বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শক্তিশালী প্রণোদনা আরসিইপি
2022-11-10 18:35:03

নভেম্বর ১০: এবার শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত পঞ্চম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা হচ্ছে ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক চুক্তি’ (আরসিইপি) কার্যকর হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম আমদানি মেলা। আরসিইপি’র সদস্য দেশগুলোর অনেক কোম্পানি এতে অংশগ্রহণ করেছে। তারা বলেছেন যে আরসিইপি চুক্তি কার্যকর হওয়ার ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশে বিশাল সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিল্প ও সরবরাহ চেইনের একীকরণ এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী অনুপ্রেরণা যোগ করেছে এ চুক্তি।

‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক চুক্তি’ (আরসিইপি) কার্যকর করেছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আসিয়ানের ১০টি সদস্য তথা ১৫টি দেশ। এই বছরের ১লা জানুয়ারি চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার পর আরসিইপির সদস্য দেশগুলির অনেক কোম্পানি চীনা বাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলাকে কাজে লাগাচ্ছে।

থাইল্যান্ড হল প্রথমে আরসিইপি কার্যকর করা দেশগুলোর অন্যতম। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন খাবার, কৃষি পণ্য এবং ফল-মূল সব সময় চীনা গ্রাহকদের পছন্দের পণ্য। শাংহাইয়ের রয়্যাল থাই কনস্যুলেট জেনারেলের বাণিজ্যিক কনসাল জুয়াং ইয়ান লান জানান, বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর থেকে থাইল্যান্ড, চীন এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে ব্যাপকভাবে উন্নীত করেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেছে। এটি আসলে অবাধ বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি, সেবা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

জুয়াং ইয়ান লান জানান, “আরসিইপি থাইল্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্য চুক্তি। বিস্তৃত বাজারে প্রবেশের সুযোগ ছাড়াও আরসিইপি’র আরেকটি সুবিধা হল এর ‘নতুন উৎপত্তিস্থল’ নিয়মটি এই অঞ্চলের মধ্যে সরবরাহ চেইন একীকরণকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।  আমি মনে করি, আরসিইপি এ অঞ্চলে স্বচ্ছতা, অভিন্নতা এবং নিয়মের পূর্বাভাস-যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে।”

থাইল্যান্ডের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন), থাইল্যান্ড এবং আরসিইপি সদস্য দেশগুলির মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬,৯০৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।

টানা পাঁচ বছর ধরে শাংহাই আমদানি মেলায় অংশগ্রহণ করা নিউজিল্যান্ডের একটি সুপরিচিত দুগ্ধ কোম্পানিও মনে করে, আরসিইপি শুল্ক হ্রাস নীতি কোম্পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা আনার ক্ষেত্রে আশাবাদী। কোম্পানির সিনিয়র পণ্য ম্যানেজার জাং শান লিন বলেন, আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর থেকে শুল্ক আরও কমানোর ফলে পণ্যের দামও কমেছে। ফলে চীনের বাজারে প্রতিযোগিতা শক্তি আরও বাড়ছে। কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের চাহিদাগুলি আরও ভালভাবে মেটাতে এবং পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে মনোযোগ দিতে পারে।

তিনি বলেন, “চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে আমাদের পণ্য সরবরাহ প্রায় দুই মাস লাগতো। চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর প্রায় এক মাসের মধ্যে পণ্য চীনে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। সামগ্রিক তরল দুধের শুল্ক কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। এই বছর বিশ্বব্যাপী দুধের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার প্রেক্ষাপটে এটা আমাদের জন্য একটি বিশাল সমর্থন। ভোক্তারা সস্তায় পণ্য কিনতে পারছে।”

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম ১০ মাসে ১৪টি আরসিইপির সদস্য দেশে চীনের আমদানি ও রপ্তানি যথাক্রমে ৮.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর সুযোগ-সুবিধা বেড়েই চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে আরসিইপি অবাধ বাণিজ্য এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমর্থন ও রক্ষা করার শক্তিশালী সংকেত দিয়েছে। তা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী প্রেরণা।

(ইয়াং/এনাম/ছাই)