রোববারের আলাপন- চীনের ম্যারাথন খেলাধুলার উন্নয়ন
2022-11-13 19:43:56

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি তৌহিদ এবং আকাশ। 


আকাশ: তৌহিদ ভাই, আপনি আসলে কি ধরনের শরীরচর্চা এখন সবচেয়ে বেশি করেন?

তৌহিদ:... আপনি?


আকাশ: আমি আসলে দৌড়ানো ও বডি বিল্ডিং জাতীয় ব্যায়াম সবচেয়ে পছন্দ করি। চীনে আসলে অনেক দৌড়ানোর ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশেও কিছু আছে। প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় উত্তরার পার্কে রানিং করেছি। সে সময় আমি দেখেছি, অনেক বাংলাদেশি বন্ধু রানিং বা শরীরচর্চা করেন। তাহলে আমরা আজ রানিং নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করব, কেমন?


বন্ধুরা, আমরা প্রথমে চীনের দীর্ঘ দূরত্বে দৌড় বা ম্যারাথন উন্নয়নের ইতিহাস একটু আলোচনা করব।


বন্ধুরা,  ১৯০৪ সালে, তখন চীনে ছিং রাজবংশের সময় একটি আন্তর্জাতিক আন্ত দেশীয় দৌড়ানোর প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬ সালে বেইজিংয়ে একটি পনের (১৫) হাজার মিটার দৌড়ানোর প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। ওই প্রতিযোগিতা ছিল তখনকালের চীনের সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতা। ১৯৫৭ সালের  নভেম্বর মাসে, চিয়াং সু প্রদেশের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যা ছিল নয়া চীনের প্রথম ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

 

কয়েক যুগের মধ্যে চীনের ম্যারাথন খেলাধুলা অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ২০১১ সালে দেশব্যাপী ম্যারাথন প্রতিযোগিতার সংখ্যা ২২টিতে উন্নত হয়। তবে ২০১৯ সালে তা উন্নত হয়ে ১৮২৮টি হয়। ২০১৯ সালে দেশে প্রায় ৭১ লাখ মানুষ এ খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেন। ম্যারাথন চীনে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে।


ভাই, আপনি দৌড়ানো বা ম্যারাথন পছন্দ করেন? এ সম্পর্কে আপনার স্মৃতি আমাদের জানান। বাংলাদেশে এ খেলাধুলার উন্নয়নের অবস্থা আমাদের কিছু বলতে পারেন? 

তৌহিদ:...


আকাশ: আসলে দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়ানোর খেলাধুলা শরীরের জন্য অনেক ভাল। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?


তৌহিদ:…

ম্যারাথন। ইতিহাস, দূরত্ব এবং নিয়ম

"ম্যারাথন" শব্দের অর্থ এসেছে অ্যাটিকার গ্রীক শহর ম্যারাথনের নাম থেকে এবং এটি একজন গ্রীক যোদ্ধার কিংবদন্তির সাথে যুক্ত, যিনি বিজয়ের খবর নিয়ে এথেন্সে ছুটে গিয়েছিলেন। যাইহোক, ইতিহাসবিদদের মতে যারা ডকুমেন্টারি সূত্র আবিষ্কার করেছেন, এটি সম্পূর্ণ সত্য ছিল না এবং সম্পূর্ণরূপে সেখানেও ছিল না।

1896 সালে অলিম্পিক গেমসে ম্যারাথনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই দূরত্বটি ছিল সাড়ে ৩৪ কিলোমিটার।


এই দৈর্ঘ্য কোথা থেকে এসেছে?

"ম্যারাথন দূরত্বের দৈর্ঘ্য কত" এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে ঐতিহাসিক তথ্যের দিকে যেতে হবে। সুতরাং, 490 খ্রিস্টপূর্বাব্দে, গ্রীক সেনাবাহিনী এবং পারস্যদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রাচীন শহর ম্যারাথনের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এথেন্সকে জানানোর জন্য যে গ্রীকরা জিতেছে, বার্তাবাহক ফিডিপিডিসকে পাঠানো হয়েছিল, যিনি 42 কিমি এবং 195 মিটার দূরত্বে দৌড়েছিলেন। তিনি সুসংবাদটি জানিয়েছিলেন এবং ক্লান্তিতে মারা গিয়েছিলেন।


নিজেকে ফিট রাখতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। আর ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো দৌড়। যদি সকালে দৌড়াতে পারেন তাহলে শুধু নিজেই ফিট থাকবেন না বরং বিভিন্ন রকমের রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০মিনিট দৌড় সুস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ দরকার। তবে দৌড় বিভিন্ন রকমের আছে। এর মধ্যে দূরপাল্লার দৌড়, যা খেলাবিশেষ, তাকে ইংরেজিতে ম্যারাথন বলে।    

সাধারণত ম্যারাথন বা দূরপাল্লার দৌড়ে রাস্তা ব্যবহার করা হয় বলে, এটি রোড রেস বা রাস্তায় দৌড় খেলা নামে পরিচিত। প্রাচীন গ্রীক সৈনিক ফেইডিপ্পিডেস ম্যারাথনের যুদ্ধ জয়ের সংবাদ দৌড়ে এথেন্স নগরে নিয়ে এসেছিলেন। ম্যারাথনের যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ দৌড়ের নামকরণ করা হয় ম্যারাথন দৌড়।

তবে ইচ্ছে হলো আর ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিলো, তা ঠিক নয়। এর জন্য নিতে হবে প্রস্তুতি। লিভারপুল জন মুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিষয়ক বিজ্ঞানী ড. মার্ক লেইক বলেছেন, ম্যারাথন দৌড়, শুধু দৌড় নয় বরং এটি বিরাট শারীরিক চ্যালেঞ্জ এবং কোনোরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া ম্যারাথনে অংশ নেয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।


অন্তত তিন থেকে ছয় মাস প্রস্তুতি নিতে হবে ম্যারাথন দৌড়ের জন্য। যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি ও শারীরিকভাবে সমর্থ নন, শরীরের গঠনে অসামঞ্জস্য আছে, আঘাতের পূর্ব রেকর্ড আছে- তাদের এমন দৌড়ে অংশগ্রহন না করাই ভালো। এতে শরীরের হাড়, মাসলস, লিগামেন্ট এবং ধমনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হতে পারে। 


তবে, যারা প্রতিদিন দৌড়ান, তাদের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচদিন দৌড়াতে হবে এবং প্রতিবার আগের চেয়ে সময় বাড়াতে হবে। আর অন্তত চার থেকে ছয় মাস এ ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। ম্যারাথনের আগের সপ্তাহ থেকে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে, যাতে শরীর সেটা শক্তি হিসবে ব্যবহার করতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সবশেষে, ম্যারথনের পর যথাযথ বিশ্রাম নেবেন।

প্রথমবারের মত যারা ম্যারাথনে দৌড়বেন, তাদের জন্য কিছু টিপস

* ম্যারাথনে দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

* অন্তত চার থেকে ছয় মাস প্রস্তুতি নেবার জন্য সময় রাখা উচিত

* সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচদিন দৌড়াতে হবে, এবং প্রতিবার আগের চেয়ে সময় বাড়াতে হবে

* প্রস্তুতির সময় যথাযথ বিশ্রাম এবং আঘাত সারার সময় দিতে হবে

* ম্যারাথনের সপ্তাহে প্রচার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে, যাতে শরীর সেটা শক্তি হিসবে ব্যবহার করতে পারে।

 (আকাশ/তৌহিদ)