প্রকৃতি মানুষকে লালন করে, মানুষ প্রকৃতির জন্য কি করতে পারে!
2022-11-04 15:11:11

চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘সব প্রাণ এই পৃথিবী লালন করে, সব প্রাণ নিজের চাহিদা মতো পৃথিবী থেকে পুষ্টি নেয়। প্রকৃতি মানবজাতিকে লালন করে। মানবজাতির উচিত প্রকৃতিকে মৌলিক গুরুত্ব দেওয়া, প্রকৃতিকে সম্মান করে, প্রকৃতির অনুসরণ করা এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করা। এক সময় চীনও গুরুতর দূষণ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। সে অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। এখন চীনে প্রকৃতি রক্ষায় কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের কি কি অভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়? বিস্তারিত দেখুন আজকের ভিডিওতে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, আধুনিকায়ন জোরদার করার সঙ্গে প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণ জোরদার করতে হবে। সুষ্ঠু উত্পাদন, ধনী জীবন, সুন্দর প্রকৃতি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে, প্রাকৃতিক সম্পদের চাপ গ্রহণ করা যাবে না।

বিগত দশ বছরে এমন চিন্তাধারার নেতৃত্বে চীন মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থানের আধুনিক সভ্যতা নির্মাণ করার চেষ্টা করছে। চীনে প্রাকৃতিক সভ্যতার নির্মাণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

আমরা দেখতে পারি, দশ বছর ধরে মত্স আহরণ বন্ধের পর চীনের ইয়াংসি নদীর জীববৈচিত্র্য আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। দেশে বনভূমির আয়তন আড়াই লাখ বর্গকিলোমিটার বেড়েছে। বৃক্ষরোপণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছে গেছে চীন। আমরা দেখতে পারি, ইয়ুননানের বন্য হাতি নিরাপদে বাসস্থানে ফিরে গেছে, তিব্বতি নীলগাই রেলপথ অতিক্রম করে নিরাপদে মাইগ্রেশন করছে।

মানুষ ও প্রকৃতির এমন সুষম সহাবস্থানের দৃশ্য কে না পছন্দ করে?

 

২০১৩ সালের বসন্তকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক সম্মেলনে বলেছিলেন, আমাদের নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নিতে হয়- আমরা কি চাই। জনগণের জন্যই প্রকৃতি রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দশ বছর আগে চীনের হ্য পেই প্রদেশের কিছু স্থানে গভীর বায়ুদূষণ ছিল। দেশের সবচেয়ে গুরুতর দূষিত ১০টি শহরের মধ্যে হ্য পেই প্রদেশের সাতটি শহর ছিল।

তাহলে কি করা যায়? কয়লার ব্যবহার কমানো, উত্পাদনমুখী শিল্প সুবিন্যস্ত করা, যৌথভাবে দূষণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা, সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করা, বায়ুদূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিকল্পনা চালু করা, নীল আকাশ রক্ষার তিন বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। চীন বিশ্বে প্রথম উন্নয়নশীল দেশ, যা ব্যাপকভাবে পিএম ২.৫ মোকাবিলা করেছে।

 

২০২১ সালে হ্য পেই প্রদেশের রাজধানী সি চিয়া চুয়াং-এর শ্রেষ্ঠ বায়ুর দিনের পরিমাণ ২০১৩ সালের তুলনায় ১৯৭ দিন বেড়েছে। দশ বছরে দেশের ৭৪টি প্রধান শহরের পিএম ২.৫-এর ঘনত্ব ৫৬ শতাংশ কমেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে জনগণের সন্তোষের পরিমাণ ৯০ শতাংশেরও বেশি।

নীল আকাশ ও সাদা মেঘের নিচে তিব্বতের ‘পিচ ফুলের গ্রাম’ দেখতে অনেক সুন্দর। ২০২১ সালের জুলাই মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তিব্বত পরিদর্শনের সময় ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। আগের গ্রামের পথে সবখানে গোবর ও কাদা দেখা যেত। লোকজন বাধ্য হয়ে খালি পায়ে হাঁটত। নইলে জুতাও নষ্ট হয়ে যেত। এখন গ্রামে চওড়া সড়ক এবং উন্নত আবাসিক পরিবেশ দেখা যায়। কৃষকের জীবন অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে।

পরিবেশই মানে জনগণের জীবিকা, সবুজ পাহাড় মানে সুন্দর দৃশ্য, আর নীল আকাশ- যা দেখলে মনে আনন্দ হয়।

 

চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায় মানে, প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সৃষ্টি করা যায়। জনগণের জন্য আরো বেশি শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক পণ্য সরবরাহ করা।

অনেক বছর আগে চীনের কুই চৌ প্রদেশের হুয়া উ গ্রাম ব্যাপকভাবে পাহাড় খনন করত, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মাছ ধরত। অবশেষে পাহাড় আর সবুজ নয়, পানিতে আর মাছ নেই। হুয়া উ গ্রামকে লালন করা ‘উ’ নদী কুই চৌ-এর অর্ধেক পরিমাণের জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক পরিমাণের বহন করে। তবে এমন উন্নয়নের পদ্ধতিতে নদী একসময় দূষিত হত।

এই সমস্যা সমাধানে সরকার ও স্থানীয় জনগণ অনেক চেষ্টা করেছে। ২০২১ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হুয়া উ গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় দূষণ নির্গমন পরিচালনা এবং পানির গুণগতমান তত্ত্বাবধান সিস্টেম নির্মাণের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, পরিচ্ছন্ন পানি ও সবুজ পাহাড় মানে সোনার পাহাড় ও রৌপ্যের পাহাড়। নিশ্চয়ই প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে সবুজ উন্নয়নের পথ খুঁজতে হয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে হুয়া উ গ্রাম ব্যাপকভাবে পর্যটন ও মিয়াও জাতির বিশিষ্ট সূচিকর্ম শিল্প উন্নত করেছে, এতে গ্রামীণ পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালে হুয়া উ গ্রামে পর্যটন খাতে আয় হয় ৩১ কোটি ইউয়ান, কৃষকের মাথাপিছু আয় ১৯ হাজার ইউয়ানেরো বেশি হয়। যা ২০১২ সালের চেয়ে ছয় গুণ বেড়েছে।

এখন প্রাকৃতিক পরিবেশ আরো সুন্দর হচ্ছে, জীবন আরো ধনী হচ্ছে, কৃষকের জীবনের আশা আরো উজ্জ্বল হচ্ছে।

এখন পরিচ্ছন্ন পানি ও সবুজ পাহাড় মানে সোনার পাহাড় ও রূপার পাহাড়, এমন চিন্তাধারা চীনাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। চীন উন্নয়ন ও সংরক্ষণের উভয় কল্যাণের পথ খুঁজে পেয়েছে। সুষ্ঠু উত্পাদন, সুন্দর প্রকৃতি এবং সুখী জীবনের আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে চীন।