দেহঘড়ি পর্ব-৯৬
2022-11-18 18:43:31

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’এবং সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ওজন কমাতে টিসিএম

অতিরিক্ত ওজন কেউই চায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকের ওজন বেড়ে যায়। শহরের নাগরিক, বিশেষ করে যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তারা এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। যাদের ওজন বেড়ে যায়, তাদের মধ্যে অনেকে নানা রকম ব্যায়াম ও কসরত করেন, কেউ কেউ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তবে কেউ যদি সত্যিকারভাবে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান, তবে তার একটা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যাওয়ার দরকার। এক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ বা টিসিএম ভালো একটি বিকল্প হতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় মনে করা হয়, অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি হয় মূলত ক্লেদ জমে জমে। এতে মনে করা হয়, ক্লেদ তৈরি হয় যখন খাদ্য গ্রহণ, হজম, শোষণ ও সঞ্চালন প্রক্রিয়া ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যখন কেউ খুব বেশি খায়, বিশেষ করে অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার, তখন পাকস্থলী ও প্লীহার সঞ্চালন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্লেদ জমে। ঐতিহ্যগত চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি মতে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে হলে এই ক্লেদ দূর করতে হবে। যারা প্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি আচ্ছা রাখেন, তারা ক্লেদ দূর করার জন্য একটি টিসিএম ডায়েট অনুসরণ করতে পারেন।

এখন আমরা আলোচনা করবো টিসিএম চিকিৎসকদের দেওয়া কতগুলো পরামর্শ যা মেনে চলে শরীরের অতিরিক্ত ক্লেদ দূর করা যায়।

পরামর্শ ১: বিশেষ স্বাদযুক্ত খাবার খান

টিসিএম-এর খাদ্য নির্দেশিকা অনুসারে, তেতো, টক ও তীব্র স্বাদের খাবার ওজন কমানোর জন্য উপকারী। অন্যদিকে মিষ্টি, নোনতা ও চর্বিযুক্ত খাবার ওজন বাড়াতে পারে। ক্রেটিগাস ফল, করোলা ও চিয়াওকুলান চা হজমে সহায়তা করে এবং তার মধ্য দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে ভাল কাজ করে।

প্রশান্তিদায়ক গন্ধবিশিষ্ট চিয়াওকুলান চা ওজন নিয়ন্ত্রণে খুব ভাল কাজ করে। ডায়েট ও ব্যায়ামের সমন্বয়ে চিয়াওকুলান আপনার ওজন কমানোর পরিকল্পনায় একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এ চা গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর আগে আপনার শরীর কীভাবে এর প্রতি সাড়া দিচ্ছে তা পরীক্ষা করে দেখুন।

তবে মনে রাখবেন, চিয়াওকুলান শিশু বা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য সুপারিশ করা হয় না। এ চা ব্যবহারের ফলে বমি বমি ভাব এবং মলত্যাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনি যদি রক্তচাপ কমানোর, রক্ত পাতলা করা বা ইমিউনোসপ্রেসেন্ট ওষুধ গ্রহণ করেন, তবে এ চা গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পরামর্শ ২: ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আকুপাংচার চিকিৎসা চেষ্টা করুন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, খাদ্য ছাড়াও ঘুমের অভাব ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ ওজন বৃদ্ধিতে বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া গবেষণা প্রমাণ মিলেছে, মানসিক চাপ স্বাভাবিক রাখতে এবং ঘুমের মান বাড়াতে আকুপাংচার অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। আকুপাংচার চিকিৎসা শরীরের ‘ভালো বোধ’ করার হরমোন এন্ডোরফিন নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি একটি শিথিল ও শান্ত প্রভাব তৈরি করে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার আকাঙ্খা কমাতে পারে।

পরামর্শ ৩: খাওয়ার আকাঙ্খা কমাতে নিন কানের আকু-প্রেসার

কানের স্ট্যাপলিং বা অরিকুলার আকুপাংচার হলো আরেকটি টিসিএম আকুপাংচার যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কানের স্ট্যাপলিং কানের কিছু নির্দিষ্ট বিন্দুকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যার ফলে খাবারের লোভ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অরিকুলার আকুপাংচার তামাক ও হেরোইনের ব্যবহারসহ মাদকাসক্তির সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় সাহায্য করে।

কানের হাঙ্গার পয়েন্ট, শেন মেন, প্লীহা ও পেটসহ কানের কয়েকটি আকুপাংচার পয়েন্টে ভ্যাক্যারিয়া বীজের সাথে আঠালো টেপ স্থাপন করে অরিকুলার আকুপ্রেসার পরিচালনা করা হয়। টিসিএম-এ মনে করা হয়, এই আকুপয়েন্টগুলো অন্ত্রে শক্তির প্রবাহকে পুনরুদ্ধার করতে এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে পারে, যার ফলে হজমে উন্নতি ঘটে।

