বৈশিষ্ট্যময় পণ্য ও সেবায় ভরপুর চীনের আমদানি মেলা
2022-11-07 15:25:29

     

                                        

পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা চলছে। এবারের মেলায় মোট ২৮৪টি ফরচুন ৫শ’ এবং বিভিন্ন খাতের অনেক নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। গতবারের মেলার প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় আবারও অংশ নিয়েছে। মেলার ৬টি প্রদর্শনী এলাকায় কয়েকশ নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি ও নতুন পরিষেবা প্রদর্শিত হচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ বিশ্বে, এশিয়ায়, এবং চীনে প্রথম প্রদর্শিত হচ্ছে।

 

আমদানি মেলায় বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রগামী ও নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেরা পণ্যের প্রদর্শনী করছে। খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রদর্শনী এলাকায় প্রদর্শকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং উৎসস্থল সবচেয়ে বিশাল। প্রধান বীজ শিল্প ও চারটি খাদ্য ব্যবসায়ী এতে অংশ নিচ্ছে। আমদানি মেলার প্রদর্শনী বিভাগের খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রদর্শনী এলাকার ম্যানেজার ছু থিয়ানওয়েনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, চলতি বছর নতুন করে ফসল বীজ শিল্পের বিশেষ এলাকা স্থাপনা করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘বিশেষ এলাকাটি দেশের বীজ শিল্পকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে। এখানে বায়ার, কর্টেভা, সিনজেন্টাসহ বিশ্ব বীজ শিল্পের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান তাদের বীজ উদ্ভিদ সুরক্ষা ও ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে সৃজনশীল প্রযুক্তির সাফল্য ও সমাধান পরিকল্পনা প্রদর্শন করছে।’

 

গাড়ি প্রদর্শনী এলাকায় বিশ্বের ১৫টি ব্র্যান্ড ভ্যালু গাড়ি প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক যানবাহন অনুবিভাগ স্থাপন করেছে। তারা গাড়ি শিল্পের নিম্ন-কার্বন রূপান্তর ফোকাস করছে। অনেক ব্র্যান্ড নতুন মডেল ও নতুন জ্বালানীর গাড়ি প্রদর্শন করছে।

 

চলতি বছর প্রযুক্তি সরঞ্জাম প্রদর্শনী এলাকায় নতুন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনুবিভাগের পাশাপাশি ক্রীড়া, অফিস, শিল্প, শিক্ষা, শিল্প, খাদ্য পরিবেশন ও বিনোদনসহ ৭টি ব্যবহারিক অনলাইন অভিজ্ঞতা অঞ্চল স্থাপন করেছে। এছাড়া, অধিকতরভাবে ডিজিটাল শিল্প অটোমেশন, জ্বালানি নিম্ব-কার্বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন উপবিভাগ সুবিন্যস্ত করেছে, সম্মিলিতভাবে অগ্রবর্তী প্রযুক্তি ও উচ্চমানের সরঞ্জাম প্রদর্শিত হচ্ছে।


প্রথম থেকে পঞ্চম মেলায় প্রদর্শনী এলাকার পরিবর্তন সম্পর্কে আমদানি মেলার প্রদর্শনী বিভাগের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার থিয়ান ইয়ে’র গভীর অনুভূতি আছে।

 

তিনি বলেন, ‘গত দু’বছরের বেশি সময়ে বিশেষ করে মহামারী চলাকালে সময়মতো অনুষ্ঠিত সরাসরি বৃহত্ জাতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম হিসেবে আমদানি মেলায় অংশগ্রহণটা বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের একটি মতৈক্যে পরিণত হয়েছে। তারা চীনা বাজার জেনে চীনের সুপ্তশক্তি আবিষ্কার করেছে। যেমন: গত বছর জাইলেম শাংহাইয়ের ছাংনিং বিভাগে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এরকম উচ্চ বৈজ্ঞানিক ও উচ্চ মানের উত্পাদন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র শাংহাইয়ে স্থাপিত হয়েছে। আসলে এটি একটি বড় সাফল্য। এটা এক ধরনের 'বাড়তি প্রভাব'।’

 

আগের আমদানি মেলা ছিল উচ্চ নির্ভুল চিকিৎসা যন্ত্রের জমায়েত স্থান। চলতি বছর চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ-চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যরক্ষা প্রদর্শনী এলাকায় বিশ্বের প্রথম ১৫টি ওষুধের বৃহৎ ও বিশ্বের প্রথম ১০টি চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বিশেষ করে রেডিওথেরাপি, জিন সনাক্তকরণ, ইন ভিট্রো ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা চিত্র, জীববিজ্ঞান ও কিডনি চিকিৎসার মতো উপবিভাগে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করেছে।

