‘অ্যা নিউ জার্নি ফর চায়না’- শিরোনামে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে। ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত ওই নিবন্ধে চীনা রাষ্ট্রদূত গত ১৬ থেকে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিপিসির ২০তম কংগ্রসের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরেন। চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণ, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও চীনের স্বকীয় ধারার আধুনিকায়নের নতুন পথযাত্রায় শীর্ষ নেতা ও প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নির্দেশনা ও ২০তম কংগ্রসের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এগুলো চীনের পাশাপাশি কীভাবে বিশ্ব ও বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর হবে- সে বিষয়েও আলোকপাত করেছে তিনি।
আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব বিষয়টি দিকে।
নিবন্ধের শুরুতে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সিপিসির ২০তম কংগ্রেসে গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সিপিসির ৯৬ মিলিয়ন সদস্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত ২ হাজার ২৯৬ জন সদস্য ঐতিহাসিক এ কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি বলছেন, ইতিহাসের এমন এক ক্রান্তিকালে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের নতুন পথ-পরিক্রমায় রয়েছে চীন। এটি শুধু চীন নয়, বিশ্বের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত লি।
২০তম কংগ্রেসে সি চিনপিংয়ের পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হওয়া এবং তাঁকে কেন্দ্র করে দলের নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সি’র তাত্ত্বিকভাবনা- নতুন যুগে চীনা বৈশিষট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্র সিপিসির গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা এবং একে পার্টির জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশনা হিসেবে গণ্য করাকেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।
নিবন্ধে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত এক দশকে বিশেষ করে শেষ ৫ বছরে সিপিসির নেতৃত্বে চীনে নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূর করা এবং সার্বিকভাবে একটি মাঝারি ধরনের সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন।
লি জিমিং তার নিবন্ধে লিখেছেন, চীনের জনগণকে দ্বিতীয় শতবর্ষের লক্ষ্য অর্জনের পথে নেতৃত্ব দিতে পার্টিকে গুরুদায়িত্ব দিয়েছে ২০তম কংগ্রেস। আর দ্বিতীয় শতবর্ষের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বোতভাবে চীনকে একটি আধুনিক সমৃদ্ধ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা, চীনের স্বকীয় আধুনিকায়নের পথ বেয়ে জাতির মহান পুনর্জাগরণের পথে সর্বক্ষেত্রে জাতিকে পরিচালিত করা।
চীনের স্বকীয় ধারার আধুনিকায়নের একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেছেন, অন্য দেশের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর কিছু মিল রয়েছে। তবে, চীনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি একটি শান্তিপূর্ণ আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া। এটি প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে সবার জন্য বস্তুগত, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক উন্নতি সাধন করে।
আধুনিকায়নের এ লক্ষ্য অর্জনে ২০তম কংগ্রেস উচ্চমানের উন্নয়ন সাধনের অঙ্গীকার করেছে। নতুন উন্নয়ন ধারণার আলোকে এটি একইসঙ্গে চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মধ্যে একটি ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়ার কথা বলে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং মেধা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। আর উদ্ভাবন হবে চীনের আধুনিকায়ন উদ্যোগের মূলচালিকাশক্তি।
লি জিমিং লিখেছেন, গোটা প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করতে কংগ্রেস জনগণের গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সাস্কৃতিক আস্থা-বিনির্মাণের কথা বলেছে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। কারণ কংগ্রেস এবং চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব সবসময় জনগণকে সবকিছুর কেন্দ্রে রাখার কথা বলেন।
বিউটিফুল চায়না- বা সুন্দর চীন উদ্যোগের মাধ্যমে কার্বনমুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও এগিয়ে যাবে সিপিসি। কম্বোডিয়ার নমপেনে চলমান আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়ার নেতাদের সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং এবং জেনেভায় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭-এ চীনা নেতাদে বক্তব্যেও এ সব বিষয় বারবার উঠে এসেছে।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তার নিবন্ধে বলেছেন, আগামী ৫ বছরের জন্য ২০তম সিপিসি কংগ্রেসের গৃহীত এজেন্ডায় যে চীনের স্বকীয় ধারার আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে তা- বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও সুযোগ নিয়ে এসেছে। এটি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বের এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প ধারনা দিয়েছে সবার সামনে।
সিপিসি জাতির একত্রীকরণ উদ্যোগ দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নেবে উল্লেখ করে লি জিমিং লিখেছেন, চীন কখনোই আধিপত্যবাদ বা সম্প্রসারণবাদকে লালন করে না। বরং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনটি গঠনে- প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের তাত্ত্বিক ধারণার বাস্তবায়নেও প্রতিশ্রুতি রয়েছে ২০তম কংগ্রেসের।
বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে চীনের এ নতুন পথযাত্রা- বিশ্ববাসী বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের উষ্ণ সমর্থন পেয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কাছে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় নতুন উন্নয়ন দর্শনের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ সমাজতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বের উন্নয়নকামী দেশগুলো অব্যাহত সহায়তার চীনা নীতির ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। মানবাতির অভিন্ন ভবিষ্যতের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার চীনা নীতিরও প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
নিবন্ধে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও চীনকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, দুই দেশ বহুপাক্ষিকতাবাদ এবং মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির জোর সমর্থক। সিপিসি’র ২০তম কংগ্রেসে গৃহীত রেজ্যুলেশন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন সুযোগ আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত লি।
দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ এবং উচ্চপর্যায়ে উচ্চমানের সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চীন গোটা মানবজাতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত চীনা রাষ্ট্রদূতের।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।