ১৯৯৪ সালে ‘বোগোর লক্ষ্যমাত্রা’ উত্থাপনের পর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ গুণ বেড়েছে। বার্ষিক বৃদ্ধির গতি ৬.৭ শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ গুণ, বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ। গড় কর আগের ১৩.৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫.২ শতাংশে। এর ভিত্তিতে ২০২০ সালের মালয়েশিয়া এপেক সম্মেলনে ‘পুত্রজায়া ভিশন ২০৪০’ উত্থাপিত হয়। এতে বলা হয়, ২০৪০ সালের মধ্যে একটি উন্মুক্ত, প্রাণচঞ্চল ও শান্তিপূর্ণ এশিয়া ও প্যাসিফিক কমিউনিটি গড়ে তোলা হবে। এ আকাঙ্খা পূরণে চীন ব্যাপক বুদ্ধি ও বাস্তব ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে।
এবারের এপেক সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন, অবাধ ও উন্মুক্ত বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ হল ‘পুত্রজায়া ভিশন ২০৪০’ বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সার্বিক ও উচ্চ মানের এশিয়া ও প্যাসিফিক অবাধ বাণিজ্য এলাকা স্থাপন করা, সার্বিকভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতির সহযোগিতার মান বাড়ানো, চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা আরো বড় করার জন্য চীন দৃঢ়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
চীনের উন্নয়ন এশিয়া ও প্যাসিফিক ছাড়া হবে না, আবার চীনকে ছাড়া এশিয়া ও প্যাসিফিকের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। একটি আধুনিক চীন নিশ্চয় নিজের নতুন উন্নয়ন দিয়ে এশিয়া ও প্যাসিফিক এবং বিশ্বের জন্য আরও বেশি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। (শুয়েই/আলিম/আকাশ)