চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দশ মাসে, গোটা চীনে বিদেশি পুঁজির ব্যবহারের পরিমাণ ছিল এক ট্রিলিয়ন ৮৯.৮৬ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি, যা গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে চীনে দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির পুঁজি বিনিয়োগ স্পষ্টভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনের পঞ্চম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা চলাকালে জার্মানির শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘খাশা’-র চীন শাখার উপ-ব্যবস্থাপক এবং সিএফও খ্য রুই লিন নিজের অনুভূতি শেয়ার করেন; তিনি বলেন,
‘আমদানি মেলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা দ্বিধা না-করে কোম্পানির আঞ্চলিক সদর দপ্তর চিয়াংসু প্রদেশের ছাংশু শহরে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শাংহাই থেকে গাড়ি চালিয়ে এই শহরে পৌঁছাতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে।’
চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে চীনের বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে চীনে দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির পুঁজি বিনিয়োগ স্পষ্টভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইউ থিং বলেন,
‘চীনে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন ও জাপানের প্রকৃত বিনিয়োগ যথাক্রমে ১০৬.২, ৯৫.৮, ৪০.১, ও ৩৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শল্জের সঙ্গে জার্মানির বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল চীন সফর করে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাসায়নিক শিল্প, অটোমোবাইল, ওষুধ, জৈবপ্রযুক্তি, অর্থ, শক্তি, উত্পাদন, খাদ্য, খেলার সামগ্রীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছে, অনেক উত্পাদনের ঘাঁটিতে পুঁজি বিনিয়োগ করে আসছে এবং চীনের বাজারে তাদের মুনাফাও খুব ভালো।
বহির্বিশ্বের পরিবেশ জটিল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে এসব বিরাটাকারের উদ্যোক্তার মধ্যে বেশিরভাগই চীনে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, চীনের বাজারের ওপর তাদের আস্থা আছে এবং তারা চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরালো করতে ইচ্ছুক।
দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে দেখা যাক। চলতি বছর চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি অন্যান্য উন্নত অর্থনৈতিক সত্তার চেয়ে বেশি হয়েছে। ২০২১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট রফতানির ৪২.৫ শতাংশই হয়েছে চীনে। ২০০০ সালে, চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম রফতানিপণ্য ছিল কাঠ ও চামড়া বা জুতা।
বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, চীনের বিশাল ভোক্তা বাজার এবং পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ প্রদান করেছে। স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভালো দিকে অর্থনীতির অগ্রসর হওয়ার প্রবৃদ্ধির প্রবণতা এবং সমতার ভিত্তিতে পারস্পরিক কল্যাণকর বৈদেশিক উন্মুক্ততার দৃষ্টিভঙ্গি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তাও প্রদান করেছে। ট্রেড প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র এবং চায়না চেম্বার অফ ইন্টারন্যাশনাল কমার্সের মহাসচিব সুন সিও বলেন,
‘দেশীয় সামাজিক পরিবেশ স্থিতিশীল, অর্থনীতির সম্ভাব্য শক্তি বিশাল, বাজারের অবকাশ বিশাল, শিল্পের সমর্থন সম্পূর্ণ, নীতিগত সুবিধা স্থিতিশীল। তাই, বিশ্বের অনেক প্রধান পুঁজি বিনিয়োগকারী সংস্থা চীনের বাজারের ওপর আস্থাশীল।’ (লিলি/আলিম/রুবি)