সি-বাইডেন বৈঠক শান্তির পথে সুদূরপ্রসারী অগ্রগতি
2022-11-15 14:40:58

নভেম্বর ১৫: গতকাল (সোমবার) বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

 

বৈঠকে উভয় নেতা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কৌশলগত সমস্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তরিক ও গভীর মতবিনিময় করেছেন।

 

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাস্তব পরিস্থিতি দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

 

প্রেসিডেন্ট সি বলেন,

 

‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুটি বড় দেশের নেতা হিসেবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিক-নির্দেশনা প্রদান এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করা উচিৎ। রাজনীতিকদের নিজ নিজ দেশের উন্নয়নকে সামনে রেখে চিন্তা করার পাশাপাশি অন্য দেশ এবং বিশ্বের সঙ্গে সহাবস্থানের উপায় নিয়েও ভাবা উচিৎ।’

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমানে যুগের পরিবর্তন অভূতপূর্ব উপায়ে সংঘটিত হচ্ছে। মানব সমাজ অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্ব একটি যুগ-সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কোন দিকে যাবে? এ নিয়ে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উদ্বিগ্ন।

 

তিনি বলেন,

 

‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পর্ককে ভালোভাবে পরিচালনা করবে বলে আশা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আজকে আমাদের বৈঠক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমাদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিশ্ব শান্তির আশা জোরালো করা, বিশ্বের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং অভিন্ন উন্নয়নে চালিকা শক্তি প্রদান করা উচিৎ। আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কৌশলগত সমস্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্তরিক ও গভীরভাবে মত বিনিময় করতে ইচ্ছুক। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে আবার ফিরিয়ে আনতে এবং দু’দেশ ও বিশ্বের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করতে আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশায় রইলাম।’

 

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের সামষ্টিক অবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিপিসি এবং চীন সরকারের দেশি ও বৈদেশিক নীতিমালা খোলা এবং স্বচ্ছ। আমরা চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান এগিয়ে নিচ্ছি। সুন্দর জীবনের প্রতি চীনা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে দৃঢ়ভাবে সংস্কার ও উন্মুক্ততা চালিয়ে যাচ্ছি এবং উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা অবিচলভাবে স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি পালন করে যাব এবং বরাবরই নিজের অবস্থানে অটুট থাকব।

 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব এখন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার পাশাপাশি অভূতপূর্ব সুযোগকে কাজে লাগানো উচিৎ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জিরো-সাম গেম হওয়া উচিৎ নয়, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য একে অপরের জন্য সুযোগ, চ্যালেঞ্জ নয়। চীন কখনও বর্তমান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা পরিবর্তন করতে চায় না, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চায় না এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হতে চায় না।

 

তাইওয়ান সমস্যার উৎস এবং এ সমস্যায় চীনের নীতি ও অবস্থান তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি বলেন, তাইওয়ান সমস্যা হলো চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থের কেন্দ্রীয় বিষয় এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ভিত্তি। তাইওয়ান সমস্যার সমাধান করা হলো চীনা জনগণের নিজেদের ব্যাপার এবং চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মাতৃভূমির ঐক্য রক্ষা করা এবং ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করা হলো চীনা জনগণ ও চীনা জাতির অভিন্ন ইচ্ছা। যুক্তরাষ্ট্র একচীন নীতি এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ইস্তাহার মেলে চলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

বৈঠকে দুই প্রেসিডেন্ট একমত হন যে দু’দেশের কূটনৈতিক দল কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রেখে নিয়মিত সংলাপ চালাবে, দু’দেশের আর্থিক দল সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং আর্থ-বাণিজ্যিক সমস্যা নিয়ে সংলাপ ও সমন্বয় চালাবে। তা ছাড়া, তারা ইউক্রেনের সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মত বিনিময়ও করেছেন। চীন বরাবরই শান্তির পক্ষে দাঁড়ায় এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপকে সমর্থন করে। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইইউ’র সার্বিক সংলাপ জারি থাকবে বলে আশা করে চীন।

 

লিলি/এনাম/রুবি