নভেম্বর ১৪: ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো’র আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বালি দ্বীপের জি-২০ গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
চীনে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিজাউহারি ওরাতমানগুন সম্প্রতি সিএমজিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইন্দোনেশিয়া ‘অভিন্ন পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী পুনরুদ্ধার’কে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে। চীন এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দেবে বলে তিনি মনে করেন। চীনের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর করতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীর উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক ইন্দোনেশিয়া।
আজ (সোমবার) শুরু হয়ে আগামি ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ সম্মেলন। তবে, শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে ১৫ ও ১৬ নভেম্বর।
শীর্ষসম্মেলন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, মহামারীর প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়। জি-২০ গোষ্ঠীর পালাক্রমিক সভাপতি দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, ডিজিটাল রূপান্তর ও জ্বালানির রূপান্তর এবং জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রভাবশালী দেশ হিসেবে চীন নিঃসন্দেহে এই অঞ্চল এবং বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেবে।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে যখন প্রেসিডেন্ট সি প্রথমবারের মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সফর করেন, তখন তিনি ইন্দোনেশিয়াকে প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেই সফরে ইন্দোনেশিয়ার কংগ্রেসে দেওয়া বক্তৃতায় প্রথমবারের মতো যৌথভাবে বিংশ শতাব্দীতে ‘সামুদ্রিক রেশম পথ’ নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
দিজাউহারি ওরাতমানগুন সেই বছর প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তৃতা শুনেছেন এবং পরের কয়েক বছরে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ এবং ইন্দোনেশিয়ার ‘সামুদ্রিক কেন্দ্রবিন্দু’ কৌশলের সংযোগ স্বচক্ষে দেখেছেন।
‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের প্রায় ১০ বছরে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের যৌথভাবে নির্মাণের পথ অব্যাহতভাবে গভীর ও বাস্তববাদী দিকে এগিয়ে চলছে। মোট ১৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জাকার্তা-বান্দুং হাই-স্পিড রেলওয়ে হলো চীন ও ইন্দোনেশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগে নির্মিত প্রতীকী প্রকল্প।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম হাই-স্পিড রেলপথ হিসেবে এই রেলপথ নির্মাণ হওয়ার পর জাকার্তা এবং বানদুংয়ের মধ্যে যাতায়াতের সময় আগের তিন ঘণ্টারও বেশি সময় থেকে কেবল ৪০ মিনিটে নেমে এসেছে। এই রেলপথ ইতোমধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার দ্রুত উন্নয়নের প্রতীক ও দু’দেশের মৈত্রীর আরেকটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
দিজাউহারি ওরাতমানগুন বলেন,
‘এটি বিদেশে চীনের নির্মিত প্রথম হাই-স্পিড রেলপথ। এটি ইন্দোনেশিয়াকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ দেবে। দ্বীপের চারপাশে হাই-স্পিড রেলের মাধ্যমে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।’
উন্নয়নশীল বড় দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীন ও ইন্দোনেশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের গভীর উন্নয়ন এবং শীর্ষনেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো চীন সফর করেছেন। বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের পর চীনে আসা প্রথম বিদেশি নেতা তিনি। মহামারীর পর প্রেসিডেন্ট জোকোর পূর্ব এশিয়া সফরের প্রথম গন্তব্য চীন। বেইজিংয়ে বৈঠকে দুই শীর্ষনেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামুদ্রিক সহযোগিতার নতুন প্যার্টান প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছেন। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের সাধারণ দিক নির্ধারণ করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে কৌশলগত নেতৃত্ব যোগিয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন,
‘আমার মনে পড়ে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্টদ্বয়ের বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রবাদ উল্লেখ করা হয় যে ‘হালকা জিনিস একসঙ্গে ধরতে এবং ভারি জিনিস একসঙ্গে বহন করতে হয়’। চীনা ভাষায় এর অর্থ হলো সৌভাগ্য ও দুর্ভোগ, যাই হোক, একসঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয়। সংকটের মুখে আমরা একে অপরকে সাহায্য করি এবং উন্নয়নের সুযোগের মুখে আমরা হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই। আমি মনে করি, এটাই চীন ও ইন্দোনেশিয়ার অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের ভিত্তি।’
লিলি/এনাম/রুবি