পরামর্শ ৪: চর্বি পোড়াতে টিসিএম ভেষজ ব্যবহার করুন

ক্ষুধা দমন, বিপাকীয় প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং চর্বি পোড়ানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ভেষজ ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। ওজন কমানোর জন্য কিছু সেরা ভেষজের মধ্যে রয়েছে পদ্ম পাতা, চায়না রুট ও অ্যাস্ট্রাগুলাস রুট। - রহমান

 

# আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা অবকাঠামো ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে আলোচনা।

কিডনি ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ হাজারের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে প্রতিবছর। এ ধরনের রোগীর জন্য মাত্র দুরকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে -- ডায়ালাইসিস অর্থাৎ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ করানো অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন। বাংলাদেশে দুই ধরনের চিকিৎসাই হচ্ছে তুলনামূলক কম খরচে। তবে এখনও বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ বিদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা, যা খুবই ব্যয়বহুল। ব্যয় বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন মানুষ এতো বিদেশের প্রতি ঝুঁকছে; বাংলাদেশে আসলে খরচ কেমন এসব নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শেখ মইনুল খোকন। তিনি কাজ করছেন ঢাকায় কিডনি ফাউন্ডেশনে।।

 

##কী_খাবো_কী_খাবো_না

মেদ ঝরাতে ভীষণ কার্যকর চিয়া সিড

চিয়া বীজ বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে একটি। এ বীজ আঁশ, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও কার্বোহাইড্রেটের অনন্য উৎস। পুষ্টিগুণের কারণে চিয়া বীজকে সুপার ফুড বলে গণ্য করা হয়। চিয়া বীজ ক্ষুদ্র কালো একপ্রকার শস্য দানা, যা সালভিয়া হিস্পানিকা নামের এক প্রকারের মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ বীজ। চিয়া বীজ প্রাচীন ‘আজটেক’ ও ‘মায়া’ জাতিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ছিল। তারা বিশ্বাস করতো এই বীজ প্রচুর শক্তির উৎস। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, চিয়া বীজ একটি বহু-ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার যা প্রতিদিন গ্রহণ করলে নানা ধরনের শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে থাকে ৪৮৬ কিলো ক্যালোরি, যার মধ্যে ৪২ দশমিক ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩৪ দশমিক ৪ গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার, ৩০ দশমিক ৭ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৬ দশমিক ৫ গ্রাম প্রোটিন। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৯, ভিটামিন সি ও ই, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও জিঙ্ক।

চলুন জেনে নেওয়া যাক চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে:

এন্টিঅক্সিডেন্টের আধার: চিয়া বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দেহের কোষ ও ত্বক রক্ষা করে। এছাড়া এন্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ রোধ করে এবং চুল ও ত্বক চকচকে ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ইঁদুরের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিয়া বীজ ট্রাইগ্লিসারাইড, প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ ও পেটের চর্বিসহ কিছু ঝুঁকির কারণ কমাতে পারে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। এছাড়া কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিয়া বীজ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

হাঁড় শক্ত করে: চিয়া বীজে থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রোটিন, যেগুলো হাড়কে সুরক্ষা দেয় এবং মজবুত করে। এ বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকে বেশ; প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। যারা দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন না তাদের জন্য খুব ভালো একটি ক্যালসিয়ামের উৎস চিয়া বীজ।

প্রোটিনের যোগান দেয়: চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে প্রোটিন থাকে প্রায় প্রায় ১৪ গ্রাম, যা বেশিরভাগ উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশি। যারা ভেজিটেরিয়ান তাদের জন্য খুব ভালো একটি প্রোটিনের উৎস চিয়া বীজ। এছাড়া পরিপূরক খাদ্য হিসেবেও এটি প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে পারে।

ওজন কমায়: ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিয়া বীজের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ বীজে থাকা উচ্চ প্রোটিন ক্ষুধা কমায়। আর ক্ষুধা কমলে মানুষের খাদ্যগ্রহণ কমে এবং তার ফলে ওজনও কমে।

হজম শক্তি বাড়ায়: চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা মলাশয় পরিষ্কার রাখে। নিয়মিত সেবনে এটি পেট পরিষ্কার রাখে, কোষ্টকাঠিন্য দূর করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।

ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডের আধার: চিয়া বীজে স্যামন মাছের চেয়েও বেশি মাত্রায় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে, যদিও এ বীজ থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-থ্রি খুব বেশি উন্নত নয়।

চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম: চিয়া বীজ খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ফলের রসের সাথে বা পানিতে মিশিয়ে সাধারণত চিয়া বীজ খাওয়া হয়। স্বাদ ও ঘ্রাণহীন বলে অনেকে রুটি বা বিস্কুটের সাথেও এটি খায়। তবে ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ চিয়া বীজ আধা ঘন্টার মতো ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভাল ফল মেলে। - অভি/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।