বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে শরৎকাল শুরু হয়েছে। কমে এসেছে বিদায় নেওয়া গ্রীষ্মকালের ভয়াবহ দাবদাহ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাপপ্রবাহ কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে পারে। আগামী কয়েক দশকে বিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে দাবদাহ চরম আকার ধারণ করতে পারে। এতে করে সেখানকার মানবজীবন অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। গত অক্টোবার মাসে জাতিসংঘ ও রেড ক্রস এক তাদের প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কাজনক তথ্য জানিয়েছে। প্রচণ্ড উষ্ণতা ও দাবদাহ মানুষের জীবনে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করবে বলে সতর্ক করা হয়েছে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।
প্রতিবেদনে তারা পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, হর্ন অফ আফ্রিকা, সাহেল এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় তাপ বৃ্দ্ধির পরিমাণ ‘মানুষের শারীরবৃত্তীয় এবং সামাজিক সীমা অতিক্রম করবে’। এতে নানা বিপর্যয় হতে পারে, যা প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে। চলতি নভেম্বর মাসে মিশরে জাতিসংঘের কপ ২৭ (COP27) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বিষয়ে শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস (আইএফআরসি) এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান ও সোমালিয়ায় এ বছর হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের কারণে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা গেছে। তারা বলেছে সম্ভাব্য পুনরাবৃত্ত তাপ বিপর্যয় এড়াতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এমন পদক্ষেপগুলি তালিকাভুক্ত করা যা চরম তাপের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলি হ্রাস করতে পারে।
পাশাপাশি, তাপপ্রবাহের কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শস্যের উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। যেমন, গত বছর ‘বিশ্বকে গম খাওয়ানোর’ ঘোষণা দেওয়া ভারতে গমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কম হয়েছে। তাই হঠাৎ করেই দেশটি গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে মারাত্মক গম-আটা-ময়দা সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রচণ্ড তাপমাত্রা থাকার কারণে যারা ঘরের বাইরে কাজ করেন, তাদের শরীরে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সতর্ক করে বলা হয়, বড় আকারের দুর্ভোগ ও জীবনহানি, গোটা বিশ্বে ব্যাপক পরিমাণ জনসংখ্যার স্থানান্তরসহ নানা সমস্যা সামনে চলে আসবে। বার্ধক্য, উষ্ণতা ও নগরায়নের সম্মিলিত প্রভাব আগামী দশকগুলিতে উন্নয়নশীল দেশে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র তাপের কারণে নানা সংকট দেখা দেবে এবং ভবিষ্যতে মৃত্যুর হারও বিস্ময়করভাবে বেড়ে যাবে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে কৃষি শ্রমিক, শিশু, বয়স্ক,গর্ভবতী এবং মাতৃদুগ্ধ পান করানো নারীরা অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু সঙ্কট নিয়ন্ত্রণ না করায়, চরম আবহাওয়ার ঘটনা, যেমন দাবানল এবং বন্যা, ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে,"। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এমন মন্তব্য করেছেন।
"ক্ষুধা, সংঘাত ও দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা দেশগুলোতে নির্মম প্রভাব বেশি দেখা যাবে।"
আরএফআরসি মহাসচিব জগান চাপগাইন কোপ ২৭ এর দেশগুলিকে জলবায়ু অভিযোজন এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মানবিক সংস্থাগুলিকে আরও "তাপ রোধের উপযুক্ত" জরুরি আশ্রয় ও "শীতল কেন্দ্র" প্রস্তুত করা এবং বসবাসের এলাকায় চরম তাপ প্রভাব রোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ- বিশেষ করে ইংল্যান্ডে ২০০৪ সাল থেকে তাপ রেকর্ড করা শুরু হয়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এই বছর তাপপ্রবাহের কারণে এবং অতিরিক্ত গরমে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের গরমে বা গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইংল্যান্ডে এই বছর গ্রীষ্মকালীন দাবদাহে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ২৮০৩ অতিরিক্ত মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচণ্ড তাপ থেকে উদ্ভূত জটিলতার কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দেশটির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সি।