বেইজিংয়ে সি চিন পিংয়ের সাথে তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক প্রসঙ্গ
2022-11-04 15:36:34


নভেম্বর ৪: গতকাল (বৃহস্পিতিবার) বিকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে গণমহাভবনে সফররত তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের সাথে বৈঠক করেন।  বৈঠকে দু’দেশের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে, দু’দেশের সম্পর্ক সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশিদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত হবে। 


বৈঠকের শুরুতে সি চিন পিং তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্টকে চীনে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট মাদাম সামিয়া সুলুহ হাসান, চীনে আপনাকে স্বাগত জানাই। অনেক বছর পর, আবার আপনার সাথে সাক্ষাত করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের পর, আপনি হচ্ছেন চীন সফর করা প্রথম আফ্রিকান নেতা। এতে প্রতিফলিত হয় দু’দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও চীনের কূটনীতিতে চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ২০১০ সালে আমি তাঞ্জানিয়া সফর করি। তখন আমি বলি যে, চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার সময় সত্যিকারের আন্তরিকতার চেতনা ধারণ করা উচিত। বতর্মানে এ ধারণা চীনের সাথে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে।”


সি চিন পিং জানান, নতুন পরিস্থিতিতে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন শুধু দু’দেশের অভিন্ন কল্যাণ বৃদ্ধি করবে তা নয়, বরং নতুন যুগের চীন-আফ্রিকা অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার কাজকেও এগিয়ে নেবে।  

 

সি চিন পিং তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের পরিস্থিতি ও তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আধুনিকায়ন ও পশ্চিমীকরণ এক জিনিস নয়। দেশের পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি উন্নয়ন-পথ চীন ইতোমধ্যেই খুঁজে পেয়েছে। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের ধারণা চীনের ভূমিতে শিকড় গেড়ে বসেছে, যা  চীনের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।  


সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, কৌশলগত উচ্চতায় চীন বরাবরই দু’দেশের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। চীন সবসময় তাঞ্জানিয়ার নির্ভরযোগ্য বন্ধু। দু’দেশের সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের আলোকে দু’পক্ষের উচিত, সমন্বিতভাবে আগামী পর্যায়ের বিভিন্ন খাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া। 


সি চিন পিং আরও বলেন, তাঞ্জানিয়ার বৈশ্যিষ্টময় পণ্যের আমদানি চীন অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ করবে। চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তানজানিয়ায় পূজি বিনিয়োগের ব্যাপারে সমর্থন দেওয়া হবে। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে চীন তাঞ্জানিয়ার সাথে মত বিনিময় করতে ইচ্ছুক। তাঞ্জানিয়ার গণজীবন উন্নয়নের ব্যাপারেও চীন সমর্থন দেয়।  


সি চিন পিং বলেন, তাঞ্জানিয়া-জাম্বিয়া রেলপথ হচ্ছে চীন-তাঞ্জানিয়া ও চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের প্রতীক। তখন চীনও অনেক দরিদ্র ছিল। তথাপি, চীনা জনগণ নিজেদের সমস্যা সমাধান করে, আফ্রিকান ভাইবোনদেরকে সাহায্য করে এ রেলপথ নির্মাণ করেছে।  এখন চীনে উন্নয়ন হয়েছে। সত্যিকারের আন্তরিকতা নিয়ে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য আফ্রিকান বন্ধুদেরকে সাহায্য করে যাবে চীন এবং নতুন যুগের চীন-আফ্রিকা অভিন্ন লক্ষ্যের কামিউনিটি প্রতিষ্ঠা করবে। 


বৈঠকে দু’দেশের নেতৃবৃন্দ যেসব মতৈক্যে পোঁছেছেন সেগুলো হচ্ছে: 


১. উচ্চ পর্যায়ের আদানপ্রদান ও সংলাপ বজায় রেখে দু’দেশের বিভিন্ন মানের আদানপ্রদান ও সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ করা হবে;  

 

২. দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা উন্নত করে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় উচ্চ গুণগত মানের সহযোগিতা গভীরতর করা হবে; 

 

৩. দু’দেশের সাংস্কৃতিক ও জনগণ পর্যায়ের আদানপ্রদান সম্পসারিত করা হবে। দু’দেশের মধ্যে বেসরকারি খাতের বন্ধুত্ব এগিয়ে নেওয়া হবে; 


৪. আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক সমন্বয় জোরদার করা হবে, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা হবে, আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও দুপক্ষের অভিন্ন কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে; 


বৈঠকশেষে দুই প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে, দু’দেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সহযোগিতা, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন ও নীল অর্থনীতি ইত্যাদি খাতে একাধিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। 

 (আকাশ/আলিম/ফেইফেই)