নভেম্বর ১৬: গতকাল (মঙ্গলবার) ১৭তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে শুরু হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত জি-২০’র অষ্টম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর থেকে তিনি টানা দশ বছর ধরে সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে তিনি কোন কোন সম্মেলনে সভাপতিত্বও করেছেন।
বালি দ্বীপের শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনের ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি কোন কোন বিষয় উল্লেখ করেছেন, কোন কোন দেশের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং কী কী গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছেছেন? বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
জি-২০ ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এতে বিশ্বের প্রধান উন্নত অর্থনৈতিক সত্তা এবং উদীয়মান বাজারের অর্থনৈতিক সত্তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক সামগ্রিক পরিমাণ বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ।
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট শুরু হয়। ওই বছরের নভেম্বর মাসে জি-২০ গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জি-২০ গোষ্ঠী তখনকার বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং একে পুনরুদ্ধারের পথে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সংকট আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম হিসেবে জি-২০ গোষ্ঠীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোকে শতাব্দীর পরিবর্তন এবং মহামারী একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি আবারও একটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছর বালি দ্বীপের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো ‘অভিন্ন পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী পুনরুদ্ধার’।
গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে বালি শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রেসিডেন্ট সি ‘সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করুন এবং একসাথে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এগিয়ে নিতে নতুন ঐকমত্য গড়ে তুলতে নতুন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আমাদের এখন বেশি করে উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, অভিন্ন উন্নয়ন হল সত্যিকার উন্নয়ন। গরিবরা আরও দরিদ্র এবং ধনীরা আরও ধনী হওয়ার ভিত্তিতে বিশ্বকে সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল করা যায় না। প্রত্যেক দেশ ভালো দিন কাটাতে চায়। আধুনিকায়ন কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিশেষ অধিকার হওয়া উচিৎ নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যশস্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই জি-২০ গোষ্ঠীর উত্পাদন, পুঁজি ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেওয়া উচিৎ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বহুপক্ষীয় বিনিময়ের প্লাটফর্ম স্থাপন এবং বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের জন্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি’র বৈঠকের পর গতকাল (মঙ্গলবার) সি চিন পিং বালি দ্বীপে ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকখোঁ’র সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিগত ৩ বছরে আমরা নানা পদ্ধতিতে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছি। বহু-মেরুর বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে, চীন ও ফ্রান্স এবং চীন ও ইউরোপের উচিৎ স্বাধীনতা, উন্মুক্ততা এবং সহযোগিতার চেতনা মেনে চলা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়া এবং বিশ্বকে স্থিতিশীল ও ইতিবাচক শক্তি প্রদান করা।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চলতি বছর হল চীন ও আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। আমি আপনার সঙ্গে ২০২২ সালে চীন ও আর্জেন্টিনার বন্ধুত্বপূর্ণ মৈত্রী বর্ষ আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের বিনিময় ও সহযোগিতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চলিত বছর হল চীন ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। দু’দেশের সম্পর্ক পরিপক্ব ও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। মতভেদ অতিক্রম করা, একে অপরকে সম্মান করা এবং অভিন্ন কল্যাণ অর্জন করা হল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয় চীন।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়াও প্রেসিডেন্ট সি বেশ কয়েকজন বিদেশি নেতার সঙ্গে আরও ব্যাপক আকারে ব্রিক্স সহযোগিতা, চীন ও আফ্রিকার সম্পর্ক এবং চীন ও ইউরোপের সম্পর্কসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
লিলি/এনাম/রুবি