বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি’র আলাপচারিতা
2022-11-18 20:22:19


প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বৃহস্পতিবার তার ব্যস্ত সময়সূচী অব্যাহত রেখেছেন। এদিন তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ২৯তম এপেক অর্থনৈতিক নেতাদের সভায় যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের সাথে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ১৭তম জি-২০ শীর্ষসম্মেলন শেষ করে বুধবার রাতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।


ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, চীন ও ইতালি, দুটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসাবে, ঐতিহ্যিক বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেওয়া উচিত, একে অপরের মূল স্বার্থ এবং প্রধান উদ্বেগগুলিকে অনুধাবন করা এবং সমর্থন করা উচিত, মতভেদ দূর করার ক্ষেত্রে সাধারণ ভিত্তি অনুসরণ করা, ঐক্যমত্য প্রসারিত করা এবং বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থার দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা উচিত। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ চীন-ইতালি সরকারি কমিটি এবং কথোপকথন পদ্ধতিতে যোগাযোগ করবে। উচ্চ পর্যায়ের উৎপাদন, পরিচ্ছন্ন শক্তি, বিমান চলাচল এবং মহাকাশের পাশাপাশি ত্রিপক্ষীয় বাজার ব্যবস্থায় সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে পারে।


চীন উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এর আওতায় চীন ইতালি থেকে আরও মানের পণ্য আমদানি করবে। দেশটি ইতালিকে ২০২৩ সালের চায়না ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার প্রোডাক্ট এক্সপোতে অতিথি দেশ হতে স্বাগত জানায়।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উভয় পক্ষের উচিত ২০২৬ সালে মিলানোতে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসকে শীতকালীন ক্রীড়া ও শিল্প খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করা।


বর্তমান পরিস্থিতিতে, চীন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কের স্থিতিশীল বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে উল্লেখ করেন সি চিন পিং।


জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসাবে, চীন ও জাপান এশিয়া এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ। দেশ দুটির অনেক স্বার্থ ও সহযোগিতার বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। চীন-জাপান সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তা পরিবর্তন হবে না। নতুন যুগের চাহিদা অনুযায়ী একটি দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ক গঠন করতে জাপানের সঙ্গে কাজ করতে চীন প্রস্তুত বলে জানান প্রেসিডেন্ট সি।


তিনি বলেন, উভয় দেশ আন্তরিকতা ও সরল বিশ্বাস নিয়ে আচরণ করা উচিত, চারটি রাজনৈতিক দলিলের নীতি মেনে চলা উচিত, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একে অপরের উন্নয়নকে যুক্তিপূর্ণভাবে দেখা উচিত। চীন ও জাপানের উচিত তাদের নীতিতে একে অপরকে সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা এবং একে অপরকে কোনো হুমকি হিসেবে না দেখার রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখা।

ইতিহাস ও তাইওয়ান ইস্যুতে সঠিক আচরণ করা এবং জাপানের নিজের প্রতিশ্রুতিগুলিকে সম্মান করা উচিত বলে মন্তব্য করেন জনাব সি। বেইজিং কোনো অজুহাতে অন্য কোনো দেশকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেয় না বলেও জানান তিনি।


সামুদ্রিক এবং আঞ্চলিক বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, উভয় দেশের উচিত নীতি ও ঐকমত্য মেনে চলা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিচালনা করা।


ফিলিপিন্সের প্রেসেডেন্ট ফার্ডিন্যান্ড মার্কোসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, চীন ফিলিপিন্সের সঙ্গে বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে, সহযোগিতা চালিয়ে যেতে এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় উন্নয়নের পুনরুজ্জীবনের জন্য যৌথভাবে নিবেদিত হতে প্রস্তুত। উভয় পক্ষের উচিত নিজেদের উন্নয়ন কৌশলগুলির মধ্যে সমন্বয় আরও গভীর করা এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি, শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা। চীন ফিলিপিন্স থেকে আরও গুণগত মানসম্পন্ন কৃষি উপজাত আমদানির প্রসার ঘটাবে৷ উভয় পক্ষের আরও বাস্তবিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদানের জন্য এবং দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বের জনসাধারণের ভিত্তিকে সুসংহত করা উচিত। দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে, চীন ও ফিলিপিন্সের বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং পার্থক্য ও বিরোধ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা উচিত।


সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেন লোংয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক উন্নয়নের গতি বজায় রেখেছে। সুসম্পর্ক দুই দেশকে মহামারী মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক শক্তি যোগায়। চীন সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অগ্রগতি অর্জন করবে। চীন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে উচ্চ-স্তরের আদান-প্রদান বজায় রাখতে ইচ্ছুক এবং উচ্চ-মানের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে উন্নীত করতে চায়। চীন সিঙ্গাপুরের সাথে আঞ্চলিক ঐক্য ও সহযোগিতা বজায় রাখতে, গোষ্ঠীগত রাজনীতির বিরোধিতা করা, জোটের সংঘাত প্রতিহত করা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণকে সমুন্নত রাখা এবং শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলায় বিচ্ছিন্নকরণ ও বাধার দৃঢ় বিরোধিতা করে।


প্রেসেডেন্ট সি আশা করেন, এভাবে উভয় দেশ এই অঞ্চলে বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারবে।

১৯ নভেম্বর ২০২২