 

সবার জীবনযাপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হবার কারণে আমদানি মেলায় পণ্য প্রদর্শনী এলাকা হচ্ছে সবসময় সবচেয়ে সরগরম প্রদর্শনী এলাকাগুলির অন্যতম। এবারের মেলায় বিশ্বের ১০টি প্রসাধনী সামগ্রীর ব্র্যান্ড হাজির হয়েছে। পাশাপাশি, বিশ্বের তিনটি ফ্যাশন এবং উচ্চ মানের ভোগ্যপণ্য দৈত্য জড়ো হয়ে “নতুন” জীবন, “কুল” বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং “সবচেয়ে” ফ্যাশন—এ তিনটি দিককে কেন্দ্র করে বিশ্ব ব্র্যান্ড জমায়েত স্থান এবং আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ডসেটার তৈরি করেছে। একই সময় পরিষেবা বাণিজ্য প্রদর্শনী এলাকা “ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে সবুজ নিম্ন-কার্বন ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা” প্রতিপাদ্য ধারণ করে বহু সংখ্যক পরিষেবা, মালবাহী রসদ, আন্তর্জাতিক ডেলিভারি ও সরবরাহ চেইনসহ বিভিন্ন খাতের নেতৃস্থানীয় এন্টারপ্রাইজদের আকর্ষণ করেছে। এতে নতুন করে সাংস্কৃতিক বিনোদন ও খেলার শ্রেণী স্থাপন করা হয়েছে।

 

এছাড়া, চলতি বছর আমদানি মেলার হাইলাইটগুলির অন্যতম হলো নতুন করে “চীনের গত দশ বছর—উন্মুক্তকরণ সাফল্য প্রদর্শনী” সামগ্রিক প্রদর্শনী এলাকা স্থাপন করা হয়। এর মধ্য “প্রদর্শক থেকে বিনিয়োগ ব্যবসায়ীতে” বিশেষ অনুবিভাগে শিল্প স্মার্ট উত্পাদন এবং স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রের সাফল্য বিনিয়োগ ও শ্রেষ্ঠ অনুশীলন উদাহরণ, বিদেশী প্রতিষ্ঠান চীনে স্থাপিত অপটিক্যাল শিল্প ইকো-সিস্টেম প্রকল্প, বিশ্ব গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, উত্পাদন সরবরাহ ঘাঁটি ইত্যাদি, আমদানি মেলাসহ বিভিন্ন উন্মুক্তকরণ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন বিদেশী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বাড়তে থাকা বিনিয়োগ এবং বিশ্বকে চীনের উন্নয়ন লাভকে ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত প্রদর্শন করে।

 

দায়িত্বশীল ব্যক্তি গু ওয়েনছিয়ান বলেন, ‘শিল্প নির্মাণ জোন প্রধানত গাড়ি প্রদর্শনী এলাকার ও প্রযুক্তি সরঞ্জাম উপ-প্রদর্শনী এলাকার ১৩টি প্রদর্শক নিয়ে গঠিত। এর আয়তন প্রায় ১ হাজার ৮শ’ বর্গমিটার। এতে প্রদর্শিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সবুজ নিম্ন-কার্বন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অখণ্ড বিদ্যুত্চক্র ও ডিজিটাল রূপান্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের বিনিয়োগ, এবং চীনে স্থাপিত গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র ও উত্পাদন ঘাঁটি। যেমন: বিদেশে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের বৃহত্তম বিনিয়োগ মাত্রা ৭শ’ কোটি মার্কিন ডলারের স্টোরেজ চিপ প্রকল্প; জার্মানির কার্ল জেইস এজি’র অপটিক্স শিল্প ৪.০ স্বাস্থ্য অপটোমেট্রি শিল্প ইকো-সিস্টেম প্রকল্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্ডাই’র প্রথম বিদেশি হাইড্রোজেন জ্বালানি সেল সিস্টেম উত্পাদন বেস ইত্যাদি। এখানে দেখা যাচ্ছে গুরুত্বসহকারে শিল্প রূপান্তর ও আপগ্রেডিং’র ইতিবাচক ভূমিকা এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ফলাফলের প্রতিফলন।’

 

জানা গেছে, মোট ১৪৫টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পঞ্চম আমদানি মেলায় অংশ নিচ্ছে। মোট ১২৭টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য প্রদর্শনীতে এবং ৬৬টি দেশ ও ৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশের সামগ্রিক প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। দু’টোর সংখ্যাই গতবারের মেলার চেয়ে বেশি। এছাড়া, আরসিইপি’র সদস্য দেশ, “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশ, এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রদর্শক দেশের সংখ্যাও গতবারের চেয়ে বেশি।

 

(প্রেমা/এনাম)