নভেম্বর ৯: ফিউচারিস্টিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেটাভার্স দৃশ্য; জাদুকরী ইনস্টলেশন প্লায়ার যা "গ্রিন হ্যান্ড"-কে কয়েক সেকেন্ডে একজন দক্ষ কারিগর করে তোলে; "সুপার আর্ক নাইফ", যা অবিকল এক ক্লিকে ক্ষত দূর করে;...পঞ্চম চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় এমন অনেক নতুন পণ্য বিশ্বে বা এশিয়ায় বা চীনে প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে। এসব পণ্য দর্শকদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে, বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং উদ্ভাবনের মঞ্চ শেয়ার করার জন্য সারা বিশ্বের কোম্পানিগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করেছে।
বিগত ৫ বছরে, শাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার আরও বেশি বিশ্বব্যাপী "অনুরাগী" সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, উদ্ভাবন একটি শক্তিশালী আকর্ষণ। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রথম চারটি আমদানি মেলার সময় ১৫০০টিরও বেশি নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি ও নতুন পরিষেবা প্রকাশিত হয়। এই বছরের মেলায় ৯৪টি নতুন পণ্যের লঞ্চ ইভেন্টে মোট ১৭০টিরও বেশি নতুন পণ্য প্রকাশ করার কথা। আগের বারের চেয়ে লঞ্চ ইভেন্টের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং নতুন প্রকাশিত পণ্যের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে: কেন বেশি বেশি নতুন পণ্য প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো শাংহাই আমদানি মেলাকে বেছে নিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য কাউন্সিলের সভাপতি ক্রেগ অ্যালেন বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং ঘনিষ্ঠ। অনেক মার্কিন কোম্পানি চীনা বাজার নিয়ে আশাবাদী। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি এবং এ দেশে ৪০ কোটিরও বেশি মধ্যম আয়ের মানুষ রয়েছেন। গত পাঁচ বছরে, চীনে নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা থেকে শুরু করে, প্রদর্শক থেকে বিনিয়োগকারী হওয়া পর্যন্ত, বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি আমদানি মেলার মাধ্যমে চীনের বড় বাজারে তাদের উদ্ভাবন স্থাপনের সেরা জায়গা খুঁজে পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রোচে কম্পানি তৃতীয় আমদানি মেলায় বিরল রোগের মেরুদন্ডী পেশীবহুল অ্যাট্রোফি (এসএমএ)-এর চিকিত্সার জন্য একটি উদ্ভাবনী মুখে খাওয়ার ওষুধ আইমানক্সিন প্রদর্শন করে। এটি এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে এবং সত্যিকার পণ্যে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের আমদানি মেলায় চীনের বড় বাজারের সুযোগ ভাগ করে নেওয়ার জন্য সকল দেশের সকল ব্যবসায়ীকে সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি সুযোগ উপভোগ করতে পারবে।
বাস্তবে চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা নিজেই একটি উদ্ভাবন, যা চীনের উদ্ভাবন-চালিত উন্নয়ন কৌশলের সাফল্যের সাক্ষী। বিশ্ব মেধাসত্ব সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, চীনের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক ২০১২ সালের ৩৪তম থেকে ২০২২ সালে ১১তম স্থানে উঠে এসেছে। এর পেছনে রয়েছে চীনের ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্রমাগত উন্নতি এবং উচ্চমানের উন্নয়নের ধারাবাহিক অগ্রগতি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনের আধুনিকীকরণ অভিযানের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্ভাবনের মূল অবস্থানকে মেনে চলতে হবে। এটি সব ধরণের উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য একটি ভিত্তিস্বরূপ। টানা পাঁচ বছর ধরে মেলায় অংশগ্রহণ করা হানিওয়েলের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, তাঁর কোম্পানি অব্যাহতভাবে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী প্রদর্শন করতে থাকবে এবং যৌথভাবে উচ্চ-উন্নয়নের জন্য আরও চীনা অংশীদারের সাথে সহযোগিতা করবে।
আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা হল চীনের জন্য উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ প্রদর্শনের একটি জানালা। ৫ নভেম্বর প্রকাশিত "বিশ্ব উন্মুক্তকরণ প্রতিবেদন, ২০২২" অনুসারে, চীনের উন্মুক্ততা সূচক ২০১২ সালের ০.৭১০৭ থেকে ২০২০ সালে ০.৭৫০৭-এ উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে উন্মুক্ততায় চীন ৪৭তম থেকে ৩৯তম স্থানে উঠে এসেছে। সকল দেশের সকল পক্ষের সাথে চীনের উন্মুক্ততার সুযোগ ভাগ করার প্রতিশ্রুতি বিদেশী সংস্থাগুলোকে "আশ্বাস" দিয়েছে। টানা পাঁচ বছর আমদানি মেলায় অংশগ্রহণ করা কোয়ালকমের চীনা শাখার সভাপতি মেং ফু জানান, যতদিন পর্যন্ত চীনের উন্মুক্তকরণের নীতি অপরিবর্তিত থাকবে, ততদিন বিদেশী কোম্পানিগুলো চীনে আরও ভালো করার সুযোগ পাবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)