চীনের নতুন উন্নয়ন বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে
2022-11-11 15:45:13

বন্ধুরা, অনেকেই মেলায় বেড়াতে পছন্দ করেন, তাই না? যখন আমি বাংলাদেশে ছিলাম, তখন বই মেলা, বাণিজ্য মেলাসহ বেশ কিছু মেলায় গিয়েছি এবং অনেক মজাও করেছি। চীনে আমার বিভিন্ন মেলায় যাওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে, তবে আমার মনে একটি বিশেষ মেলা খুব গভীর দাগ কেটেছে। আর সেটি হল চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য পাওয়া যায়, দেখা যায় বিশ্বের শীর্ষ মানের আধুনিক প্রযুক্তি। একটি শব্দে এই মেলাকে বর্ণনা করা যায়: অসাধারণ। চলতি বছর চীন পঞ্চম বারের মতো এই মেলা আয়োজন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে: এবারের মেলায় কী কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কর্মপ্রতিবেদনে বলেছেন, চীন উন্মুক্তকরণের মৌলিক নীতিতে অবিচল থাকবে, চীনের নতুন উন্নয়ন বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, এবং উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি বিনির্মাণে চেষ্টা করে যাবে। আর এর লক্ষ্য হবে বিভিন্ন দেশের জনগণের জন্য অভিন্ন কল্যাণ বয়ে আনা।

২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা সফলভাবে পাঁচ বার আয়োজিত হয়েছে। এই মেলা নতুন উন্নয়ন কাঠামোর জানালা, বহুপক্ষবাদের মঞ্চ, এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণপণ্যে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছরশেষে, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা ইতোমধ্যে বিশ্বের নতুন পণ্য প্রকাশের স্থান, নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শনের স্থান, উদ্ভাবন সেবা সবার সামনে হাজির করার স্থান হয়েছে। চলতি বছরের আমদানি মেলায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৮৪টি অংশ নিচ্ছে, যা আগের বছরের চেয়েও বেশি। প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানি আবারও মেলায় অংশ নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুবিধাজনক নীতিমালা হল আমদানি মেলা কার্যকর হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর সুবিধা, শুল্ক সুবিধা, বাজারে প্রবেশের সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত এমন ধারা সুবিধা সরবরাহকারী নীতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯টিতে। চীনের শুল্ক বিভাগে আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার নিয়মিত তত্ত্বাবধান সেবা সংস্থা স্থাপিত আছে। এর ফলে পণ্যের শুল্ক বিভাগে প্রবেশে কোনো কাগজপত্র লাগে না, প্রদর্শনের গাড়ি পরে পণ্য হিসেবে বিক্রি করা যায়, ইত্যাদি।

চলতি বছর হল চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আয়োজনের পঞ্চম বছর। বিশ্বের প্রথম আমদানিকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মেলা হিসেবে ৫ বছরে মেলাটি পুরোপুরিভাবে আন্তর্জাতিক ক্রয়, পুঁজি বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্মুক্ত সহযোগিতার মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উন্মুক্তকরণের গুরুত্ব বার বার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, অর্থনীতির বিশ্বায়ন একটি বড় প্রবণতা, কেউ তাকে থামিয়ে দিতে পারবে না। চীনের বাজার অনেক বড়, সবাইকে চীনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্মুক্ত ধরনের বিশ্ব অর্থনীতি স্থাপন করতে ইচ্ছুক, যাতে উন্মুক্তকরণের উষ্ণ বাতাস সারা বিশ্বে বয়ে যায়।

বর্তমান বিশ্বে অনেক অনিশ্চয়তা আছে, তবে পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা সময়মতো সফলভাবে আয়োজিত হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, বিশ্বের সঙ্গে চীন যৌথভাবে উন্নয়নের ধারায় চলতে চায়।

চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা যেন একটি সোনার চাবি, যা শুধু চীনের নয়, বরং গোটা বিশ্বের। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আয়োজন করা হল চীনের উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণের বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা। পাঁচ বছরে মেলার বাণিজ্যিক পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে; অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাও বাড়ছে।

চলতি বছরের চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় ১৪৫টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নিচ্ছে। মেলার কাঠামো আরও সুসংহত হয়েছে। ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনীতি অংশীদারিত্বের সম্পর্ক চুক্তি’ তথা আরসিইপি’র সদস্যদেশগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ,  শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশসমূহও এতে অংশগ্রহণ করছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান বিশ্বের এই বৃহত্তম পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের মঞ্চকে উপেক্ষা করতে পারে না।

বর্তমান বিশ্বে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, উন্মুক্তকরণ এবং সংস্কার ও উদ্ভাবন একটি বড় প্রবণতা। সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কর্মপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন অব্যাহতভাবে উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করবে, বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করবে, বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ সহযোগিতার মানকে উন্নত করবে, চীনের নতুন উন্নয়ন দিয়ে বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, উন্মুক্ত ধরনের বিশ্ব অর্থনীতি ত্বরান্বিত করবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের জন্য আরো বেশি কল্যাণ সৃষ্টি করবে।