আজ (মঙ্গলবার) ইন্দোনেশিয়ার বালিতে শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী সপ্তদশ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। ‘অভিন্ন পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী পুনরুদ্ধার’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে চলছে এবারের সম্মেলন। প্রতিপাদ্যে বর্ণিত লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অবকাঠামো, ডিজিটাল রূপান্তর, এবং টেকসই জ্বালানি-শক্তির রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অবকাঠামোর রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত করা এবং সংকট মোকাবিলার শক্তি আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে। ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। বিশ্বের জন্য আরও সামুদয়িক ডিজিটাল পরিবেশ রূপান্তর করার উপর দৃষ্টি দেয়া হয়। টেকসই জ্বালানি-শক্তির রূপান্তরের ক্ষেত্রে জ্বালানি-শক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, স্মার্ট ও দূষণমুক্ত জ্বালানি প্রযুক্তির বৃদ্ধি এবং জ্বালানি-শক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
ভারতের জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি আর দীপক বলেছেন, ‘এই সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ, যা কোনো একটি দেশের পক্ষে একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমস্যাগুলোর প্রভাবও কেবল একটি দেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনে এই সমস্যাগুলোর এমন একটি বৈশ্বিক সমাধান বের করা দরকার, যা কোন একটি দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বহুপাক্ষিক এবং সম্মিলিত স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।’
অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদন’ অনুসারে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সালে আরও মন্থর হয়ে ২.৭% দাঁড়ায়। তা জুলাইয়ের পূর্বাভাস থেকে ০.২ শতাংশ কম। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এখন আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, এবং সমগ্র বিশ্ব আশা করে যে জি-২০ বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে একটি অনুঘটক হয়ে উঠবে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তারা আরও বেশি ভূমিকা পালন করবে। সব দেশের নেতাদের গঠনমূলক-ভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা এবং ইতিবাচক সমাধানে আসা উচিত। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ভূ-রাজনীতির করুণার ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ‘পুনরুদ্ধার’কে গুরুত্বারোপ একেবারে সময়োচিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় জি-২০-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জি-২০ সদস্যরা একত্রে বিশ্বের মোট জিডিপির ৮০%, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫% এবং বিশ্ব জনসংখ্যার ৬০% এর বেশির অধিকারী। জি-২০ বৈশ্বিক অর্থনীতি পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নেতৃত্বে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ক্রমশ বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গভীর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, চীন বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থার উন্নতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে জি-২০-কে প্রধান ভূমিকা পালনে সমর্থন করে চীন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেস উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণের বার্তা প্রকাশ করেছে। একই সময়ে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় চীনা অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা এবং চীনা বাজারের বিশাল উন্নয়ন সম্ভাবনা প্রদর্শিত হয়েছে। জি-২০ সম্মেলনে চীন বিশ্ব অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য নতুন অনুকূল সমাধান নিয়ে এসেছে। একটি অভিন্ন পুনরুদ্ধার অর্জনের জন্য আমাদের বিশ্বব্যাপী শান্তি কাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং শিল্প ও সরবরাহ চেইন মেরামত করা উচিত। বলা যায়, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়ন পুনরুদ্ধারের সূচনা করেছে।
শান্তি ও উন্নয়ন হল সারা বিশ্বের মানুষের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা এবং একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার পূর্বশর্ত। অন্যান্য দেশের সাথে যৌথভাবে উন্নয়নের জন্য উপযোগী আন্তর্জাতিক পরিবেশ তৈরি করতে চীনা-বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের লক্ষ্য এবং ‘অভিন্ন পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী পুনরুদ্ধার’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন প্রেরণা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চীন। (স্বর্ণা/এনাম/ছাই)