মৌমাছি পালকের সুন্দর ভবিষ্যৎ
2022-11-08 14:56:57

মৌমাছি পালক তাহিরজান তোহতি (Tahirjan Tohti) হলেন চীনের সিনচিয়াংয়ের কাশগরের সাই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি অনেক বড় এবং সুন্দর। কিন্তু আগে এতো ভালো ছিল না। তিনি বলেন,

“আগে আমাদের বাড়িঘরের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। আমাদের জীবনযাত্রার মান ছিল নিম্ন পর্যায়ের। সমবায় প্রতিষ্ঠার পর আমাদের জীবন অনেক বদলে গেছে। আমরা নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তরিত হয়েছি, ওয়াশিং মেশিন ও রেফ্রিজারেটর কিনেছি। এ ছাড়া, আমরা গাড়িও কিনেছি।”

তাহিরজান তোহতি মৌমাছি পালন করছেন ১৮ বছর ধরে। কিন্তু আগে একা মৌমাছি পালন করার কারণে মধু উত্পাদনের পরিমাণ খুবই কম ছিল এবং মধু বিক্রি করতে গিয়েও নানান ঝামেলা পোহাতে হতো।

২০১৯ সালে সাই গ্রামে থুহা তেল কোম্পানির কর্মগ্রুপের সহায়তায় তাহিরজান তোহতি ও তাঁর বড় ভাই কাদির তোহতি  একটি মৌমাছি পালন কোম্পানি গড়ে তোলেন। তাঁরা মৌমাছি পালন ছাড়াও প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর কোম্পানি বিভিন্ন ধরণের মৌমাছিসংশ্লিষ্ট পণ্য উত্পাদন করে। তাঁদের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।

স্ত্রী আভাগুল মেমেত স্বামী তাহিরজান তোহতিকে অনেক সমর্থন করেন। তিনি মধুর নিত্যনতুন বাজার খোঁজার দায়িত্ব পালন করেন এবং উইচ্যাট গ্রুপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে শেখেন। এ সম্পর্কে আভাগুল মেমেত বলেন,

“আমাদের সমবায়ের মধু পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করা হয়। কাশগর ছাড়াও আমাদের মধু সিনচিয়াংয়ের ভিতরে ও বাইরে অনেক জায়গায় বিক্রি হয়। সিনচিয়াংয়ের আর্তুশ ও  জিয়া শি এবং কানসু, বেইজিং, ছুছিং, ইত্যাদি এলাকায় আমাদের মধু যায়। আমরা উইচ্যাটের মাধ্যমে এসব জায়গায় মধু বিক্রয় করি। আমাদের মধু অনেক জনপ্রিয়। আমি এখন আমার জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। এটা করতে মজা আছে।”

তাহিরজান তোহতি বলেন, সমবায় প্রতিষ্ঠা তাদের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন,

“সমবায় প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের ব্যবসার পরিধি খুবই ছোট ছিল। সমবায় প্রতিষ্ঠার পর আরও বেশিসংখ্যক মানুষ মৌমাছি পালন করতে শিখেছেন। আমাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আমাদের বার্ষিক মধু উত্পাদনের পরিমাণ ৬০ টনেরও বেশি। সমবায়ের বার্ষিক আয় ২০ লাখ ইউয়ান আরএমবি’রও বেশি।”

বর্তমানে সমবায়ের সদস্য ৫৬ জন। সদস্যদের গড় আয় আগের চেয়ে ৩০ হাজার ইউয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখ্য, সমবায়ের ১৭ জন সদস্য ছিলেন নিবন্ধিত পরিবারের। সমবায় তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়াও, দেশের নীতি অনুযায়ী, দরিদ্র পরিবার হিসেবে মৌমাছি পালনের সময় তারা নির্দিষ্ট ভর্তুকি ও ঋণ পেয়ে থাকেন। সাই গ্রামে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের থুহা শাখা কোম্পানির কর্মগ্রুপের দারিদ্র্যবিমোচন ক্যাডার সং হুয়া বলেন,

“চীন সরকার দরিদ্র পরিবারকে একটি মৌচাকের জন্য ১ হাজার ইউয়ান ভর্তুকি দেয়। দরিদ্র পরিবারকে মৌমাছি পালনের জন্য চীন সরকার ৫০ হাজার ইউয়ান স্বল্পসুদে ঋণও প্রদান করে।”

২০১৯ সালে সমস্ত সাই গ্রাম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন গ্রামবাসীরা স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

তাহিরজান তোহতি ফুল পছন্দ করেন। প্রতিবছর সর্বত্র ফুল ফোটে। তার মতো মৌমাছি পালনকারীরা অমৃতকে অনুসরণ করেন। চীনের ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা ও শক্তিশালী লজিস্টিক সিস্টেম সমবায়ের মধু বিক্রয়কে আরও সহজ করেছে। গত বছর তাহিরজান তোহতি’র পরিবার মধু বিক্রয় থেকে আয় করে ১.৭ লাখ ইউয়ান।

সমবায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তাইরজান তোহতির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। তিনি বলেন,

“ভবিষ্যতে আমি আমাদের নিজেদের মধুর ব্রান্ড গড়ে তুলতে চাই; আরও বড় আকারের একটি কারখানা নির্মাণ করতে চাই। তখন আমরা আমাদের মধু ও মধুজাত পণ্য আরো বেশি শহরের সুপারমার্কেটে বিক্রয় করবো।”  (ছাই/আলিম)