সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিনচিয়াং দৃঢ়ভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সবুজ উন্নয়নের নীতি মেনে এসেছে। সিনচিয়াং মানবজাতির সঙ্গে প্রকৃতির সহাবস্থানের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে।
হ্যেথিয়ান এলাকার ছ্যলে জেলা বৈশিষ্ট্যময় ফসলের ঘাঁটিতে স্থানীয় কৃষকরা কাজ করেন। তাঁদের চাষের প্রযুক্তি উন্নত। ঘাঁটিটি সবুজ ফসলে ভরপুর। কিন্তু কেউ ভাবতে পারবেন না যে, আগে এই ঘাঁটি ছিল মরুভূমি!
ছ্যলে জেলা তাকলিমাখন মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। জেলাটির অর্ধেকই ছিল মরুভূমি। এখানে মরুদ্যান ছিল মাত্র ৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে। জেলাটির আবহাওয়া অত্যন্ত শুকনো। বালুঝড় বেশি। আগে ভয়াবহ বালুঝড়ের কারণে ছ্যলে জেলার বাসিন্দারা তিন তিন বার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়। জেলাটির বন ও তৃণভূমি ব্যুরোর বালি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক তুরহুন গাপার বলেন, “গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে একবার ভয়াবহ বালুঝড় হয়েছিল। তখন নয়টি গ্রাম ও দেড় হাজার হেক্টর চাষের জমি বালির নিচে চাপা পড়ে। জেলাটির ৬৩টি পরিবারকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।”
তখন থেকেই ছ্যলে জেলায় বাতাস ও বালি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ‘সবুজ পানি ও পাহাড় হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড়’—বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চীন এই নীতির আলোকে ব্যাপকভাবে জমির সবুজায়ন, গাছ ও ঘাস রোপণ এবং বালি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তাবয়ন করতে থাকে। কয়েক প্রজন্মের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে মরুভূমি এখন জেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। এ নিয়ে তুরহুন গাপার গর্ব হয়। তিনি বলেন, “আমাদের জেলায় মরুভূমি মোকাবিলার জন্য প্রায় ১৭ হেক্টর বনায়ন করেছে। এর মাধ্যমে ১৬ হেক্টর মরুভূমি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। মরুদ্যানে বালির নিয়ন্ত্রণে একটি বাধা গড়ে তোলা হয়েছে।”
সফলভাবে মরুভূমি নিয়ন্ত্রণ করার পর ছ্যলে জেলায় ব্যাপকভাবে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় ফসলের চাষ হতে থাকে। বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়ও বেড়েছে।
শুষ্ক আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টির সময় দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে জলাভূমি হলো খুব মূল্যবান সম্পদ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জেলাটি বিভিন্ন জলাভূমি সুরক্ষা ও মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছে। জলাভূমি সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে।
কাশগারের বেইহু জলাভূমি পার্ক হলো স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীরচর্চা ও বিনোদনের স্থান। পার্কে একটি হ্রদ আছে। হ্রদে হাঁস সাঁতার কাটে। হ্রদ ও দূরের তুষার পাহাড় মিলে একটি খুবই সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা ঘটিয়েছে।
বেইহু পার্কের আয়তন প্রায় ১.৯ বর্গকিলোমিটার। পার্কের সবুজ অংশের আয়তন হলো ০.৪৩ বর্গকিলোমিটার। পার্কের জলাভূমির আয়তন ০.৬৩ বর্গকিলোমিটার। অথচ এর আগে পার্ক ছিল একটি গন্ধযুক্ত গর্তের মতো। ২০১৭ সালে কাশগার শহর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পার্কটিকে একটি প্রাকৃতিক সবুজ ভূমি হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। পার্কে শরীরচর্চা করতে আসা একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আগে ছুটির সময় আমরা শুধু বাজারে যেতাম। কারণ, শহরে কোনো সুন্দর জায়গা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পার্ক ও সুন্দর হ্রদ আছে। আমরা নিয়মিত এখানে আসি ও শরীরচর্চা করি। খুবই ভাল লাগে।” (ছাই/আলিম)